ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এখনো কাঁদছেন ডা. শামারুখের বাবা!

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৩ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এখনো কাঁদছেন ডা. শামারুখের বাবা!

পাঁচ বছরেও জট খোলেনি যশোরের ডাক্তার শামারুখ মেহজাবিন সুমির রহস্যজনক মৃত্যুর। এখনো কাঁদছেন তার বাবা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম।

২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডিতে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের প্রাক্তন সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানের বাসা থেকে তার পুত্রবধূ ডা. শামারুখের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্বামী-শ্বশুর বাড়ি থেকে এই মুত্যুকে বারবার আত্মহত্যা বললেও একে সরাসরি হত্যা বলে আসছেন ডা. শামারুখের বাবা।

পাঁচ বছর পর যশোরে সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার আদরের কন্যা ডা. শামারুখের মৃত্যুর পুন:তদন্ত চাইলেন প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম । তিনি জানান, তার মেয়ে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

সংবাদ সম্মেলনে সন্তানহারা এই বাকরুদ্ধ বাবার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রাক্তন সভাপতি হারুন-অর-রশিদ।

বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকায় খান টিপু সুলতানের বাসা থেকে শামারুখের লাশ উদ্ধারের পরদিন ধানমন্ডি থানায় শামারুখের বাবা নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় ডা. শামারুখের শ্বশুর খান টিপু সুলতান, শাশুড়ি জেসমিন আরা বেগম, স্বামী হুমায়ুন সুলতান সাদাব।

বাদীর আপত্তিতে দাফনের ১৭ দিন পর ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর মরদেহ উত্তোলন করে দুই দফায় ময়না তদন্ত করা হয়। তারপরও সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি দাবি মামলার বাদীর।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, শুরু থেকে মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে খান টিপু সুলতান তৎপর ছিলেন। তারা তদন্ত কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের প্রভাবিত করেছেন।

বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘খুনি আমার মেয়েকে বাম হাত দিয়ে হত্যা করেছে। গলার বাম পাশে এক আঙুলের (বুড়ো আঙুল) চাপের দাগ, ডান পাশের দুই আঙুলের চাপের দাগ ছিল।’

তিনি এসময় আরো কিছু অসঙ্গতির কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘গলায় ওড়নার ফাঁস থাকলে গিরা পেছনের দিকে বা পাশে থাকে। থুঁতনিতে দড়ি বেঁধে গেলে ঝুলে পড়া যায় না। তাই গলার দুই পাশের ওই দুটি দাগ, গিরা বা নোডের নয়। বাথরুমের সিলিংয়ের উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। সেখানে কোনো হুক নেই। ৫ ফুট দুই ইঞ্চি গ্রিলের সঙ্গে ৫ ফুট আড়াই ইঞ্চি উচ্চতার মেয়ে কীভাবে ফাঁস ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করল বোধগম্য নয়।

বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘হত্যার রহস্য উম্মোচনে অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে এসেছে। কিন্তু সেই প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর বের করতে পারেনি তদন্ত কর্মকর্তা। শামারুখকে উদ্ধার করে দু’শ গজ দূরে থাকা ধানমন্ডি থানা পুলিশ না ডেকে নিজেই তারা লাশ নামান। বাসার বিপরীতে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও সেখানে নেয়া হয়নি। নিজের মালিকানাধীন হাসপাতালে (সেন্ট্রাল হসপিটাল) নেয়া হয়।’

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম থেকে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের চেয়ে সাক্ষীদের বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ আমার মেয়ের মোবাইল নম্বর ও আসামিদের মোবাইল নম্বর লিখিতখভাবে থানায় জমা দিয়েছি, কললিস্ট চেক করার জন্য। কারণ ঘটনার আগে ও পরের কললিস্ট চেক করলেই পরিষ্কার হয়ে যেত হত্যাকান্ডের রহস্য। আসামির বাড়ির গাড়ির ড্রাইভার ও কাজের বুয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দাবি করেছিলাম সেটিও করা হয়নি। এমন অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তাই মামলাটি পুনঃতদন্তের মাধ্যমে বিচার কাজ করার দাবি জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডা. শামারুখ হত্যার বিচার দাবিতে বুধবার প্রেসক্লাব যশোরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে যশোরবাসী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত নাগরিক সমাজ যশোরের সভাপতি শহিদুল হক বাদলসহ তার আত্মীয়-স্বজনরা।

 

যশোর/সাকিরুল ইসলাম রিটন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়