ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে সরকারি অফিসগুলোয় বন্ধ হয়নি গ্রাহক হয়রানি

বাদশাহ্ সৈকত, কুড়িগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০০, ১৫ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১২:২৪, ১৫ জানুয়ারি ২০২১
কুড়িগ্রামে সরকারি অফিসগুলোয় বন্ধ হয়নি গ্রাহক হয়রানি

কুড়িগ্রামে বেশিরভাগ সরকারি অফিসে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা কমেগেছে। একই সঙ্গে কমেগেছে সেবা প্রার্থীদের হয়রানী। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে অফিসগুলোতে অনলাইনে সেবা প্রদান কার্যক্রম চালু হয়েছে। এতে সেবা গ্রহীতারা হয়রানী থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

তবে ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন প্রদান ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কিছুটা হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিশুদের জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করায় তা অনলাইনের মাধ‌্যমে করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন প্রতিটি জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রিন্ট খরচ বাবদ ২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। তবে বেশিরভাগ ইউনিয়নে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা করে। টাকা না দিলে বিভিন্ন কাগজপত্রের অজুহাতে সেবাপ্রার্থীদের হয়রানী করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সরকারপাড়া গ্রামের ফরিদ মিয়া জানান, মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার জন‌্য জন্ম নিবন্ধন নিতে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে যান। তার নিজের কোনো সার্টিফিকেট না থাকায় বয়স নির্ধারণের জন্য ডাক্তারি সার্টিফিকেট নেওয়ার কথা বলা হয়। ডাক্তারি সার্টিফিকেট দিতে না পারলে ৩৫০ টাকা দিতে বলে।

তিনি বলেন, ‘আমার জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স থাকার পরও বয়স নির্ধারণের জন্য ডাক্তারি সার্টিফিকেটের প্রয়োজনে শহরে ডাক্তারের চেম্বারে চেম্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি।’

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের কাছে হয়রানী ও টাকা চাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার কাছে কোনো টাকা চাওয়া হয়নি। শুধু অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজনে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বয়স নির্ধারণে এমএমবিএস চিকিৎসকের প্যাডে লিখিত চাওয়া হয়েছে।’

রৌমারী উপজেলার বাসিন্দা মোস্তাফিজার রহমান তারা জানান, সার্ভার সমস্যার কথা বলে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই জন্ম নিবন্ধন নিতে আসা লোকজনকে হয়রানী করা হচ্ছে। প্রতিটি জন্ম নিবন্ধনের জন্য ৩০০ টাকা দাবি করা হচ্ছে। যারা টাকা দিতে পারছেন না, তাদেরকে সার্ভার সমস্যার কথা বলে হয়রানী করা হচ্ছে। আর যারা টাকা দিচ্ছেন, তাদের কাজ করে দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে সরেজমিনে জেলা শহরে অবস্থিত সরকারি অফিসগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পরও কোনো সেবা গ্রহীতার দেখা পাওয়া যায়নি। যদিও এই অফিসে পাসপোর্ট প্রার্থীদের ভীড় ও দালালদের মাধ্যমে সেবা গ্রহীতাদের হয়রানীর কথা প্রায়ই শোনা যায়।

পরে কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মোত্তালেব সরকারের সঙ্গে তার অফিস কক্ষে কথা হয়।

তিনি বলেন, ‘এখানে আমি আসার আগে কিছু দালালের মাধ্যমে সেবা গ্রহীতারা হয়রানীর শিকার হয়েছিলেন। এটা জানার পর আমি বাইরে অফিসের একজনকে সার্বক্ষণিক ডিউটিতে রেখেছি, যাতে কোনো দালাল প্রবেশ করতে না পারে। তাছাড়া বর্তমানে সবকিছু অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় যে কেউ বাইরে থেকে শর্তপূরণ করে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিলেই তারা সময়মত পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্থিত পর থেকে পাসপোর্ট করতে আসা মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। কোন কোন দিন পাঁচ থেকে ছয়টা পর্যন্ত আবেদন জমা পড়ছে। কোন কোন দিন তার চেয়েও কম।’

অন্যদিকে, জেলা বিআরটিএ অফিসে গেলে সেখানেও প্রায় একই চিত্র দেখা যায়। দুজন মোটরসাইকেল বিক্রেতা ডিলার আর ৪/৫ জন সেবা গ্রহীতাকে সেখানে দেখা গেলো। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো অভিযোগ করেননি। 

বিআরটিএর কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. আলতাব হোসেন বলেন, ‘কুড়িগ্রাম ও লালমিনহাট জেলা আমার দায়িত্বে। আমি এক জেলায় দুই দিন করে অফিস করছি। মূলত জনবল সংকটের কারণে কাজ জমা পড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এখন আর আগের মতো অবস্থা নেই। এখন মোটরসাইকেলের শোরুম থেকেই ক্রেতাদের তথ্য পূরণ করে ডিলাররাই অনলাইনে আবেদন করতে পারছেন। ফলে সেবা প্রার্থীরা দ্রুততম সময়ে সেবা পাচ্ছেন। তবে এখনও অনেকে অনলাইনে সেবা নেওয়ার বিষয়টি জানেন না। তারা কিছুটা হয়রানীর শিকার হচ্ছে।’

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, সরকারি অফিসে সেবা প্রার্থীরা যাতে হয়রানীর শিকার না হয় সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তাছাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তফসিলদার ও ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের নিয়ে একাধিকবার হয়রানী ছাড়াই গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

কুড়িগ্রাম/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়