ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

১৮ বছর পর গৃহে ফিরলো বকুলী বালা

বিলাস দাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৫, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৮ বছর পর গৃহে ফিরলো বকুলী বালা

আজ থেকে ১৮ বছর আগে ছোট মেয়ে আলো রানীকে খোঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হন ৭০ বছর বয়সি বকুলী বালা।

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পাড়ডাকুয়ার তালবাড়িয়া গ্রামের কৃষক ঠাকুর কৃষ্ণ হালদারের মা বকুলী বালা।

বকুলী বালাকে ২০১৫ সালে পটুয়াখালী পৌর শহরের তিতাসপাড়া এলাকায় বৃষ্টি ভেজা জবুথবু অবস্থায় উদ্ধার করেন খাবার হোটেল ব্যবসায়ী শারমিন আক্তার লাইজু। এরপর স্থানীয় সাংবাদিক ও কাউন্সিলর কাজল বরন দাস ওই বৃদ্ধাকে আশ্রয় দেন।

বৃদ্ধার নাতি রিপন চন্দ্র হালদার পটুয়াখালী সরকারি কলেজে স্নাতোকোত্তর পড়ছেন। তিনি (১৪ ফেব্রুয়ারী) শুক্রবার বিকেলে সহপাঠীদের নিয়ে শহরের ঝাউবাগানে ঘুরতে যান।

এ সময় তিতাসপাড়া এলাকার বটতলার একটি ঝুপড়ি ঘরে তার ঠাকুর মায়ের মত এক বৃদ্ধাকে দেখতে পেয়ে কাছে এগিয়ে যান। এসময় পরিচয় জানতে চাইলে কিছুই বলতে পারেনি বৃদ্ধা। বৃদ্ধার গড়নের বিস্তারিত রিপন তার বাবাকে মুঠোফোনে জানান। পরে বৃদ্ধার ডান হাতের মধ্যমা আঙুলের আঘাতের চিহ্ন দেখে পুরোপুরি শনাক্ত করা হয় তিনিই তার ঠাকুর মা।

রিপন রাইজিংবিডিকে জানান, তার ঠাকুর মা যখন বাড়ী থেকে নিখোঁজ হয় তখন তার বয়স আট-নয় বছর। নিখোঁজের ১৮ বছর পরও তাকে দেখে চিনতে পেরেছেন তিনি।

বকুলী বালার ছেলে ঠাকুর কৃষ্ণ আবেগ আপ্লুত হয়ে রাইজিংবিডিকে  বলেন, ‘আমার মা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। ১৮ বছর পূর্বে ছোট বোন আলো রানীকে খুঁজতে বের হয়ে মা নিখোঁজ হন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় তাকে খুঁজেছি কিন্তু পাওয়া যায়নি। র্দীঘ ১৮ বছর পর বড় ছেলে রিপনের মাধ্যমে তার খোঁজ পেয়েছি।’

এসময় তিনি আশ্রয়দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অবশেষে রোববার র্দীঘ ১৮ বছর পরে নাতির হাত ধরে নিজ গৃহে ফিরছেন বকুলী বালা। এদিকে বৃদ্ধাকে তার পরিবার বাড়ী নিয়ে যাবে এমন খবরে উপচেপড়া ভীড় জমে তিতাসপাড়া এলাকায়। কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রথম কুড়িয়ে পাওয়া সেই শারমিন আক্তার লাইজু।

এ প্রসঙ্গে শারমিন আক্তার লাইজু জানান, গত পাঁচ বছর আগে রাতে বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। ছেঁড়া কাপড়ে জবুথবু অবস্থায় দেখতে পেয়ে পটুয়াখালী এনটিভির প্রতিনিধি ও কাউন্সিলর  কাজল বরন দাসকে জানানো হয়। পরে কাজল বরন দাস বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন।

গত পাঁচ বছর এলাকাবাসী যে যার সাধ্য মত বকুলী বালাকে সহায়তা করে আসছেন বলে জানান লাইজু।

কাজল বরন দাস বলেন, ‘এই বৃদ্ধা এলাকায় সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কথা কম বলতেন। মনে হতো মানসিক ভারসাম্যহীন তিনি। আশপাশের বাসায় গিয়ে খাবার খেতেন। আমরা সবাই মিলে একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে দিয়ে সেখানে তার থাকার ব্যবস্থা করি। তবে গত পাঁচ বছরে তার প্রতি মায়া জন্মেছে। এখন তিনি তার আত্মীয়স্বজনের কাছে ফিরে যাবেন তাই একটু খারাপ লাগছে। তবুও খুশি এই ভেবে যে তিনি তার আপন ঠিকানা পেয়েছেন।’


পটুয়াখালী/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়