ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বেদনার আরেকটি ঈদ

মোহাম্মদ হানিফ, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ৪ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বেদনার আরেকটি ঈদ

ঈদুল ফিতরের চেয়ে ঈদুল আজহা অন্যরকম আনন্দের বিষয় ছিল আমার কাছে। শুরুতে একটু ছোটবেলার স্মৃতিতে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। কোরবানি ঈদের আয়োজন কয়েক দিন আগেই শুরু হয়। শৈশবে কোরবানির ঈদ ছিল ভীষণ আনন্দের!

বাবা যেদিন গরু কিনতে হাটে যেতেন, সেদিন দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতাম অধীর আগ্রহে; কখন আসবেন গরু নিয়ে। গরু কিনে ফিরছে এমন কাউকে দেখলেই জিজ্ঞেস করতাম- গরুর দাম কত? বাবা গরু নিয়ে ফিরলে প্রথমেই লক্ষ্য করতাম আমাদের গরু পাশের বাড়ির গরুর চেয়ে বড় এবং সুন্দর কিনা। এটা ছিল ওই বয়সের একটা নিষ্পাপ প্রতিযোগিতা। আসলে শৈশবে আমাদের আত্মত্যাগের চিন্তার চেয়ে আনন্দের ভাবনাটাই বেশি থাকতো।

বাবার সঙ্গে নামাজ পড়তে যাওয়া, সবাইকে সালাম করা, নামাজ শেষে বাসায় ফিরে গরু কোরবানি বা কাটাকাটি নিয়ে যে আনন্দ বিরাজ করতো তা ভোলার নয়। গরু, খাসি জবাই করে মাংস ভাগ করা, বিলিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে সব কাজ আগ্রহ নিয়ে করতাম। যদিও বড়রা সাবধান করে কাটাকাটির কাজে দূরে রাখতে চাইতেন।  

সময়ের সঙ্গে যেন পৃথিবীও তার আপন রং বদলে ফেলল। এক মহামারি মানব জীবনের স্বাভাবিক গতিধারা পাল্টে দিয়েছে! সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, খুশি-আনন্দের পরিবর্তে বেঁচে থাকার সংগ্রামটাই এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে। করোনাকালের মধ্যেই ঈদুল ফিতর কেটেছে। রোগ-শোক আর মৃত্যুর রঙে ধূসর এই পৃথিবীতে খুশির ঈদের যেন কোনো রং নেই! নেই হাত মেলানো, নেই কোলাকুলি! নেই নতুন পোশাক! নেই গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা। বলা যায়, এবারের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হচ্ছে ভার্চুয়াল জগতে। ঈদের দিন রাত থেকে মোবাইলে ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা বলে দেয় আমরা কতটা ভার্চুয়াল জগতের বাসিন্দা হয়ে গেলাম। তবে এমন শুভেচ্ছা বার্তা কতটুকু আন্তরিকতার পরিচয় দেয় এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়।

একটা সময় মানুষ সাধারণত প্রিয়জন বা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে বা বিভিন্ন রকম কার্ডের মাধ্যমে যেভাবে শুভেচ্ছা বিনিময় করতো সেই রেওয়াজ তরুণদের মধ্যে অনেকটা উঠে গেছে। কিন্তু এখন সেটি দখল করে নিচ্ছে ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা। আবার একই মেসেজ বা বার্তা গণহারে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন জনের কাছে।

করোনাকালের ঈদ আর প্রবাসের ঈদ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো। ঈদ আসে যায় কিন্তু ঈদের সেই আমেজটা যেন নেই। তবে প্রবাসীরা জীবনের শত কষ্ট আর বঞ্চনার মাঝে ঈদের কয়েকটি দিন অন্তত খুঁজে নিতো আনন্দ। এবার সেটাও হলো না। প্রবাসে অবস্থানরত বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিচিত জনদের সঙ্গে দেখা হলো না। শেয়ার করা হলো না প্রবাসজীবনের সঞ্চিত ব্যথা। একদিকে নিজেদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম, অন্যদিকে করোনাকালে দেশে পরিবার-পরিজনদের নিয়ে চিন্তায় মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

দক্ষিণ কোরিয়াতে সরকারিভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর-আজহার কোনো ছুটি নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে কাকতালীয়ভাবে সাপ্তাহিক ছুটি বা সরকারি ছুটির সঙ্গে মিলে যায় ঈদের দিন। আর সেই দিনটি হয় দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবাসীদের জন্য আনন্দের দিন। সরকারের পক্ষ থেকে ঈদুল ফিতরে ঈদের জামাতের অনুমতি ছিল। কিন্তু থেমে থেমে করোনার প্রকোপ বাড়ার কারণে এবারের ঈদুল আজহার জামায়াতের অনুমতি দেয়নি মুসলিম ফেডারেশন (কেএমএফ)।

যদি ঈদ আনন্দের সব অনুষঙ্গ ত্যাগ করেও পৃথিবী থেকে করোনা বিদায় নিতো, তাহলে শান্তি পেত মন। অথচ আমরা এখনো ধারণাও করতে পারছি না কবে এই করোনাভাইরাস বিদায় নেবে মানবজাতির কাছ থেকে। পৃথিবী থেকে করোনার বিদায়ে মানুষ ঈদের আনন্দের চেয়ে বেশি আনন্দিত হবে। এবং সেই আনন্দই পৃথিবীর বুকে আসুক দ্রুত- এটাই এবারের ঈদের প্রত্যাশা। এমন বেদনার ঈদ যেন আমাদের জীবনে আর না আসে।

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়