ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে অবৈধ ইটভাটার সংখ‌্যা ১৫৮, হুমকিতে পরিবেশ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ০৭:৪৪, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
টাঙ্গাইলে অবৈধ ইটভাটার সংখ‌্যা ১৫৮, হুমকিতে পরিবেশ

সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে টাঙ্গাইলে অবৈধভাবে চলছে ১৫৮টি ইটভাটা। ১২টি উপজেলা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এসব ইটভাটা। এসব ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরেরও কোনো ছাড়পত্র নেই। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। 

প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ ইটভাটাগুলোকে আর্থিক জরিমানা করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না এসব অবৈধ ইটভাটা। 

টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় ২৮৫টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১২৭টি ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র আছে। বাকি ১৫৮টি ইটভাটা অবৈধভাবে চলছে। 

এগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় তিনটি ইটভাটাই অবৈধ। দেলদুয়ারে দুটি ইট ভাটার মধ্যে একটি বৈধ, আরেকটি অবৈধ। কালিহাতীতে ১৩টি ইটভাটার মধ্যে তিনটি বৈধ, ১০টি অবৈধ। বাসাইলে নয়টি ইটভাটার মধ্যে দুটি বৈধ, সাতটি অবৈধ। ভূঞাপুরে ছয়টি ইটভাটার মধ্যে একটি বৈধ পাঁচটি অবৈধ। সখিপুরে আটটি ইটভাটার মধ্যে তিনটি বৈধ পাঁচটি অবৈধ। 

গোপালপুরে ছয়টি ইটভাটার মধ্যে তিনটি বৈধ, তিনটি অবৈধ। মধুপুরে ২০টি ইটভাটার মধ্যে একটি বৈধ, ১৯টিই অবৈধ। নাগপুরে ২২টি ইটভাটার মধ্যে ১৩টি বৈধ, নয়টি অবৈধ। ধনবাড়ীতে ২০টি ইটভাটার মধ্যে দুটি বৈধ, ১৮টি অবৈধ। মির্জাপুরে ১০৮টি ইটভাটার মধ্যে ৭৬টি বৈধ, ৩২টি অবৈধ। ঘাটাইলে ৬৮টি ইটভাটার মধ্যে ১৯টি বৈধ, ৪৯টি অবৈধ।

এসব ইটভাটার কয়েকটিতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে দেদারছে। এছাড়াও ফসলি জমির উর্বর মাটি এবং পাহাড়ের টিলা কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে ভাটাগুলোতে। যা একেবারেই অবৈধ।

‘সবুজ পৃথিবী’র সাধারণ সম্পাদক সহিদ মাহমুদ বলেন, ‘বনের আশে পাশের অবৈধ ইটভাটাগুলোর কারণে পশুপাখির প্রজননের সমস্যা হয়। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা নানা রোগে আক্রান্ত হয়। অপর দিকে আবাসিক এলাকায় ইটভাটা থাকলে গাছের ফল ও ফুল হয় না। বায়ু দূষণের পাশাপাশি শিশু ও নারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। তাই অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আঞ্চলিক প্রধান গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘বায়ু দূষণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়াও অবৈধ ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে।’

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদেও সাবেক ডিন অধ্যঅপক ড. এএসএম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আমরা বৈধ ইটভাটার পক্ষে আর অবৈধ ইটভাটার বিপক্ষে। ইটভাটায় কয়লা পোড়ানোর নিয়ম থাকলেও কর্তৃপক্ষ কাঠ পোড়াচ্ছে। এতে বন উজার হচ্ছে। এছাড়াও ফসলি জমির ওপরের উর্বর মাটি ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে। রাষ্ট্র এসব অবৈধ কাজ করতে কোনো ইটভাটা মালিককে অনুমতি দেয়নি।’

টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ১৯টি অবৈধ ইটভাটাকে ৮৭ লাখ টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও অবৈধ ইটভাটাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

কাওছার/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়