অনিশ্চিত তাদের ভবিষ্যৎ
‘আগুন তুই আমারে নিলি না কেন? পরিবারের সবাইকে সুখে রাখতে যে রাতদিন পরিশ্রম করেছে, তাকে কেড়ে নিলি! দুই শিশুর ভবিষ্যৎ নিভিয়ে দিলি কেন। আল্লাহ গো, এখন তারা কার ছায়ায় জীবন সাজাবে? কার পরিচয়ে মানুষ হবে?’
গত ১২ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) অবুঝ দুই শিশু ছেলেকে নিয়ে বুক চাপড়ে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুরের টেপিরবাড়ি গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী সালমা আক্তার।
আলমগীর হোসেন (৩৫) শ্রীপুর পৌর এলাকার উজিলাব গ্রামের তাইজ উদ্দিনের ছেলে। এএসএম কেমিক্যাল কারখানায় মেশিনের হেলপার হিসেবে কাজ করতেন তিনি। কারখানায় আগুন লাগার ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। তার দুই ছেলে ইয়াসিন মাহমুদ (১৪) ও সাওয়াদ মুত্তাকী (৩)।
পুলিশ জানিয়েছে, ডিএনএ রিপোর্ট আসার পর নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হলে তারপর আলমগীরের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
নিহত আলমগীর হোসেনের ভাই জানান, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে নিজ সাইকেলে চড়ে কর্মস্থলে যান আলমগীর হোসেন। দুপুরের দিকে পরিবারের সঙ্গে মোবাইলে কথাও হয় তার। বিকেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তারপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ করা যায়নি তার মোবাইলে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে রাত ১০টার দিকে একটি লাশের সংবাদ পান তার স্বজনরা। লাশটি পুড়ে কঙ্কাল হয়ে গিয়েছিল। কঙ্কাল দেখে তাকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরে কারখানার ভেতর বাইসাইকেল দেখে লাশটি আলমগীর হোসেনের বলে শনাক্ত করেন তার স্ত্রী।
উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি তার ছেলে দুটির পুরো দায়িত্ব নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে নিহত আলমগীরের পরিবারের পক্ষ থেকে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, সেদিনের আগুন লাগার ঘটনায় ওই রাতে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে ডিএনএ রিপোর্টের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। একটি পরিবার মরদেহটির স্বজন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে। ডিএনএ রিপোর্ট অনুযায়ী তার পরিচয় সনাক্তকরণের পর যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় পরিবারের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হবে।
তিনি বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। কমিটিকে পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। আজ শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।’
১১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুরের টেপিরবাড়ি গ্রামে এএসএম কেমিক্যাল কারখানায় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মেশিনে বিস্ফোরণের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এক জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ১৪ জন।
গাজীপুর/সনি