ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বন্যার পানিতে ভেসে গেছে মৎস্য খামারিদের স্বপ্ন

জাহিদুল হক চন্দন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ১১ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বন্যার পানিতে ভেসে গেছে মৎস্য খামারিদের স্বপ্ন

আল ইমরান খান, তার নিজের গড়ে তোলা মাছের খামারের আয় দিয়ে ভালই সংসার চালাচ্ছিলেন, সমৃদ্ধির নানা স্বপ্নও বুনছিলেন। সেই সঙ্গে আরও ১৫ জন শ্রমিকের জীবন-জীবিকাও নির্ভর ছিল এই তার খামারের ওপর। কিন্তু তার ইমরানের সেইসব স্বপ্ন আর বাকিদের জীবিকার উৎস ভেসে গেছে বন্যার পানিতে।পানিতে ভেসে গেছে ৫টি পুকুরের প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ। সব হারিয়ে এখন ইমরান সর্বশান্ত, শ্রমিকরা উপার্জনহীন।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের বাঘিয়া এলাকার বাসিন্দা আল ইমরান খান। তার মতোই জেলার ৩ হাজার ৪৯৬ জন মৎস্য খামারির স্বপ্ন ভেসে গেছে বন্যার পানিতে।

আল ইমরান খান বলেন, ‘কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি বন্যার পানিতে সাজানো খামারটি শেষ হয়ে যাবে। প্রায় ৬০০ শতাংশ জমির ওপর ৫টি পুকুরে পোনা এবং বড় মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছোট-বড় সব ধরেনের মাছই ছিল এসব পুকুরে। বেশিরভাগ পুকুরের তেলাপিয়া মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। আর মাত্র ১৫ দিন পর বাজারে বিক্রি করবো বলে স্বপ্ন দেখেছি। সে স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে গেলো।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, সারা জেলায় ৪ হাজার ৯১৬টি মৎস্য খামার বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে করে ২ হাজার ১৬৪ দশমিক ১০ মেট্রিক টন মাছ এবং ৩৭৮ দশমিক ৪০ মেট্রিক টন পোনা ভেসে গেছে। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৯২ হাজার টাকার। সব মিলিয়ে এবারের বন্যায় মৎস্য খামারিদের ৪২ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার টাকার হয়েছে।

আল ইমরান খানের মতো হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের কান্ঠাপাড়া এলাকার দেওয়ার আব্দুর রব বলেন, ‘কৃষি ব্যাংক থেকে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে মৎস্য খামার করেছি। ১৫০ শতাংশ জমিতে ২টি পুকুরে নলা, কাতল এবং মৃগেল মাছের পোনা ছেড়েছিলাম। সেগুলো  ৮/৯ ইঞ্চির মতো বড় হয়েছিল। আর কিছুদিন পর এগুলো বাজারজাত শুরু করা যেতো। প্রায় ৪ লাখ টাকার পোনা চোখের সামনে বানের পানিতে ভেসে গেছে। এখন তো পথে বসা ছাড়া আর উপায় দেখছিনা। ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবো, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সরকারি কোন সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া গেলে হয়তো একটু ভাল হতো।’

একই অবস্থা সদর উপজেলার নবগ্রাম এলাকার বাদশাহ মিয়ার। প্রায় ৪ বিঘা জমির ১০টি পুকুরে মাছ বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৩৫ মণ ছোট-বড় মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে করে প্রায় ৮ লাখ টাকার ক্ষতিতে পড়েছেন বলে জানান তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. মুনিরুজ্জমান জানান, চলতি বছরের বন্যায় জেলার ৭টি উপজেলাতেই খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বেশিরভাগ পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। সারা জেলার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। যদি সরকারি কোন প্রণোদণা পাওয়া যায়, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের দেওয়া হবে।

মানিকগঞ্জ/সাজেদ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়