ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পাথর কোয়ারিতে মৃত্যুর মিছিল থামবে কবে?

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৬, ২৪ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাথর কোয়ারিতে মৃত্যুর মিছিল থামবে কবে?

সিলেটের শাহ আরপিন টিলায় পাথর উত্তোলনের গর্তে কাজ করছিলেন ২৩ বছর বয়সি লিটন মিয়া। আকস্মিক গর্ত ধসে পড়লে মাটি চাপায় মারা যান তিনি। লিটনের বাড়ি সুনামগঞ্জের সদর উপজেলায়।

এদিন মাটি চাপায় আরও দুইজন আহত হন। ঘটনাটি গত ২০ জানুয়ারির। এ ঘটনার পর একজনকে তাৎক্ষণিক আটক করে পুলিশ। দায়ের হয় মামলাও।

সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলায় সবমিলিয়ে সাতটি পাথর কোয়ারি রয়েছে। ভারত সীমান্তঘেষা এলাকায় এসব কোয়ারির অবস্থান। এগুলো হচ্ছে- কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ, শাহ আরপিন ও উৎমাছড়া; গোয়াইনঘাটের জাফলং ও বিছনাকান্দি;  জৈন্তাপুরের শ্রীপুর এবং কানাইঘাট উপজেলা লোভাছড়া। এসব কোয়ারিতে গর্ত করে ঝুঁকি নিয়ে পাথর উত্তোলন করেন শ্রমিকরা। কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় গর্ত ধসে প্রাণহানি হয় আহরহ।

গত তিন বছরে সাত পাথর কোয়ারিতে গর্ত ধসে মাটি চাপায় মারা গেছেন ৭৬ জন। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রশাসনের হুলস্থুল শুরু হয়; তদন্ত কমিটির পাশাপাশি স্থানীয় ইউএনও এবং ওসিকে বদলীর মতো ঘটনাও রয়েছে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাথর উত্তোলন। এ কারণে বন্ধ হচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন বছরে পাথরের গর্ত ধসে ৭৬ শ্রমিক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক শ্রমিক।

পাথর কোয়ারিতে কর্মরত শ্রমিকের অধিকাংশই সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহের হাওর এলাকার মানুষ। অধিক অর্থ পাওয়ার আশায় তারা কোয়ারিতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে থাকেন। শাহ আরপিনে কর্মরত সুনামগঞ্জের পাথর শ্রমিক আব্দুল আলী জানান, প্রতিনিয়ত শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় তারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। পেটের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ করে যাচ্ছেন।

আবার অনেকে এ পেশা ছেড়েও দিয়েছেন। এমনই একজন কানাইঘাটের বড়চতুল গ্রামের হারুন রশীদ। তিনি এ পেশা ছেড়ে এখন রঙ মিস্ত্রির কাজ ধরেছেন। তিনি বললেন, আগে লোভাছড়া পাথর কোয়ারিতে কাজ করতেন। ইনকামও বেশ ভালো ছিল। কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় বলে এ কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র বলছে, পাথর কোয়ারিতে মাঝে-মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই গোপন রাখেন সংশ্লিষ্ট গর্ত মালিকরা। হতাহতের ঘটনা ঘটলে তারা লাশ গুম কিংবা গোপনে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, পাথর কোয়ারিতে শ্রমিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করে নেপথ্যের পাথরখেঁকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

 

সিলেট/আব্দুল্লাহ আল নোমান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়