ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘আলোর ফেরিওয়ালা একজন ফকরুল’

শাহীন আনোয়ার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১১:৫৩, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
‘আলোর ফেরিওয়ালা একজন ফকরুল’

ফখরুল আলমের বয়স ৭৯ বছর। সাত সন্তানের এই বৃদ্ধ বাবার কাঁধে এখনও সংসারের ভার।

স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই হার্টের রোগী। মাঝে মধ্যেই চিকিৎসকের দারস্থ হতে হয়। ওষুধ কিনতে গিয়ে এমনিতেই তারা হিমশিম খান। এরপর আবারও ছোট তিন ছেলে-মেয়ের লেখা পড়ার খরচ তো আছেই।

এমন পরিস্থিতিতে জীবিকার জন্য এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটছেন বৃদ্ধ ফখরুল। বাইসাইকেল চালিয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন দিন প্রতি ২০ টাকায়।

ফখরুলের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বড়রিয়া গ্রামে। তিনি মৃত আবুল হাশেমের ছেলে।

জানা যায়, কোম্পানির অবসর সুবিধা দিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই নীতির কারণে কোম্পানির চাকরি ছাড়েন বৃদ্ধা ফকরুল। মিশে যান ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। এখানে তিনি পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের পড়ানোর সুযোগ নেন।

বৃদ্ধ ফখরুল বলেন, ‘কোম্পানির লোকজন গিভ অ‌্যান্ড টেক ছাড়া কিছুই বোঝে না। তারা আমাদের কষ্ট বোঝে না। বাচ্চাদের মধ্যে এতো পাপ স্পর্শ করে নাই। তাদের মধ্যে গিভ অ‌্যান্ড টেক নেই। তাই বাচ্চাদের পড়াই। তাদের কষ্ট বোঝার চেষ্টা করি। যারা টাকা দিতে পারে না তাদেরকে ফ্রিও পড়াই। আবার অনেকের কাছ থেকে ২০ টাকার কমও নিই।’

ফখরুল আরও বলেন, ‘তবে এখন আমার বয়স হয়েছে। তিন ছেলে ও এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তারা যার যার সংসার করছে। মেঝো ছেলে কিছু টাকা দেয় তা দিয়ে আমার ওষুধই হতে চায় না। বাধ্য হয়ে জীবিকার জন্য এখনও পড়াইতে চাই।’
মৌশা গ্রামের আলপনা খাতুন নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে মেয়েকে তার কাছে পড়াই। তার পড়ানোটা ভালো। আগে ছেলে মেয়েরা রিডিং পড়তে পারত না। এখন রিডিং পড়তে পারে। অংকও শিখেছে।’

ভ্যানচালক দেলোয়ার জোসেন বলেন, ‘আমি বাজার থেকে ২০ টাকার প্রাইভেট দেখে আমার মেয়েকে পড়াতে বলেছিলাম। যেদিন পড়াবো সেদিন ২০ টাকা দিতে হবে। যেদিন পড়াবো না সেদিন আর দেওয়া লাগবে না।’

বালিদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পান্নু মিয়া জানান,  ফখরুল স্যার আমাদের খুবই শ্রদ্ধার একজন মানুষ। তিনি অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে পড়ালেখা শিখিয়েছেন। অনেকে তার কাছে পড়ে অনেক ভালো ফলাফল করেছে।

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল জানান, সমাজে আলোর মশাল জ্বেলে যাচ্ছেন ফকরুল। সমাজ বিনির্মাণে তার অবদান অনস্বীকার্য।

মাগুরা/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়