ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্সের সংলাপ

প্রযুক্তি, জলবায়ু ও শ্রম খাতের সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ০৮:৫৬, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রযুক্তি, জলবায়ু ও শ্রম খাতের সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ

প্রযুক্তি, জলবায়ু ও শ্রম খাতের সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, গত এক বছরে ২৫৮টি কারখানা বন্ধ হয়েছে এবং এক লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়েছে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত রূপান্তর, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত এবং বিদ্যমান শ্রম পরিস্থিতির দুর্বলতা এই শিল্পকে আরো জটিল বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে। তাই প্রযুক্তি, জলবায়ু ও শ্রমকে সমন্বিতভাবে বিশ্লেষণ করা এখন সময়ের দাবি।

রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স (এএফডাব্লিউএ) ‘প্রযুক্তিগত রূপান্তর, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিদ্যমান শ্রম পরিস্থিতিতে করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন তারা। টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসাইনের সভাপতিত্বে সংলাপটি সঞ্চালনা করেন এএফডাব্লিউএ’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি আরিফুর রহমান।

সংলাপে বক্তৃতা করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)-এর যুগ্ম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের হাওলাদার, গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার, গার্মেন্ট ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি ইদ্রিস আলী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম, গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু মিয়া, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের সিনিয়র আউটরিচ অফিসার আমানুল্লাহ, গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস, সেফটি অ্যান্ড রাইটসের নির্বাহী পরিচালক সিকান্দার আলী মিনা, গার্মেন্টস লেবার কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শামীমা আক্তার, গ্রোইং টুগেদার ওপিসি’র এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান এম আনোয়ার, এএফডাব্লিউএ’র বাংলাদেশ কমিটির সদস্য সচিব সুলতানা বেগম ও নারী কমিটির সভাপতি রাসিদা খাতুন।

সংলাপের ধারণাপত্র পাঠ করেন এএফডাব্লিউএ’র জেন্ডার জাস্টিস প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আমরিন হোসাইন এ্যানি। তিনি বলেন, গার্মেন্টস শিল্পে সৃষ্ট মোট মুনাফা ও শ্রমিকদের প্রাপ্ত মজুরির মধ্যে স্পষ্ট বৈষম্য বিদ্যমান। বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকলেও শ্রমিকদের মজুরি এখনো জীবনযাত্রা উপযোগী পর্যায়ে পৌঁছেনি। উৎপাদন ব্যয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার চাপ প্রায়ই শ্রমিকদের ওপর স্থানান্তরিত হয়, যার ফলে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। বর্তমানে প্রায় ৪ মিলিয়ন শ্রমিক এই খাতে কর্মরত, যাদের ৬০ শতাংশের বেশি নারী। নারী শ্রমিকদের শ্রমশক্তিতে অন্তর্ভুক্তি অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি বড় অর্জন হলেও নিরাপদ কর্মসংস্থান, জেন্ডার সংবেদনশীল কর্মপরিবেশ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ সীমিত। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থার সংকট, রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ঘাটতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা-সব মিলিয়ে শিল্পটি বর্তমানে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

এই অবস্থায় পোশাক খাতের সংকট নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের অস্থিরতা কমাতে মানবিক জীবনযাপন উপযোগী জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। কোনো শ্রমিকের মজুরি যেন দারিদ্রসীমার থেকে কম না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সব খাতের শ্রমিকদের জন্য রেশন প্রদান, ট্রেনিং সেন্টার এবং ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দিতে হবে। শ্রমিকদের ঐক্য গড়ে তুলতে সকল শ্রমিক সংগঠনকে এক প্লাটফর্ম আসতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে শ্রমিকনেতা আবুল হোসেন বলেন, প্রযুক্তিগত রূপান্তর, জলবায়ু পরিবর্তন ও শ্রম বাস্তবতা একদিকে বড় চ্যালেঞ্জ হলেও সঠিক কৌশল ও শ্রমিক-কেন্দ্রিক নীতি গ্রহণ করলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প আরও মানবিক, টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে পারে। তাই গার্মেন্টস শিল্পের বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে মালিক-শ্রমিক ও সরকারসহ সকল পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কম মজুরি ও মজুরি বৈষম্য নিরসন করতে হবে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসন করে কারখানাগুলোতে শ্রমিকের কাজের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা/এএএম/ফিরোজ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়