ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

প্রেম-প্রসঙ্গ: শহীদুল জহিরের দুটো গল্প

সৈকত আরেফিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৭:৫২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রেম-প্রসঙ্গ: শহীদুল জহিরের দুটো গল্প

ব্যক্তি শহীদুল জহিরের কথা ভাবলেই আমি একজন নিঃসঙ্গ মানুষকে দেখি। দিনশেষে যে লোকটি সরকারি কোয়ার্টারের অপরিসর ঘরে টেলিভিশনের দিকে মুখ করে শুয়ে থাকে। হালকা একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে শুয়ে থাকা মানুষটির মুখের দিকে তাকালে আমার তখন বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের দরিদ্র কাঠুরে আকালুকে মনে পড়ে। আকালুর সারল্য ও বিপন্নতাও মেখে থাকে সেই শায়িত মানুষটির চোখেমুখে। কিন্তু তাঁর সাহিত্য-প্রবণতায় নৈসঙ্গ নাই। বরং কী গল্পে, কী উপন্যাসে তাঁর চরিত্ররা ব্যক্তিসত্তা হারিয়ে ভিড় তৈরি করে এবং নৈর্ব্যক্তিক হয়ে ওঠে। যে জনপদের মানুষজনের গল্প জহির শোনাতে চান তাদের সমগ্র জীবনের গল্প বা জীবনের সমগ্রতাকেই উপলক্ষ করে তোলেন।

প্রেম বা যৌনাকাঙ্ক্ষা জীবনের এই সমগ্রতার বাইরে নয়। সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও বা হ্যাভলক এলিসের কাছ থেকে আমরা জেনেছি, মানুষ যখন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসা বা প্রেম ব্যক্ত করে, তখনই তার মনে গোপনে বা প্রকাশ্যে যৌনবাসনাও জন্ম নেয়। এটা তার আকাঙ্ক্ষার স্বাভাবিক পরিণতিই। বলা হয়, যৌনস্পৃহা মানুষের নির্জ্ঞান অন্তঃসত্তায় অবচেতনভাবে থাকে। অবশ্য শহীদুল জহিরের গল্পে নরনারীর যৌনস্পৃহা ও প্রেম খুব সপ্রতিভ নয় এমনকি জৈবিক আকাঙ্ক্ষার উচ্চকিত প্রকাশও এখানে সেভাবে নেই। এক ধরনের শান্ত-সমাহিত নির্জনতার মতো শহীদুল জহিরের গল্পের নারী-পুরুষ পরস্পরের দিকে তাকায়, আকাঙ্ক্ষা করে। তবে, এখানে আমরা যে দুটো গল্প নিয়ে কথা বলতে চাই, সেগুলো প্রধানত প্রেমানুষঙ্গের গল্প না হলেও প্রেম সেখানে একেবারে গড়হাজির নয়। ‘এই সময়’ (ডুমুরখেকো মানুষ ও অন্যান্য গল্প
২০০৪) ও ‘আমাদের কুটিরশিল্পের ইতিহাস’- এই দুটো গল্পে প্রেমের রূপরীতি নিয়ে একটা সরল বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা যাক তাহলে।


‘এই সময়’-গল্পে যে মানবীয় প্রেম, হৃদয়াবেগ ও যৌনতার উদ্ভাস দেখা যায়, তাতে মানুষের মনোগহনের রহস্যময়তা একটা নতুনতর আবিষ্কারের উপলব্ধি দেয়। প্রচলিত রোমান্টিক প্রেমের প্রায় সব বৈশিষ্ট্য অবলেপন করে শহীদুল জহির ‘এই সময়’ গল্পে বিধবা শিরীন আকতার ও অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর মোহাম্মদ সেলিমকে পরস্পরের মুখোমুখি করে দেন। পুরান ঢাকার জনজীবনকে সম্মুখভাগে রেখে এ গল্পে মূলত বাংলাদেশ রাষ্ট্রে এক শ্রেণির মানুষের সামাজিক আধিপত্যকামিতার সমান্তরালে একটি
অচরিতার্থ প্রেমের আখ্যানও জমাট হয়ে ওঠে। কিন্তু ‘এই সময়’ গল্পে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ধনিক শ্রেণির মানুষের যথেচ্ছাচার, তাদের পোষ্য বাহিনীর দৌরাত্ম্য এমনভাবে চিত্রিত যে, আপাতভাবে মনে হয়, আধিপত্যবাদের কাছে প্রেমের পরাজয় ঘটে। ফলে, গল্পটিতে কীসের প্রাধান্য— প্রেমের না যথেচ্ছাচারের, এ বিষয়ে তর্ক উত্থাপিত হতে পারে। তবে, লেখক নিজে এটিকে প্রেমের গল্প হিসেবে আখ্যায়িত করতে বেশি আগ্রহী— ‘এটা প্রেমের গল্পই।

যদিও এখানে সময় আছে।’ কিন্তু এটা ঠিক, এ গল্পে প্রেম ও কামলোলুপতা, স্বেচ্ছা-নিবেদন ও জবরদস্তি অবিচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যায়। আখ্যানভাগে অগ্রসরমান দুটো ধারার একদিকে আবদুল আজিজ মিয়ার একমাত্র কন্যা ও সন্তান শিরীন আকতার ও জন্মের আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে মা-বাবাকে হারিয়ে ফেলা কিশোর মোহাম্মদ সেলিম; অন্যদিকে ভুতের গলি মহল্লার কয়েকজন বিত্তবান ও তাদের পোষ্য তিন ভাই— পাগলার সুতোকলের মালিক এরশাদ সাহেব, মওলানা আবদুল জব্বার, নিউ স্টার হোটেল ও গাউসিয়া ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক মরহুম ইয়াসিন ব্যাপারী বিধবা স্ত্রী মালেকা বানু, অবসরপ্রাপ্ত মেজর ইলিয়াছ খান ও তাদের অর্থানুকূল্যে লালিতপালিত তিন মাস্তান ভাই আবু, হাবু ও শফি। 

মোহাম্মদ সেলিম, তার জন্ম ও মৃত্যুর অস্বাভাবিকতায় নিঃসন্দেহে এ গল্পের প্রধানতম চরিত্র। জন্মের দুদিনের মধ্যে এতিম হয়ে যাওয়ার দুঃখজনক বাস্তবতায় সে দাদি শরিফা বেগমের কাছে বড় হয়। কিন্তু তার জন্মের পরই মা হাজেরা মরে গেলেও শিশু মোহাম্মদ সেলিম মাতৃদুগ্ধ থেকে একেবারে বঞ্চিত হয় না। হাসপাতালের নার্সরা তাকে ‘অজ্ঞান মায়ের বুকের উপর স্থাপন করে স্তনের বোঁটা মুখে গুঁজে দেয়। তারপর হাজেরার মৃত্যুর পর নার্সরা যখন এই স্তন তার মুখ থেকে সরায়, তখন জননীর শেষ উষ্ণতা একটা ফোয়ারার মতো তার মুখমণ্ডল সিক্ত করে এবং সে জেগে উঠতে গিয়ে পুনরায় সেই উষ্ণ সুবাসের ভেতর ঘুমিয়ে পড়ে।’ 

মোহাম্মদ সেলিম কখনোই মাতৃদুগ্ধের সুগন্ধকে ভুলতে পারে না এবং এ সুগন্ধই তার মনে মা-বাবার স্মৃতিকে জাগিয়ে রাখে। সে অনেক খুঁজে দুটো গাঁদা ফুল নিয়ে দাদির সঙ্গে আজিমপুর কবরস্থানে মা-বাবার কবরে যায়। এরপর মা-বাবার কবরে নিয়মিত ফুল দেবার জন্য সে নিজেই একটা ফুলবাগান গড়ে তোলে। কিন্তু একদিন মহল্লায় এলার্জি ছড়িয়ে পড়লে ওয়াজেদ ডাক্তারের কথামতো ফুলের রেণু থেকে এর বিস্তার হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। মহল্লায় যেহেতু মোহাম্মদ সেলিমেরই কেবল ফুলের বাগান আছে, তাই মহল্লার তিন মাস্তান ভাই আবু, হাবু ও শফি ক্ষিপ্ত হয়ে সেলিমের ফুলের বাগান নষ্ট করে ফেলে। ফুলবাগান নষ্ট করার পরও যখন মহল্লাবাসীর হাঁচি থামে না, আবিষ্কার হয়, এলার্জির কারণ ফুল নয়, বরং ‘হরদেও গ্লাস ফ্যাক্টরি’র বার্নারে গোলযোগের কারণে সৃষ্ট ধোঁয়া ভূতের গলি মহল্লাবাসীর নাকে ক্রমাগত প্রদাহ তৈরি করে। মোহাম্মদ সেলিম মা-বাবার কবরে ফুল দেবার প্রয়োজনে আবারও নিজস্ব ফুলবাগান গড়ে তোলে। কিন্তু, গল্পকার ধীরে উন্মোচনের যে প্রকৌশল এখানে প্রয়োগ করেন, ধারণাতীতভাবে তখন গল্পের গতিমুখ পাল্টে যায়। মহল্লার কাঠের ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ মিয়ার একমাত্র সন্তান শিরীন আকতার আট বছরের সংসারজীবন শেষে নিঃসন্তান অবস্থায় বিধবা হয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে আসে। বাল্য-বিবাহিতা শিরীন আকতারকে মহল্লায় ফিরিয়ে এনে শহীদুল জহির সমাজে প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত বিত্তবানদের নির্লজ্জ যৌনবাসনাকে অবভাস করে দেন। বাইশ বছরের যুবতি শিরীন আকতার রূপবতী। এহেন রূপবতী মেয়েটি বিধবা হবার কারণে কামলোলুপ বিত্তশালীগণ শিরীনকে পাওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। বিপত্নীক এরশাদ সাহেব, মওলানা আবদুল জব্বার, মেজর ইলিয়াছ এবং এদের টাকায় লালিত ভ্রাতৃত্রয় আবু, হাবু ও শফিরা পৃথকভাবে শিরীন আকতারের কাছে তাদের প্রেম, আকাঙ্ক্ষা; প্রকৃতঅর্থে কামবাসনা নিবেদন করে। কিন্তু অন্যরা যখন ধর্মীয় বই, শাড়ি কিংবা গহনা দিয়ে শিরীন আকতারকে প্রলুব্ধ করতে চায় সেখানে আবু তাকে দেয় দুটো ‘লাল গোলাপ’।

শিরীন আকতার নাকে গোলাপের গন্ধ নেয় এবং বলে— ‘ফুল কই পাইলেন? বাইতে গাছ আছে, না কিন্না আনছেন?’ আবু ও তার ভাইয়েরা তাকে জানায়, তাদের বাড়িতে কোনো ফুলগাছ নেই এবং তারা এটা কিনেও আনেনি, এ ফুল তারা এনেছে মহল্লার কিশোর মোহাম্মদ সেলিমের বাগান থেকে। তখন শিরীন আকতার ফুলবিষয়ে আগ্রহী হয়— ‘তাইলে অরে কইলেন আমারে প্রত্যেক দিন ফুল দিবার লাইগা।’ ফলে, শিরীন আকতারের চাওয়ামতো আবু ভ্রাতৃত্রয় মোহাম্মদ সেলিমকে ফুল দিতে হুকুম দেয়। মাস্তান ভাইয়ের এই জবরদস্তি শিরীন আকতার ও মোহাম্মদ সেলিমকে পরস্পরের কাছে আসার সুযোগ সৃষ্টি করে। দুটো সাদা গোলাপ নিয়ে মোহাম্মদ সেলিম প্রথম যেদিন আবদুল আজিজ মিয়ার দরজায় এসে দাঁড়ায়, শিরীন আকতার দরজা খুলে বলে— ‘আমি তুমারে চিনি, ভিতরে আহো।

প্রকৃতপ্রস্তাবে ভেতরে আসার এই আমন্ত্রণ শুধু বাড়ির অভ্যন্তরে আহ্বান নয়, এর মাধ্যমে বস্তুত, শিরীন আকতার মোহাম্মদ সেলিমকে নিজের জীবনেই আমন্ত্রণ জানায়। মহল্লার প্রতিষ্ঠিত বিত্তবান ও মাস্তান ভাইদের প্রলোভন প্রত্যাখ্যান করে শিরীন আকতার মোহাম্মদ সেলিমের মধ্যেই বিধবাজীবনে নিজের আকাঙ্ক্ষিত মানুষকে খুঁজে
পায়। পরবর্তীকালে শিরীন আকতার ও মোহাম্মদ সেলিম মেঘ, ফুল, ফল ও পাতার প্রশ্রয়ে নিজেদের সম্পর্ককে আরও নিবিড় করে তোলে। তাদের আলাপচারিতার উদাহরণ দেওয়া যাক:
- এই ম্যাগ দেইখা আপনের কেমুন লাগে?
- আরাম লাগে।
- আমার দাদিয়ে কয় ম্যাগের ভিতরে এউকগা চিড়িয়াখানা আছে।
... ... ...
- আপনে হাচাই করমচা খাইবার চান?
... ... ...
- আপনে করমচা গাছ দেখছেন?
- দেখিনিকা।
- আপনে করমচা গাছের পাতা দেখছেন?
- না দেখিনিকা।
- হড়বরই গাছ দেখছেন?
- না।
- হড়বরই গাছের পাতা দেখছেন?
- না দেখিনিকা।
- কামরাঙ্গা গাছ দেখছেন?
- না।
- পাতা দেখছেন?
- না।

শিরীন আকতারের কর্মকাণ্ডে এটা বোঝাই যায়, সে সেলিমকে মনের মধ্যে গ্রহণ করেছে। একদিকে তার খাটের তলা বিভিন্ন উপঢৌকনে ভরে ওঠে, অন্যদিকে তার ড্রেসিং টেবিলের ডান দিকের ড্রয়ারে জমে বিভিন্ন ফুল ও গাছের শুকনো পাতা। উপঢৌকনগুলো তার বাইরের জিনিস, ফুল-পাতা মনে জমা হয়। শিরীন মওলানা আবদুল জব্বারের দেওয়া বই বেহেশতের জেওর বই মসজিদের বারান্দায় রেখে আসে, তিনজন ফকিরনিকে তিনটি শাড়ি দান করে, এরশাদ সাহেবের দেওয়া জড়োয়া সেট টুকরো টুকরো করে বিলিয়ে দেয়, আবু, হাবু, শফির দেওয়া আতর নর্দমায় ফেলে দিয়ে খাটের তলা পরিষ্কার করে ফেলে। কিন্তু ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে জমা প্রাকৃতিক সামগ্রী সংরক্ষণ করে।

সেলিমের প্রতি শিরীনের প্রেমাবেগ আরও তীব্র হয় খরা মৌসুমে। খরায় সেলিমের বাগানে ফুল ফোটে না। ফুল ছাড়া সেলিমও যায় না শিরীনের কাছে। অনেকদিন পর যেদিন সেলিম যায়, শিরীন কতটা উদ্বেলিত ও কতটা বিরহ পুষে রাখে সেলিমের জন্য তা বোঝা যায়— ‘তুমি আহো না ক্যালা?/ ফুল ফুটে নাই, মোহাম্মদ সেলিম বলে, ফুল আনা পারিনিকা।/ ফুল ফুটে নাই, ফুটে নাই! তুমি আহো না ক্যালা? ভিতরে আহো!’ বহুদিন পর মোহাম্মদ সেলিমকে কাছে পেয়ে শিরীন আকতারের মন অনাবিল আনন্দে ভরে ওঠে। ফলে, ‘বাইশ বছরের এই অনিন্দ্য যুবতী মোহাম্মদ সেলিমকে আলিঙ্গন করে, ঘাড়ের পেছনে হাত দিয়ে টেনে নামিয়ে তার শুকনো বাদামি ঠোঁটে চুম্বন করে।’ কিন্তু আবু ভ্রাতৃত্রয় চুম্বনরত অবস্থায় তাদের দেখে ফেলায় সে রাতেই কাজি ডেকে আবু হোসেনের সঙ্গে জোরপূর্বক শিরীন আকতারের বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়।

মোহাম্মদ সেলিমের সঙ্গে শিরীনের আকর্ষণ যে তাৎক্ষণিক দুর্বলতা নয়, তার জোরপূর্বক বিয়ের সময়ও বোঝা যায়। কাজি সাহেব কবুল বলতে বললে তিনবারই সে স্পষ্টভাবে ‘না’ বলে। মোহাম্মদ সেলিমের মনেও শিরীনের জন্য তৈরি হয় সুতীব্র প্রেমানুভূতি। হাবু যখন তাকে শিরীন আকতারের পায়ের ওপর ফেলে তাকে মা হিসেবে সালাম করতে বলে, তখন সে পায়ের ওপর উপুড় হয়ে পড়ে ঠিকই, কিন্তু মা হিসেবে নয়, প্রেমিকা হিসেবেই শিরীন আকতারের পদযুগল চুম্বনে সিক্ত করে তোলে। আধিপত্যকামিতা ও যথেচ্ছাচারের কাছে দৃশ্যত প্রেমের পরাজয় হয়। অচরিতার্থ প্রেমের বেদনা বহন করতে ব্যর্থ কিশোর মোহাম্মদ সেলিম পরদিন ভোরে শিরীন আকতারদের বাড়ির সামনের লাইটপোস্টে মরে ঝুলে থাকে। 

লেখক যে ভাষায় ও উপস্থানকৌশলে, হৃদয়বিদারক এই আখ্যান গড়ে তোলেন, একই সঙ্গে প্রেম, ও হিংস্র কামনা পরস্পরের সংলগ্ন থেকে এগোয়। ভুতের গলি মহল্লার মাস্তানতন্ত্র প্রকৃত-অর্থে বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতকে প্রতীকীভাবে উপস্থিত করলেও এ গল্প শেষপর্যন্ত অপ্রথাগত তীব্র প্রেমের উদাহরণ হিসেবেই ভাস্বর থাকবে।


‘আমাদের কুটিরশিল্পের ইতিহাস’ গল্পের প্রেম ‘এই সময়’ গল্পের মতো ততটা তীব্র নয়। কেন না, ‘এই সময়’ গল্পে সমাজনিষ্ঠতা ও তথাকথিত ক্যাডারতন্ত্র অতিক্রম করে যেভাবে প্রেমানুরাগ প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়, ‘আমাদের কুটিরশিল্পের ইতিহাস’ গল্পে তা নয়। এ গল্পেও ‘এই সময়’-এর মতো রোমান্টিক প্রেমের অনুরক্তি ও অচরিতার্থতার চিরায়ত হাহাকার, আসঙ্গ-বাসনা ও মৃত্যু আছে, কিন্তু ‘আমাদের কুটিরশিল্পের ইতিহাস’-এ পুরান ঢাকার দক্ষিণ মৈশুন্দি মহল্লার মানুষের জীবনযাপন, রাজনীতি, দখলদারিত্ব তথা সামষ্টিক গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় প্রেম একটি বিশেষ অনুষঙ্গ। তবে, শহীদুল জহির তাঁর গল্পে বিষয় ও বিশ্লেষণে পাঠকের নিজস্ব ব্যাখ্যার দরজাও খোলা রাখেন। তাঁর ভাষায়: ‘পাঠকের একটা স্বাধীন সত্তা আছে, পাঠকের একটা নিজস্ব ব্যাখ্যা থাকতে পারে। লেখকের একটা ব্যাখ্যা তো থাকেই, কিন্তু সেটাই যে একমাত্র ব্যাখ্যা সেটা তো না-ও হতে পারে! লেখার সময় আমার কিছু একটা বলার তো থাকেই, কিন্তু সেটা একেবারে পরিষ্কার করে দিতে চাই না। [...] যেমন ‘আমাদের কুটিরশিল্পের ইতিহাস।’ তো সেটা যেভাবে সে ব্যাখ্যা করবে, সেটাই ঠিক আছে। এগুলো ঠিক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার মতো কোনো বিষয় না। এগুলো যে খুব কঠিন বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছে, তা-ও বলা যাবে না। আসলে, সাহিত্যেও কিছু বলার থাকবেই, কিন্তু একইসঙ্গে সাহিত্য যদি সবকিছু বলে দেয়ার ভূমিকা নেয়, তাহলে তো কোনো লাভ হবে না।’

ফলে, শহীদুল জহিরের যে কোনো গল্পই বিষয়বিন্যাসে পাঠকের বিবেচনায় স্বাধীন বহুমুখিনতা অর্জন করে, ‘আমাদের কুটিরশিল্পের ইতিহাস’ও তাই। তাঁর অপরাপর গল্প কিংবা উপন্যাসের মতোই, এ গল্পেও মহল্লার সীমায়তনে এক যৌথজীবনের আলেখ্য নির্মিত হয়। একটা নিতান্ত সাধারণ ভৌগোলিক অঞ্চল পুরান ঢাকার দক্ষিণ মৈশুন্দি কীভাবে শিল্পায়িত হয়ে ওঠে, জনজীবনের তীব্র কোলাহলে মুখর মহল্লায় নীরবে লেদ মেশিন চলে। মহল্লার গলির মুখে তরমুজওয়ালা তরমুজ নিয়ে বসায় সংকীর্ণ রাস্তায় রিকশা, ঠেলাগাড়ি, বেবিটেক্সি, কুকুর, বেড়াল, ছাগল ও মানুষে জট পাকিয়ে ওঠার ফাঁকে প্রেমও দানা বেঁধে ওঠে। মহল্লার উঠতি বয়সি কিশোর বা বালকদের একটা দল, যারা নিজেদের ‘আমরা’ সম্বোধন করে, তারা দক্ষিণ মৈশুন্দির কুটিরশিল্পায়নের সমান্তরালে ক্রমাগত যে প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ভেতর দিয়ে যায়, গল্পকার, এ গল্পে
বিচ্ছিন্নভাবে সেই গড়ে ওঠার সামষ্টিকতাকে ধরতে চান। গড়ে ওঠার পুরো প্রক্রিয়াটি আপাতভাবে বিচ্ছিন্ন মনে হলেও বস্তুত, তা নয়। বিচ্ছিন্ন মনে হবার কারণ, লেখক সময়কাঠামোকে এত টুকরো করে কাহিনি বর্ণনা করেন, একটা দীর্ঘ সময়ব্যাপী ঘটে যাওয়া ঘটনাক্রম— শিল্পায়ন, রোমান্টিক মুগ্ধতা, রাজনীতি, দখল, আত্মহত্যা ও প্রেম একই তলে জমে ওঠে আখ্যানের পরম্পরা নষ্ট করে দেয়।

লেখক ‘আমরা’ সম্বোধিত মহল্লার তরুণদের বয়ানে তাদের কৈশোর ও কৈশোর-পরবর্তী জীবনের প্রেম এবং ব্যর্থতার হাহাকারের পাশাপাশি একটি মহল্লা কীভাবে, লেবেঞ্চুস কারখানা, লেদ মেশিনের শব্দে ক্রমশ নাগরিক জটিলতায় আকীর্ণ হয়ে ওঠে তার শিল্পভাষ্য রচনা করেন। এই ‘আমরা’ অবশ্য ধনিক শ্রেণির কেউ নয়। মহল্লার খেটে খাওয়া শ্রমিক কিংবা নিম্নবেতনের চাকরিজীবী পরিবারের সন্তানদের যূথবদ্ধ ‘আমরা’র দেখা ও চাওয়ায় স্বপ্ন যতটা আছে কিন্তু দাবি বা অধিকারবোধ ততটা নেই। তারা, অর্থাৎ যৌথ ‘আমরা’ যথেষ্ট দূরত্ব রেখে মহল্লায় শেফালি আখতারকে বড় হতে দেখে। গল্পকার ‘আমরা’কে কখনো শেফালির মুখোমুখি করেন না। দায় এড়িয়ে যাওয়া ভীতু ও কল্পনাবিলাসী মধ্যবিত্তসুলভ মানসতার ‘আমরা’ কখনো শেফালির জন্য মন্দিরের সামনে প্রতীক্ষা করে, কখনো তাকে শেফালি ফুল বলে ডাকে। বাংলাবাজার স্কুলের ফিরোজা রঙের ইউনিফর্ম পরা মেয়েটি সামান্য হেসেই তাদের বিভ্রান্ত করে ফেলে— ‘শেফালি ফুল নাকি?’ নারিন্দা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক আবদুল গফুরের কন্যা শেফালি আখতার মহল্লার একদল স্কুলপড়ুয়া কিশোরদের নিয়ে বিভ্রান্তির যে খেলা শুরু করে, খেলা অসমাপ্ত রেখে সে জনৈক যুবকের হাত ধরে পালিয়ে গেলে মহল্লায় একটি অনাবশ্যক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আবদুল গফুরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্যেও শহীদুল জহির চিরাচরিত মধ্যবিত্তের মানসভুবনের সন্ধান দেন। যে পিতার কন্যা প্রেমের কারণে ঘর ছাড়ে সে পিতার যেন বেঁচে থাকবার অধিকার নেই— সমাজমানসের এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়ও এতে পাওয়া যায়। কিন্তু, মহল্লার ‘আমরা’ সম্বোধিত কিশোরদল তরমুজ খাওয়ার আনন্দের মধ্যেও শেফালির তথাকথিত অভিসারগমনের বেদনাবোধে আক্রান্ত হয়।

একটা বিষয় খুবই লক্ষ করার মতো যে, শহীদুল জহিরের কথাসাহিত্যে ঘুরেফিরে যে ‘আমরা’ চিহ্নিত সমষ্টিমানুষ উপস্থিত হয়, অসচেতনভাবে হলেও তারা সবাই পুরুষ। লেখকের অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তিসত্তার সংশ্লেষেই এমনটা ঘটে বলে মনে হয়। ‘আমাদের কুটিরশিল্পের ইতিহাস’ গল্পের ‘আমরা’ শেফালি ও আবদুল গফুরের জন্য দুঃখিত হয়, কিন্তু পুরুষসুলভ কর্কশতা কিংবা অস্থির চিত্তবৃত্তির কারণে শেফালি কিংবা আবদুল গফুরকে বিস্মৃত হতেও তাদের সময় লাগে না। তারা গ্রাজুয়েট হাইস্কুলের শরীরচর্চা প্রশিক্ষক ননী বসাকের মেয়ে ঝর্ণার জন্য একইরকম অনুভূতি পোষণ করে। কিন্তু, ঝর্ণা বসাক চলচ্চিত্রের নায়িকা [পুরান ঢাকার ননী বসাকের মেয়ে ঝর্ণা বসাক বাস্তবে চরিত্র। তিনি শবনম নামে বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। অভিনেত্রী হিসেবে তিনি পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে বা ললিউডে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৮০ এর দশক পর্যন্ত একাধারে সক্রিয় অভিনয় চর্চা করে গেছেন। ১৯৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প বা ঢালিউডে অভিনয় করেছেন। ১৭ আগস্ট, ১৯৪০ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ননী বসাক ছিলেন একজন স্কাউট প্রশিক্ষক ও ফুটবল রেফারি। স্বনামধন্য সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষকে বিয়ে করেন ১৯৬৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর।] হয়ে গেলে ‘আমরা’দের মনে কেবলই না পাওয়ার হাহাকার জমা হয়। কারণ, এখানে, মোটাদাগে যে তিনটি সময়খণ্ডের নিরিখে আখ্যান বর্ণনা করা হয়—কৈশোরিক প্রাইমারি স্কুল, গ্রাজুয়েট হাইস্কুল ও বিবাহিত জীবন, তাতে দক্ষিণ মৈশুন্দির সামষ্টিক জীবনের সঙ্গে ননী বসাকের মেয়ের জন্য আজিজুল হকের পাগল হয়ে পাবনার পাগলাগারদে চলে যাবার পেছনেও নিশ্চিত করেই প্রেম ভূমিকা পালন করে। আজিজুল হক—শেফালির ভাই, আত্মহত্যাকারী আবদুল গফুরের এই সন্তান ঝর্ণা বসাকের জন্য কবিতা লেখে, পিটি টিচারের বেতের মার খায়। কিন্তু সে ঝর্ণা যখন রূপমহল সিনেমাহলের পর্দায় ‘চান্দা’ কিংবা ‘তালাশ’ সিনেমার নায়িকা হয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায় তখন আজিজুলকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। কিন্তু ‘আমরা’র মধ্যে যারা নামহীন, তাদের জন্য লেখকের একটু সহানুভূতিও নেই।

গতানুগতিক মধ্যবিত্তমানসকে তিনি এভাবেই চেনেন— ভীতু ও দুঃখবিলাসী। এখানে নামহীন ‘আমরা’ ননী বসাকের কানমলা ও বেত খেয়ে গ্রাজুয়েট হাইস্কুল জীবন শেষ করে জীবিকার প্রয়োজনে কেউ লেদ মেশিন অথবা কাচের কারখানায়, কেউ পুরনো যন্ত্রাংশ বা ইলেট্রিক সরঞ্জামের দোকানে কাজে নিযুক্ত হয়। নামহীন তথাকথিত ‘আমরা’ এভাবে প্রথামাফিক বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করে। এখানে আরেকজন প্রেমিক আমিনুল হক, যে আসলে শেফালিরও ভাই এবং আবদুল গফুরেরও পুত্র। এই পরিবারের মেয়ে শেফালি পালিয়ে বিয়ে করার কারণে পিতা আত্মঘাতী, এক ভাই প্রেমে ব্যর্থতার জন্য মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, এত বাধা সত্ত্বেও আমিনুল প্রেমে পড়ে। গল্পলেখক ‘আমাদের কুটিরশিল্পে ইতিহাস’-এ আমিনুল হককে ভীতু ও কল্পনাবিলাসী ‘আমরা’ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে প্রকৃতঅর্থে রোমান্টিক প্রেমের প্রতিনিধিমুখ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ‘দুর্বল’ আমরা কেবলই দেখে যায়, হাহাকার করে; কাছে যাওয়ার বা পাওয়ার কোনো আকাঙ্ক্ষা তাদের নেই বা কাছে পেতে তারা ভয় পায়। কারণ কাছে পাওয়া তো শুধু আনন্দানুভূতি নয়, দায়িত্বও। গল্পের ‘আমরা’ যেহেতু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমিনুল হকের মধ্যে এই দুর্বলতা থাকে না। সে বাঁশি বাজায়, তার বাঁশির সুর মহল্লাবাসী উৎকর্ণ হয়ে শোনে। বিবাহিত ‘আমরা’ যখন তাদের স্ত্রীদের শরীর, গোলাকার স্তন নিয়ে ব্যস্ত, আমিনুল হক গোলাকার মুখের মেয়ে পুতুল বেগমের প্রেমে পড়ে। অথচ পুতুল বেগমের জন্যে ‘আমরা’ভুক্ত ছেলেরা আবদুল জলিলের লেদ মেশিন কারখানার উদ্বোধনী মিলাদের জিলাপি চেয়ে নিয়েছিল। অথচ তারা নয়, প্রেমে পড়ে আমিনুল এবং দেয়ালের এপার থেকে কেবল গোলগোল মুখ দেখে প্রেমে পড়ার কারণে সে জানতেও পারে না যে, আসলাম ব্যাপারীর এই মেয়েটি আসলে পঙ্গু। টাইফয়েড জ্বরে পঙ্গু হয়ে যাওয়া পুতুল বেগমও অন্য তরুণদের মুগ্ধ দৃষ্টি উপেক্ষা করে বাঁশিওয়ালা আমিনুলের প্রেমেই পড়ে। আমিনুলের বাঁশি যেন কৃষ্ণের বাঁশির সুর হয়ে রাধার মতো পুতুলকেও অনুরাগী করে তোলে। তখন অন্য তরুণরা পুতুলের জন্যে মিলাদ থেকে আনা জিলাপি ও বিস্কুট মন্দিরের বারান্দায় বসে খেয়ে ফেলার পর পুতুলের ওপর হম্বিতম্বি করে—‘প্রেম করচ!’

জীবনের নানা জটিলতা এসে অন্য তরুণদের ব্যস্ত করে দেয়। প্রেমের জন্য তাদের আর যথেষ্ট সময় নেই। ফলে, একসময় আমিনুল ও পুতুলের প্রেমও তারা মেনে নেয়। তরমুজ খাওয়ার উপকারিতাও তারা বুঝতে পারে, কারণ ‘এটা কেবল দেহ মন ঠাণ্ডা রাখে, তা নয়, এটা জীবনে একটি উদ্দেশ্য এনে দেয়, না হলে শূন্যতার ভেতর মানুষ পথ হারায়।’ দেহ-মন ঠাণ্ডা রাখার জন্য তরমুজ খুব উপকারী। চিকিৎসাবিজ্ঞানও তরমুজের খাদ্যমানের স্বীকৃতি দেয়। যেমন, এই ফল নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জলীয় অংশ, যা পানিশূন্যতা রোধ করে; আর আছে বেশ খানিকটা শর্করা, যা বাড়তি শক্তি জোগায়। এ ছাড়াও তরমুজে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন ‘বি সিক্স’ এবং ফলেট।

এই ফলে লাইকোপিন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে অনেক, যা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও প্রদাহ কমায়। প্রচুর ভিটামিন ‘এ’-সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও আর্দ্রতা রক্ষায়ও তরমুজের জুড়ি নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক চিকিৎসা-গবেষণা তরমুজের আরও যে গুণের সন্ধান পাওয়া গেছে, গল্পের তরুণদের তরমুজ খেয়ে দেহমন ঠাণ্ডা রাখার কথা নয়। তবু জীবনের জটিলতায় ব্যস্ত তরুণদের পুতুলকে ভুলে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু শেফালির হাস্নুহেনা ফুলগাছের তীব্র গন্ধে এবং আমিনুলের বাঁশির সুরে গল্পে সাপের আগমন হয়। সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় আমিনুলের। পুরাণের বেহুলা দেবতা ইন্দ্রের সভায় নেচে লখিন্দরের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল। এখানে পুতুল বেহুলা নয় ঠিকই, কিন্তু আমিনুলের জন্য পুতুলের প্রেমও যে সজীব ও প্রাণবন্ত, তা বলা যায়।

** সে রাতে পূর্ণিমা ছিল: শহীদুল জহির ও তার উপন্যাস 

/তারা/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়