ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সুন্দরবনে বারবার আগুন: ১৫ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি সুপারিশ

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ০৯:২৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
সুন্দরবনে বারবার আগুন: ১৫ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি সুপারিশ

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে গত ২০ বছরে ২৪ বার আগুন লেগেছে। আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান ও ভবিষ্যতে অগ্নিকাণ্ড এড়াতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ ১৫ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। 

বন সংলগ্ন এলাকার সচেতন মহল ও পরিবেশবিদদের দাবি, সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হওয়ার পরও প্রতিকার না হওয়ায় থামছে না বনের আগুন।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনে ২০০২ সালে কটকা এলাকায় এক বার, নাংলী ও মান্দারবাড়িয়া এলাকায় দুই বার, ২০০৫ সালে পচাকোরালিয়া, ঘুটাবাড়িয়ার সুতার খাল দুই বার, ২০০৬ সালে তেরাবেকায়, আমুরবুনিয়া, খুরাবাড়িয়া, পচাকরালিয়া ও ধানসাগর এলাকায় পাঁচ বার, ২০০৭ সালে পচাকোরালিয়া, নাংলি ও ডুমুরিয়া এলাকায় তিন বার, ২০১০ সালে গুলশাখালী একবার, ২০১১ সালে নাংলিতে দুইবার, ২০১৪ সালে গুলশাখালীতে এক বার, ২০১৬ সালে নাংলি, পচাকোরালিয়া ও তুলাতুলিতে তিন বার, ২০১৭ সালে মাদ্রাসা ছিলায় এক বার এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকায় সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) আগুন লেগে চার শতক বনভূমি পুড়ে যায়। 

বন বিভাগের হিসেব মতে ২৪ বারের অগ্নিকাণ্ডে ৭১ একর ৬৬ শতাংশ বনভূমির ক্ষতি হয়েছে। যার আনুমানিক আর্থিক মূল্য ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৩ টাকা।

 অগ্নিকাণ্ডের পরে কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি নির্দিষ্ট সময়ে সুপারিশসহ রিপোর্টও পেশ করে। তবে সেসবই থেকে যায় ফাইল বন্দি।

অগ্নিকাণ্ডের পরে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে আগুন লাগার কারণ হিসেবে মৌয়ালীদের ব্যবহৃত আগুনের কুন্ডলী, জেলেদের সিগারেট, দাবদাহ, অনাবৃষ্টি, খরা, বন অপরাধে সাজা প্রাপ্তদের প্রতিশোধ মূলক ব্যবস্থা, দুস্কৃতকারীদের দ্বারা উদ্দেশ‌্যমূলকভাবে বনের মধ্যে আগুন লাগিয়ে দেওয়াকে দায়ী করা হয়। আগুনের স্থায়ীত্বের কারণ হিসেবে বিভিন্ন গাছের পাতার পুরু স্তরকেও দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি।

অগ্নিকাণ্ড এড়াতে বিভিন্ন সময় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জোরালোভাবে তিনটি সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ের সঙ্গে মিশে যাওয়া নদী ও খাল খনন, অগ্নিকাণ্ড প্রবন এলাকায় প্রতি দুই কিলোমিটার পর পর ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করে নজরদারির ব্যবস্থা করা এবং চাঁদপাই রেঞ্জের ভোলা নদীর কোল ঘেঁষে বনের পাশ দিয়ে কাঁটাতার অথবা নাইলনের রশির নেট দিয়ে বেড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু এই তিনটির একটিও বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে অবাধে বনের মধ্যে ঢুকে পড়ছে মৌয়ালী, বাওয়ালী, বনজীবী ও স্থানীয়রা। 

বন সংলগ্ন এলাকার সচেতন মহলের দাবি- কিছু অসাধু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বনের মধ্যে মাছ ধরার জন্য বনের মধ্যে আগুন ধরানো হয়। সেখানেই পরবর্তীতে জাল পেতে মাসোয়ারা দিয়ে মাছ ধরে জেলেরা। এসব কারণে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সুন্দরবনে।

শরণখোলায় সুন্দরবন সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম আকন বলেন, ‘পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে সুন্দরবন নজরদারিতে ব্যাঘাত ঘটে। সুন্দরবনে আগুন লাগা বন্ধ করতে হলে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি বন সংলগ্ন এলাকায় সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন সময় বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ওঠে, তার সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ 

‘সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’-এর চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরবনে আগুন লাগার ঘটনায় বন বিভাগ যে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করেছে, তা সামান্য। আমি মনে করি, বনভূমি পুড়ে যে ক্ষতি হয়েছে তা কয়েকগুণ বেশি। বনবিভাগ তাদের অভ্যন্তরীণ কমিটি দিয়ে তদন্ত করেছে। তাদের স্বার্থেই ক্ষতিপূরণ কম দেখানো হয়েছে। প্রত্যেকটি আগুনের ক্ষতিপূরণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা উচিত। সুন্দরবনকে সুরক্ষা করতে হলে লোকালয় সংলগ্ন নদী-খাল খনন ও কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া এখন সময়ের দাবি। এছাড়া বন অপরাধীদের দৌরাত্ম রোধ ও অসাধু বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও প্রয়োজন।’

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আগুন লাগার বিষয়ে আমাদের তদন্ত কমিটির যে সুপারিশ রয়েছে- তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সুপারিশ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করছি অচিরেই এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হবে। অবাধে সুন্দরবনে প্রবেশের দ্বার বন্ধ হবে। এছাড়া জনবল সংকটের বিষয়টিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

বাগেরহাট/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়