ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘পাতা খেলা’ দেখতে মানুষের ভিড়

দিনাজপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২১ অক্টোবর ২০২২   আপডেট: ১১:১০, ২১ অক্টোবর ২০২২
‘পাতা খেলা’ দেখতে মানুষের ভিড়

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘পাতা খেলা’। আর এই খেলা উপভোগ করতে মাঠে অবিশ্বাস্য রকমের ভিড় ছিলো মানুষের। 

বলা হয়, এটি গ্রামীণ তান্ত্রিকদের খেলা। তান্ত্রিকরা তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে খেলাটি খেলে থাকেন। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাটি  আজও ধরে রেখেছেন তান্ত্রিকরা। 

বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার ৩ নম্বর কাজিহাল ইউনিয়নের পুখরী স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে কড়াই যুব সমাজের উদ্যোগে খেলাট অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় চারটি তান্ত্রিক দল অংশগ্রহণ করেন।

খেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে নারী-পুরুষসহ বিভন্ন বয়সের উৎসুক জনতার উপচে পড়া ভিড়। কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাওয়া খেলাটির আয়োজন করায় খুশি হয়েছেন এলাকাবাসী। 

তান্ত্রিকরা তন্ত্র, মন্ত্র দিয়ে এ খেলা করেন। খেলা শেষে বিজয়ী দলের হাতে একটি খাসি ও রানার্স আপ দলের হাতে একটি রাজহাঁস পুরস্কৃত করা হয়। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক অমর চাঁদ গুপ্ত অপু, সাবেক ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

৭৮ বছর বয়সী ছয়মুদ্দিন বলেন, আমাদের সময় এসব পাতা খেলার অনেক কদর ছিলো। বছরে প্রায় সময় এসব খেলা হতো। বর্তমান তো আর চোখেই পড়ে না, অনেক দিন পর দেখলাম খুবই ভাল লাগলো।

কয়েকজন যুবক জানালেন, এর আগে অনেক বার এই পাতা খেলার নাম শুনেছি। পাতা কি আর কিভাবে খেলে জানতাম না। আজ নিজ চোখে দেখতে পেলাম। আগে গাছের পাতা ভাবতাম, তবে এ খেলায় মানুষকে পাতা বলে।

আয়োজকরা বলেন, খেলায় অংশ নিয়েছিলেন চারটি তান্ত্রিকদল। অংশ নেওয়া তান্ত্রিকরা হলেন- মাদিলাহাট এলাকার মিলনের দল, কড়াই পশ্চিমপাড়ার আলমের দল, রশিদপুর মিরপুর নুরুজ্জামানের দল ও আমড়া গ্রামের তান্ত্রিক আতিয়ার সর্দারের দল। অপরদিকে পাতা হিসেবে ছিলেন তিন ব্যক্তি। তারা হলেন চক মথুরা এলাকার নিকূঞ্জ, শ্রীকৃষ্ণ পুর এলাকার গোলজার হোসেন ভোলা ও কড়াই এলাকার তোশাররফ হোসেন।

খেলায় মাঠের মাঝখানে একটি কলাগাছ গেঁথে পাতা হিসেবে তিন ব্যাক্তিকে রাখেন। তান্ত্রিকরা তাদের তন্ত্র- মন্ত্রের জোরে সেই পাতাকে টানেন নিজেদের কাছে। যে দল তাদের কাছে পাতাকে টেনে আনতে পারবে তারাই বিজয়ী হবেন।

ঐতিহ্যবাহী এই খেলা দেখতে মাঠ জুড়ে নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সের হাজারো উৎসুক জনতার ভিড় ছিল চোখের পড়ার মতো। খেলায় নিজ নিজ দক্ষতা দেখিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন তান্ত্রিকরা। খেলায় দুটি পাতা টেনে আলম তান্ত্রিক বিজয়ী হওয়ায় তার দলকে উপহার হিসেবে একটি খাসি উপহার দেওয়া হয়। একটি পাতা টেনে রানার্স আপ হওয়ায় তান্ত্রিক মিলন দলকে একটি হাঁস উপহার দেওয়া হয়।

খেলায় অংশগ্রহণকারী তান্ত্রিক আতিয়ার সর্দার বলেন, এই খেলা আসলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মনসা পূঁজার পরপরই হয়ে থাকে। এই খেলা আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। যে যার মতো মন্ত্রের জোরে পাতা টেনে আনেন নিজেদের কাছে। যে বেশি পাতা টানেন তাকেই এখানে বিজয়ী হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়।

তান্ত্রিক আলম বলেন, এখানে বিজয়ী হওয়াটাই বড় কথা নয়, এ খেলায় তান্ত্রিকের মন্ত্রের শক্তি পরীক্ষা হয়। আমরা ১৫ বছর ধরে এই খেলা খেলছি। যে যত মন্ত্রের শক্তি দেখাতে পারবে সে বিজয়ী  হবে। পুরস্কার বড় নয়, জেতাই বড়।

মোসলেম/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়