মেসিকে ভারতে আনা শতদ্রুকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠাল আদালত
কলকাতা ব্যুরো || রাইজিংবিডি.কম
আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসির সঙ্গে শনিবারই (১৩ ডিসেম্বর) কলকাতা ছেড়ে হায়দ্রাবাদ চলে যাওয়ার কথা ছিল তাকে ভারতে আনার মূল কারিগর শতদ্রু দত্তের। তবে তার আগেই সিআইএসএফ ও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন শতদ্রু।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) তাকে পেশ করা হয় বিধাননগর মহকুমা আদালতে। ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তাকে আদালতে কোর্টে পেশ করার সময় কোর্ট চত্বরেই এদিন বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি।
রবিবার আদালতে সরকারি আইনজীবী শতদ্রুর জামিনের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি জানান, কোনোভাবেই যাতে জামিন না দেওয়া হয় অভিযুক্তের। কারণ, এই ঘটনায় আর কে কে যুক্ত, একাধিক তথ্য প্রমাণ জোগাড়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
অপরদিকে শতদ্রুর আইনজীবী জানান, কোনোভাবেই ১৪ দিনের হেফাজতের প্রয়োজন নেই। সেই দিন যেন কমানো হয়। কারণ শতদ্রু শুধু আয়োজক। তিনি শুধু আয়োজন করেছিলেন অনুষ্ঠানের। দীর্ঘ শুনানির পর আদালত অভিযুক্তকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
শনিবার সল্টলেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামে ব্যাপক ভাঙচুর ও বিক্ষোভের পর রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ও এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম জানিয়েছিলেন, এই ঘটনায় কাউকেই ছেড়ে কথা বলা হবে না। এরপরেই বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয় শতদ্রুকে। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে কলকাতা পুলিশ। বিধান নগর দক্ষিণ থানায় মামলার দায়ের হয়। অশান্তি সৃষ্টি, ভাঙচুর, হিংসা ছড়ানো, নাশকতামূলক কার্যকলাপ এবং জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বা বিএনএস-এর ১৯২, ৩২৪, ৩২৬, ১৩২, ১২১, ৪৫, ৪৬ ধারায় মামলা করা হয় শতদ্রুর বিরুদ্ধে। এছাড়াও এমপিও বা মোটর ভেইকলস আইন ও পিডিপিপি আইন (প্রিভেনশন অব ড্যামেড টু পাবলিক প্রপার্টি অ্যাক্ট)-এও মামলা হয়।
আজ আদালত চত্বরে অভিযুক্ত শতদ্রুকে যখন প্রিজন ভ্যান থেকে নামানো হয়, তখন বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। বিজেপির কর্মী সমর্থকরা তার উদ্দেশ্যে চোর চোর স্লোগান দিতে থাকে। তাদের হাতে ছিল গেরুয়া পতাকা ,সঙ্গে চপ্পল। তবে সেই চপ্পল ছুড়ে মারার আগেই পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
কলকাতা পুলিশের তরফে ডিজিপি রাজীব কুমার জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার তদন্তে একটি সরকার-নিযুক্ত কমিটি গঠন করা হবে। অনুষ্ঠান পরিচালনায় গাফিলতি ছিল কি না, ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সব দিকই খতিয়ে দেখা হবে। পুলিশের দাবি, আয়োজকের কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়েছে যাতে দর্শকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা যায়।
উল্লেখ্য, শনিবার শহরে পা রাখেন লিওনেল মেসি। তার কর্মসূচি ছিল ঠাসা। যুবভারতীতে শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে দর্শকরা জমায়েত হন। এমনকি দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকেও মেসিপ্রেমীরা সল্টলেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামে হাজির ছিলেন।
তবে যুবভারতীতে মেসি ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি বদলে যায়। দর্শকদের অভিযোগ, মেসিকে ঘিরে ছিলেন ভিআইপিরা। গ্যালারি থেকে প্রায় ২০ মিনিট মেসিকে দেখা যায়নি। এই নিয়েই ক্ষোভ জমতে থাকে। একসময় বোতল ছোড়া শুরু হয়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, মেসি ও তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরা দ্রুত মাঠ ছেড়ে চলে যান।
এরপরই যুবভারতী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে চরম বিশৃঙ্খলা। ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই কলকাতা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শতদ্রু দত্তকে। এবার সেই মামলায় ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে গিয়ে তদন্তে কী উঠে আসে, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা রাজ্য।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ