ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এক কর্মকার দম্পতির জীবন সংগ্রাম

অরিন্দম মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৪, ১২ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এক কর্মকার দম্পতির জীবন সংগ্রাম

নির্মল কর্মকার। নওগাঁ ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন বাজারে তিনি এখনো কর্মকারের পেশাটি ধরে রেখেছেন।

তার মতে, আগের মতো পেশাটির কদর এখন আর নেই। তবু এ পেশাটিতেই কষ্টেসৃষ্টে টিকে আছেন তিনি।

আগ্রাদ্বিগুন বাজারটি ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার পশ্চিমে। বাজারে গেলে দেখা মেলে নির্মল কর্মকারের। তিনি ছোট একটি ঘরে বসে সিলভার গলিয়ে ভাতের হাতা, পানি তোলা ডাবু, খুনতি- এসব তৈরি করছিলেন। আর পাশে বসে তার সহধর্মিনী দুলালী কর্মকার সন্তানকে কোলে নিয়ে সিলভার গলাতে তার স্বামীকে সাহায্য করছেন। এমন শৈল্পিক কর্মে স্বামী-স্ত্রীর একাত্ম হয়ে কাজ করার দৃশ্যটি সত্যিই অসাধারণ।

নির্মল কর্মকারের যুক্তি হচ্ছে- ডিজিটাল সময়ে এখন মেলামাইন, প্লাস্টিক আর স্টিলের কদর। প্রাচীন বাংলার কর্মকারদের কদর এখন আর নেই। যার প্রভাব পড়েছে তার সংসার জীবনে। এমতাবস্থায় তাদের ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা ও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কামার পাড়ায় ঘুরে দেখা যায় অনেকেই বাপ দাদার পেশা কর্মকার জীবন ছেড়ে দিয়ে মাঠে-ঘাটে কাজ করে কিংবা ভ্যান-রিকশা চালিয়ে জীবনযাপন করছে।

এখানেরই ডাঁরকা দিঘী গ্রামের বাবা রুপচান কর্মকারের একমাত্র সন্তান নির্মল কর্মকার। ২০-২২ বছর আগে দুলালী কর্মকারকে বিয়ে করে সংসার পাতেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মকারের কাজ করে কোনরকম সংসারটিকে টিকিয়ে রেখেছেন। তাদের সংসারে দুই মেয়ে এক ছেলে। ছেলে ক্লাস নাইনে পড়াশোনা করছে। মেয়ে দুটো সবার ছোট। সংসারের অভাব অনটন ঘোচাতে স্ত্রী দুলালী কর্মকার স্বামীর পাশে থেকে নিরন্তর সাহায্য সহযোগীতা করে যাচ্ছেন।

তাদের হাতের তৈরি হাসুয়া ১৫০-২০০ টাকা, দা-বটি ১৫০-২০০ টাকা, কুড়াল ৩০০ টাকা, খুন্তি ৫০-৬০ টাকা, সিলভারের ভাতের হাতা-ডাবু, সুনলি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

নির্মল কর্মকার বলেন, ‘দাদার দাদা ঠাকুর দাদার আমল থেকে আমাদের এই ব্যবসা। বাবা রুপচান কর্মকারের কাছ থেকে আমার এই কাজকর্ম শেখা। শ্রমের মূল্য অনুযায়ী আমাদের হাতের তৈরি জিনিসপত্রের সঠিক দাম কেউ দিতে চায়না। তবুও আর কি করার বাপ-দাদার কর্মকার জীবনের স্মৃতি-ঐতিহ্যকে ধারণ করে চলেছি মাত্র।’

স্ত্রী দুলালী বলেন, ‘আমাদের দিকে কেউ চেয়ে দেখেনা। সংসার, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা আর জীবিকা নির্বাহের জন্য মানসম্মানের দিকে তাকিয়ে বাধ্য হয়ে বাপ দাদার পেশায় কাজ করছি। তা না হলে খাব কি বলুন। বছরে বিশেষ বিশেষ দিনে শুধু আমাদের হাতের তৈরি জিনিসপত্রের কদর বাড়ে। তারপর সবাই ভুলে যায়।’

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘সরকারের সুনজর ছাড়া স্বামী-সন্তান নিয়ে আমাদের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে উঠেছে।’

 

ধামইরহাট (নওগাঁ)/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়