ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ক্যাম্পে লকডাউন-লাল পতাকাও মানছেন না রোহিঙ্গারা

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১৭ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ক্যাম্পে লকডাউন-লাল পতাকাও মানছেন না রোহিঙ্গারা

দেরি করে হলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও হানা দিয়েছে করোনাভাইরাস, বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত তিন দিনে ৪ জন রোহিঙ্গা আক্রান্ত হওয়ার পর তিনটি ব্লকে প্রায় ১৩০৭টি ঘর লকডাউন করে টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে লাল পতাকা। কিন্ত তারপরও সেখানে মানা হচ্ছে না দূরত্ব বজায় রাখার স্বাস্থ্যবিধি। বরং লকডাউন এলাকায় জটলা বেড়ে গেছে রোহিঙ্গাদের, আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রাও। তবে ক্যাম্পে ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।

সরজমিনে দেখা যায়, উখিয়ার কুতুপালংস্থ মধুরছড়া ক্যাম্পের বাজার। যেখানে মানা হচ্ছে না কোন সামাজিক দূরত্ব। ব্যবহার হচ্ছে না মাস্ক কিংবা হাত গ্ল্যাভসের। জড়ো হয়ে বাজার করছে শত শত রোহিঙ্গা। একই অবস্থা লম্বাশিয়া ক্যাম্পে। প্রথম করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়া রোহিঙ্গার ঘর ও আশপাশের এলাকায় টাঙ্গানো হয়েছে লাল পতাকা। কিন্তু সেখানেও রোহিঙ্গারা মানছেন না কোন নির্দেশনা। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দিনরাত মাইকিং করে যাচ্ছে পুলিশ।

এদিকে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দ্দৌজা বলেন, উখিয়ার কুতুপালংস্থ ১ ওয়েষ্ট এফ ব্লকে ১২৭৫ পরিবার, ২ ওয়েষ্ট ডি ব্লকে ২০ পরিবার ও ১ ওয়েষ্ট সি ব্লকে ১২ পরিবার ঘর লকডাউন করা হয়েছে। এই ১৩০৭ পরিবারে অন্তত ৬ হাজার বেশি রোহিঙ্গা অবরোধের আওতায় পড়েছে। আক্রান্তদের একজনকে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন মেডিসিন স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) হাসপাতালে রাখা হয়েছে। বাকিদেরও ইউএনএইচসিআর পরিচালনাধীন আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অবরুদ্ধ ঘোষিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ওই এলাকায় এনজিও সংস্থার কর্মিসহ সাধারণ রোহিঙ্গাদের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে প্রায় ৭ হাজার একর পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করছে ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গারা। স্থান ও সীমাবদ্ধতার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না ক্যাম্পে। ৯০ শতাংশ রোহিঙ্গা করোনা ভাইরাস নিয়ে অসচেতন হলেও ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা কিন্তু সচেতন রয়েছেন। কিন্তু ক্যাম্পে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ায় অনেক রোহিঙ্গা রয়েছেন ভয়ে।

উখিয়ার মধুরছড়া ক্যাম্প-৪ এর বাসিন্দা মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ক্যাম্পে দুইজন করোনা ভাইরাস রোগী পাওয়া গেছে শুনা যাচ্ছে। তারপর থেকে আমাদের বেশি ভয় লাগছে। কিন্তু কিছুই করার নেই চলাফেরা করতে হচ্ছে। কিন্তু দ্রুত বাজারে গিয়ে যা যা নেওয়ার, তা দ্রুত নিয়ে বাসা চলে আসি। ঘন ঘন হাত ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে থাকি। তারপর ভয় লাগছে এখন কি করব।

উখিয়ার মধুরছড়া ডি-৭ এর বাসিন্দা শফি উল্লাহ বলেন, করোনা ভাইরাস একটি মারাত্মক রোগ। তাই সরকার ও এনজিওগুলো আমাদের মাস্ক, হাত গ্লাভস ও হাত পরিষ্কার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে থাকতে বলছে। এগুলো অন্য রোহিঙ্গাদেরও বলছি আমরা। কিন্তু এখানে শতকরা ১০ জন বিষয়টি মানছে আর ৯০ শতাংশ রোহিঙ্গা মানছে না।

এদিকে ক্যাম্পে রোহিঙ্গার মাঝে করোনা শনাক্ত হওয়ায় স্থানীয়রাও রয়েছে চরম আতংকের মধ্যে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নেওয়ার শঙ্কায় স্থানীয়রা।

কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা মাহিদুর রহমান মাহী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখন আতঙ্ক বেড়ে গেছে। কারণ রোহিঙ্গা যদি করোনা আক্রান্ত হয়ে ক্যাম্পের বাইরে চলে এসে স্থানীয়দের সাথে মিশে যায় তাহলে করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ জুনাইদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প খুব বেশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখন রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের আতংকের শেষ নেই। তাই প্রশাসন ও এনজিওদের উচিত এই রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে যেতে না পারে এই ব্যবস্থা করা। একই সাথে রোহিঙ্গাদের করোনা চিকিৎসা দেয়ার জন্য ক্যাম্পের ভেতরে চিকিৎসা ব্যবস্থা করা।

রোহিঙ্গাদের মধ্যে কিভাবে করোনা ছড়িয়েছে তা নিশ্চিত হতে পারেনি প্রশাসন। তবে ক্যাম্পগুলোতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দ্দৌজা।

তিনি বলেন, ক্যাম্পে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার কারণে গত আড়াই মাস কোন করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে গত ৩ দিনে ৪ রোহিঙ্গার করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদেরকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে এবং পরিবারগুলোকে পৃথক করে বিশেষ নজরদারি রাখা হয়েছে। এছাড়াও ক্যাম্পে যাতে করোনা ব্যাপকহারে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ১৯০০ বেডের আইসোলেশন ইউনিট তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১২০০ প্রস্তুত রয়েছে। দুই শতাধিক চিকিৎসক ও সহস্রাধিক নার্স সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে রামু সেনানিবাসের পক্ষে থেকে জানানো হয়, করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে বৃহত্তম রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরসমূহ। এ পরিস্থিতিতে উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় ১১ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ৩৪টি ক্যাম্পে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করছে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যরা। করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার আগে থেকেই সেনা সদস্যরা সচেতনতামূলক তৎপরতা পরিচালনা করছে।



কক্সবাজার/সুজাউদ্দিন রুবেল/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়