সেই বৃদ্ধার পাশে সেফটি হাউস

নড়াচড়া করতে পারেন না, ঘাড় নড়ালেও প্রচণ্ড ব্যথা পান তিনি। এ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে থাকার কথা, কিন্তু শুয়ে আছেন বাজারের পাশে নোংরা এক পরিত্যক্ত জায়গায়। কনকনে শীত এবং ময়লার গন্ধ তার অসুস্থতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বলছিলাম অজ্ঞাত পরিচয়ের ৬০ বছর বয়সী এক নারীর কথা।

তাকে সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গা বাজার নদীর পাশের একটি পরিত্যক্ত জায়গায় প্রায় তিন মাস আগে ফেলে রেখে যান তার স্বজনেরা।

রক্তের সম্পর্ক যখন বিশ্বাস ঘাতকতা করে, ঠিক তখনই সামনে এসে দাঁড়ায় মানবতা। অসহায় এই বৃদ্ধার পাশে এসে দাঁড়ালেন ‘দি বার্ড সেফটি হাউস’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে ভর্তি করালেন সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে।

সংগঠনটির সভাপতি মামুন বিশ্বাস ও তার সহযোগী লোকমান হোসেন গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। রোববার তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি স্বজনদেরও সন্ধানের চেষ্টা করছে সংগঠনটি।

সলঙ্গা অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা ও বাজারের সাইকেল মেরামত মিস্ত্রি আব্দুল মমিন জানান, তিন মাস আগে রাতের আঁধারে অসুস্থ এ বৃদ্ধাকে নদীর পাশের একটি পরিত্যক্ত স্থানে ফেলে রেখে যান তার স্বজনেরা। গুরুতর অসুস্থ এই বৃদ্ধা চলাফেরা করতে পারেন না এবং কোনো কথাও বলতে পারছিলেন না। এ কারণে তার নাম-পরিচয় বা স্বজনদের ঠিকানাও জানা যায়নি। এরপর থেকে স্থানীয়রা তাকে খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন। প্রচণ্ড শীতে খোলা জায়গায় কষ্ট পাচ্ছিলেন দেখে এলাকাবাসী একটি পলিথিনের ছাউনি তৈরি করে দেন। কনকনে ঠান্ডায় কিছু খড় ও পুরনো কম্বল মুড়িয়ে পড়েছিলেন এই বৃদ্ধা।

বিষয়টি স্থানীয় ফেসবুক গ্রুপ ‘বর্ণচ্ছটা’র নজরে আসে। এরপর তারা শাহজাদপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দি বার্ড সেফটি হাউসকে জানান। তারপর সংগঠনের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

মামুন বিশ্বাস বলেন, ‘স্থানীয় সাংবাদিক সোহেল রানা ও বর্ণচ্ছটা সংগঠনের মাধ্যমে ওই বৃদ্ধার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়। খবর পেয়ে শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে গোসল করাই। এরপর নতুন পোশাক পরিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’

সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের ডা. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘বৃদ্ধা মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি কথা বলতে পারছেন না এবং ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারছেন না। বেশ কিছু পরীক্ষা দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার পর তার শারীরিক অবস্থা জানা যাবে।’


সিরাজগঞ্জ/হাকিম মাহি