ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘ফাইলা পাগলার মেলা’ শুরু হওয়ার আগেই মাদকের ছড়াছড়ি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৯, ১৫ জানুয়ারি ২০২১  
‘ফাইলা পাগলার মেলা’ শুরু হওয়ার আগেই মাদকের ছড়াছড়ি

আগামী ২৪ জানুয়ারি (রোববার) থেকে টাঙ্গাইলের সখীপুরে ফালু চান ওরফে ফাইলা পাগলার মেলা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা দাড়িয়াপুর গ্রামে প্রতি বছর মেলাটি বসে। মেলা শুরু হওয়ার আগেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তার অনুসারিরা আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ‌্যে মেলাকে ঘিরে শুরু হয়েছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। 

অভিযোগ রয়েছে, মেলা কমিটির ছত্রছায়ায় এ বাণিজ‌্য চলছে। মেলা প্রাঙ্গণে হাত বাড়ালে সহজেই মিলছে মাদক। মাদক সরবরাহকারী একটি চক্র রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব করে চলেছে।

স্থানীয়রা জানান, হযরত শাহ্ সূফি ফালু চান ওরফে ফাইলা পাগলের নামে বিগত ৭১ বছর ধরে ফাইলা পাগলের মেলা চলছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত পাগল এখানে এসে মিলিত হন। হাজার হাজার ভক্ত-আশেকান ও সাধারণ মানুষ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানত নিয়ে মেলায় আসেন। ভক্তরা নিজেরা রান্না করে নিজেরা খাওয়া-দাওয়া করেন এবং পাগলের মাজারে দান-খয়রাত করেন। 

পাগলের নামে মানত করলে মনের বাসনা পূরণ হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এ মেলার কথা কউকে জানাতে হয় না, কোনো জাকেরও নাই। মানুষ নিজ ইচ্ছায় আসে, মানত খেয়ে চলে যায়। 

২০০৩ সালে এ মেলায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় মেলার খাদেমসহ নয় জন মারা যান। পরে বোমা হামলাকারীদের দুজন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যায়। মেলায় বোমা হামলার পর ৩-৪ বছর ফাইলা পাগলার মেলা জমেনি। তবে ধীরে ধীরে আবার জমে উঠছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মেলা থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা আয় হলেও পাগলের মাজারে সেই তুলনায় তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। আয়োজক কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। আবার সখীপুর উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে মেলাস্থল হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো নজরদারি করা হয় না। মেলা শুরু হলে থানা পুলিশের কিছু সদস্য দেওয়া হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তারা দয়িত্ব পালন করেন। 

অভিযোগ রয়েছে মেলা কমিটির ছত্রছায়ায় মেলা ও আশেপাশে এলাকায় ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, প্রভৃতি মাদকে ছেয়ে যাচ্ছে। এসব মাদকদ্রব্যের বেশির ভাগ ক্রেতাই হচ্ছে দূরদূরান্ত থেকে আসা ফাইলা পাগলার ভক্ত ও স্থানীয় যুবক। এখানে গাঁজা বা মদ এখন অনেকটা ভাত-মাছের মতো সহজলভ্য হয়ে গেছে। ছোট থেকে শুরু করে যুবকদের মধ্যে বেশির ভাগ ছেলেই মাদক গ্রহণ করছে। 

টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে আসা মহর আলী বলেন, ‘মানুষের কাছে শুনে এখানে এসেছি। এসে মাজার জিয়ারত করেছি। এখানে আসলে কী লাভ বা কী ক্ষতি হয় সেটা আমার জানা নেই। আমার মাজারটি দেখতে ইচ্ছে ছিলো তাই পূরণ করলাম।’

জামালপুরের ইসলামপুর থেকে আসা আত্তা বাবা বলেন, ‘এখানে আমি ৩২ বছর ধরে আসি। প্রায় মাস খানেক থাকি। প্রকাশ্যে মাদক সেবন করলে কেউ কিছু বলে না। বরং আমার মতো পাগল যারা আছে তারা সহযোগিতা করে। হাত বাড়ালেই এখানে গাঁজাসহ সবই পাওয়া যায়। তাই আমাদের কিনতে তেমন কষ্ট হয় না।’

কলেজ শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রানা বলেন, ‘আমরা ছয় বন্ধু মির্জাপুর থেকে এখানে ঘুরতে এসেছি। এখানে বেশির ভাগ মানুষ প্রকাশে গাঁজাসহ মাদক সেবন করছে। এ মাজারের মতো অন্য কোনো মাজারে মাদক সেবন করতে আমি দেখিনি।’

স্থানীয় রেজাউল করিম বলেন, ‘মাজার কমিটির ছত্রছায়ায় এই গ্রামের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা এখানে গাঁজা, ইয়াবা, মদসহ নানা ধরনের মাদক বিক্রি করে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো সুরাহা পাওয়া যায়নি। আমি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখানে কোনো মাদক সেবন ও বিক্রি হয় না। মাদক ব্যবসার সাথে কমিটির কেউ জড়িতও নয়।’

মসজিদের ইমাম জুবায়ের বলেন, ‘মাজারে গিয়ে যেভাবে মানুষ ভক্তি ও মানত করে তা কবীরা গুনাহ। যে উদ্দেশ্যে যাই করা হোক, ইসলামে তা সম্পূর্ণ নিষেধ। সুস্থ জ্ঞানে এ কাজ করা ঠিক নয়।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহীন বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা লোকজন মাদক সেবন করে। এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হলেও আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’

এ প্রসঙ্গে সখীপুর থানার ওসি সাইদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কাওছার/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়