ঢাকা     সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

আড়াই লাখ টাকার জন্য হাসপাতালে আটকা মেধাবী বিজয়

রফিক সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৩ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
আড়াই লাখ টাকার জন্য হাসপাতালে আটকা মেধাবী বিজয়

আড়াই লাখ টাকা বিল পরিশোধের জন্য হাসপাতাল ছাড়তে পারছেন না মেধাবী শিক্ষার্থী মো. আব্দুস সালাম বিজয়।

বয়স মাত্র ১৯ বছর। এই বয়সেই তার জীবনের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে এক কঠিন ঝড়। যে ঝড়ে তার পুরো পরিবারকেই বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে।

জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের চলতি বছরের এইচএসসি দেওয়ার কথা বিজয়ের। সে লক্ষ্যে ফরম পূরণও সম্পন্ন করেছেন।

গাজীপুরের কোনাবাড়ীর বাইমাইল এলাকায় বাবা-মা, দুই ভাই ও এক বোন নিয়ে ৫ সদস্যের পরিবার তাদের। বাবা জাহাঙ্গীর আলম পেশায় একজন পোশাক শ্রমিক আর মা বিভিন্ন মেসে রান্না করেন। পরিবার চলে বাবা আর মায়ের আয়েই। এই আয়ের ওপর ভর করেই কষ্টে সৃষ্টে লেখাপড়া চলছিল বিজয়ের। ছেলের মেধার কথা চিন্তা করে খরচ চালিয়ে গেছেন বাবা।

গত ১৬ ডিসেম্বর কোনাবাড়ীর আমবাড়ী এলাকায় ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন বিজয়। এই দুর্ঘটনার পর চোখেমুখে অন্ধকার দেখেন বিজয়ের মা বাবা। ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করার সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। কিন্তু কলেজের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা (নিউরো সার্জারি ওয়ার্ড, বেড নম্বর : ৪০৬, রোগীর আইডি : ১২১৪) হয় বিজয়কে। সেখানকার চিকিৎসক ব্রেইন, স্পাইন ও স্পাইনাল কর্ড সার্জন বি করিমের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। মাথার দু’পাশের হাড় খুলে ফেলে চিকিৎসা দেওয়ার পর প্রায় দেড় মাস চিকিৎসা নিয়ে মোটামুটি সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন বিজয়। এতে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকার মত ব্যয় হয়েছে। যা  সম্ভব হয়েছে বিজয়ের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের মাধ্যমে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগীতায়।

বিজয়ের মাথার দু’পাশের হাড়ে পানি জমে যাওয়ায় তাকে আবার গত ৮ এপ্রিল এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার মাথার পানি বের করে এবং গত ১৬ এপ্রিল বিজয়ের মাথার হাড় সার্জারি করা হয়। এতে সার্জারি মেডিসিন, আইসিও বাবদ এবং হাসপাতালের ফার্মেসির বকেয়া বিলসহ প্রায় আড়াই লাখেরও বেশি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু ওই বিল পরিশোধ করতে পারছে না বলে হাসপাতাল থেকে ছাড়াও পাচ্ছে না বিজয়।

এ ব্যাপারে কথা হয় বিজয়ের বন্ধু আইয়ুবুর রহমান তৌফিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী নুসরাত কবিরের সাথে। তারা জানান, বর্তমানে দেশে করোনা পরিস্থিতি চলছে। স্বাভাবিক অবস্থায় তারা বিজয়ের জন্য সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগীতা নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু বর্তমানে দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা কোথাও গিয়ে ওর জন্য সহযোগীতা চাইতেও পারছেন না। আবার তার দরিদ্র বাবার পক্ষে এই টাকা পরিশোধ করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই তারা সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।

বিজয়ের বাবা বলেন, ‘বিজয়ের চিকিৎসায় এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে বারো লাখ টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। আর সবই ওর কলেজের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে সহযোগীতা নিয়ে করেছেন। বর্তমানে বিজয়ের শরীরের অবস্থা কিছুটা ভালো। ডাক্তার বলেছেন চাইলেই আমরা বাড়িতে চলে যেতে পারি। এখন নিয়মিত ওষুধ সেবনেই সে সুস্থ হয়ে উঠবে। তাছাড়া প্রতিদিন হাসপাতালের বেড ভাড়া আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভবও নয়। তারচেয়ে ভালো বাড়ি রেখেই চিকিৎসা দেওয়া। কিন্তু হাসপাতালের ভাড়া, ফার্মেসির বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারছিনা বিধায় হাসপাতাল ছাড়তেও পারছি না। এদিকে প্রতিদিন বেড়েই চলছে হাসপাতালের বিল। এ অবস্থায় আড়াই লাখ টাকার মতো হলে আমরা বিজয়কে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারতাম।'

যদি সমাজের কোন বিত্তবান এগিয়ে আসেন। ০১৯৩২৭০৪৭৭৫ ( বিজয়ের বাবা) নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে সহযোগীতা পাঠাতে পারেন।

 

কালীগঞ্জ (গাজীপুর)/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়