ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সংস্কার হচ্ছে নীলকরদের অত্যাচারের নিদর্শন ‘ভাটপাড়া নীলকুঠি’

মহাসিন আলী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ২০ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৩:৪৯, ২০ নভেম্বর ২০২০
সংস্কার হচ্ছে নীলকরদের অত্যাচারের নিদর্শন ‘ভাটপাড়া নীলকুঠি’

নীলকররা দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে বহু বছর আগে। এলাকার কৃষক ও মজুরের ওপর তাদের অত্যাচার ছিলো সীমাহীন।  কালের সাক্ষী হয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে দাঁড়িয়ে আছে নীলকরদের শাসন ও শোষণের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত কিছু নীলকুঠি।

মেহেরপুর জেলায় রয়েছে নীলকরদের এ রকম দু'টি স্থাপনা। একটি মেহেরপুর সদর উপজেলার ‘আমঝুপি নীলকুঠি’। অপরটি গাংনী উপজেলার ‘ভাটপাড়া নীলকুঠি’। ‘আমঝুপি নীলকুঠি’ ইতোমধ্যে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে সংস্কার শেষে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। অযত্ন, অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলুপ্তির পথে থাকা ভাটপাড়া স্থাপনাটি অবশেষে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

গাংনী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ভগ্নপ্রায় ঐতিহাসিক এই কুঠিবাড়িকে ঘিরে ডিসি ইকোপার্ক হিসেবে এলাকাটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। নীলকুঠি ভবনটি সংস্কারের জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড থেকে ২০১৮ সালের জুনে ত্রিশ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। কিন্তু প্রশাসনিক কিছু জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন দরপত্র আহবান করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় জটিলতার অবসান ঘটিয়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এরপরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কারিগরি নির্দেশনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কাজটি শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গিয়ে দেখা যায়, ভগ্নপ্রায় নীলকুঠির দ্বিতল ভবনটির বেশির ভাগ দেয়াল সংস্কার করা হয়েছে। প্রথম তলার বিলুপ্ত ছাদ টালি ও চুন-সুড়কি দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভবনের দ্বিতীয় তলার ক্ষতিগ্রস্ত ছাদ মেরামতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ভবনে নতুন করে দরজা-জানালা সংযোজনের প্রস্তুতিও দৃশ্যমান রয়েছে। সংস্কারের কাজটি বাস্তবায়ন করছেন মেহেরপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বারী এন্টারপ্রাইজ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা হলে তারা জানান- কুঠিবাড়ির এ সংস্কার কাজটা আমাদের এলাকার উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে।  ভবনটি সংস্কার সম্পন্ন হলে দর্শনাথীদের পদচারণায় এলাকা মুখরিত হবে। এই নীলকুঠি দেখতে জেলার বাইরে থেকেও দর্শনার্থী ঘুরতে আসবেন। 

ইতোমধ্যেই কিছু দর্শনার্থী এখানে আসতে শুরু করেছেন। কুষ্টিয়া থেকে আসা দর্শনার্থী ওমর ফারুক বলেন, নীলকরদের অত্যাচারের কথা বইয়ে পড়েছিলাম। দু’বছর আগে একবার এই ডিসি ইকোপার্কে এসেছিলাম তখন ভবনটি একবারেই ভাঙা ছিলো। এবার এসে দেখছি ভবনটি সংস্কার চলছে। ভবনটির সংস্কার কাজ শেষ হলে নীলকুঠি তার পুরানো রূপ ফিরে পাবে। তখন এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরো বাড়বে।

গাংনীর সাহারবাটি ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বলেন, ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী নীলকুঠিগুলো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের এগিয়ে আসা উচিত। নইলে অচিরেই হারিয়ে যেতে পারে দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা। ভাটপাড়া নীলকুঠি ভগ্নপ্রায় ভবনটি সংস্কার এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছিলো। ইতিহাসের স্মারক নিজ চোখে দেখার অনুভূতি আসলে অবর্ণনীয়।

নীলকুঠি সংস্কার কার্যক্রমের তত্ত্বাবধায়ক গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, কাজটির জন্য সাড়ে আটাশ লাখ টাকায় টেন্ডার হয়েছে। কঙ্কালে পরিণত হওয়া ভবনটির দরজা-জানালা, কড়িকাঠ, বর্গা কিছুই ছিল না। আমরা কোনো কিছু সংযোজন বা বিয়োজন না করে পুরাতন আদল অক্ষত রেখে যতদূর সম্ভব কাজ করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগের মতোই চুন, সুড়কি ও টালি ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত কাজ করা হচ্ছে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর.এম সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন, বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে কাজ করা হচ্ছে। ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। পরবর্তীতে আবারো কোন বরাদ্দ পাওয়া গেলে নীলকুঠি ভবনের অধিকতর সংস্কার ও নীলকুঠি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ভবনের পুরনো অবয়ব ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করা হবে।

মেহেরপুর/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়