প্রেসিডিয়ামের জরুরি বৈঠক
জাপাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই আনিসুলের বাসায় হামলা
নেতাদের ভয় দেখিয়ে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পরিকল্পিতভাবে পার্টির চেয়ারম্যানের বাসভবনে এই হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়েছে। এই সহিংস পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে হাওলাদার টাওয়ারে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের জরুরি বৈঠকে এই অভিযোগ করা হয়।
বৈঠকের শুরুতে জুলাইযোদ্ধা ওসমান হাদির মৃত্যুতে ঘোষিত রাষ্ট্রীয় শোকের অংশ হিসেবে তার আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
দলটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের সঞ্চালনায় সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনে হামলার অপচেষ্টা এবং ময়মনসিংহে প্রকাশ্যে হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর লাশে অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলো একটি অশুভ গোষ্ঠীর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করে জাতীয় পার্টি।
প্রেসিডিয়াম সভার প্রস্তাবে বলা হয়, জাতীয় নির্বাচন বানচাল করে দেশকে একটি অন্ধকার যুগের দিকে ঠেলে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এ ধরনের বীভৎস ও সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
এতে বলা হয়, জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখি রাজনৈতিক দল।নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট নামে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সহিংস পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়।
“জাতীয় পার্টি যখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক সেই সময় পার্টির চেয়ারম্যানের বাসভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্রের অংশ,” বলেও মনে করে প্রেসিডিয়াম সভা।
প্রেসিডিয়াম সভার প্রস্তাবে বলা হয়, শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নের সাদেকনগর গ্রামে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বাসভবনে শতাধিক দুর্বৃত্ত অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক লুটপাট করে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এছাড়াও দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর, ছায়ানট, উদিচি, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় প্রেসিডিয়াম সভা থেকে।
বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহে এক হিন্দু যুবককে প্রকাশ্যে হত্যার পর অগ্নিসংযোগ, সাংবাদিক নুরুল কবিরের ওপর হামলা, খুলনায় সাংবাদিক হত্যা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনে হামলার অপচেষ্টা, লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও শিশু হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সভা।
দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে বলে প্রস্তাবে বলা হয়।
প্রেসিডিয়াম সভায় বলা হয়, জাতীয় পার্টির বিভিন্ন নেতার নামে জুলাই-আগস্টে দায়েরকৃত মিথ্যা হত্যা মামলাগুলো এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি এবং অনেক নেতার বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। মামলা ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে জাতীয় পার্টির নেতারা কীভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন—সে প্রশ্ন তোলে প্রেসিডিয়াম সভা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, নির্বাহী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, নাসরিন জাহান রত্না, সোলায়মান আলম শেঠ, মাশরুর মাওলা, নাজমা আক্তার, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, আরিফুর রহমান খান, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, সরদার শাজাহান, ফখরুল আহসান শাহজাদা, বেলাল হোসেন, নুরুল ইসলাম ওমর, আমানত হোসেন আমানত, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, শাহ জামাল রানা ও শেখ মতলুব হোসেন লিয়ান।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ