ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মাছের আড়তে মানুষের জটলা, নেই মাস্ক

আরিফুল ইসলাম সাব্বির, সাভার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৯, ১৯ এপ্রিল ২০২১  
মাছের আড়তে মানুষের জটলা, নেই মাস্ক

ভোরের আলো ফোটার আগেই হাঁকডাকে জমে ওঠে বাইপাইল মাছের আড়তে। কঠোর লকডাউনের মধ্যে ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০-১১টা পর্যন্ত বাজার সরগরম থাকে লোকজনের আনাগোনায়। 

মাছের আড়ত লকডাউনের আওতামুক্ত থাকলেও কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াই দূর-দূরান্তের পাইকার ও আড়তের বিক্রেতা মিলেমিশে একাকার। হাত ধোঁয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজেশনের বালাই নেই, অধিকাংশের মুখে নেই মাস্কও। অনেকে মাস্ক ভরে রেখেছেন পকেটে, কেউ থুতনিতে আটকিয়ে, কেউবা আবার হাতে ঝুলিয়ে ঘুরছেন বাজারজুড়ে। 

যদিও বাজার কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে নিজেরা সজাগ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন। আর বিশাল এই বাজারে প্রশাসনের নজরদারি ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলেও জানান তারা।

কঠোর লকডাউন শুরুর প্রথম দিন থেকে সরেজমিন নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কঘেঁষা আশুলিয়া থানা মৎস্য ব্যবসায়ী মার্কেট ঘুরে স্বাস্থ্যবিধির অমান্যের এমন চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হলেও স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি একেবারে নজরে আসেনি উপজেলা প্রশাসনের।  

হাজী শাহাদাত হোসেনের আড়তে থাকা এক বিক্রেতাকে দেখা যায় জনসমাগমের মধ্যে মাস্ক ছাড়া মাছ বিক্রি করছেন। মাস্ক ছাড়া কেন আছেন- এমন প্রশ্নে হতচকিত হয়ে নানা অজুহাত দেখাতে শুরু করেন তিনি। বাজারে কয়েক হাজার লোক সমাগম হলেও তিনি বলেন, আগের চেয়ে পাইকাররা আসছে কম।  

এ সময় তিনি বলেন, ‘ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এই বাজারে মাছ বিক্রি হয়। আগের থাইকা পাইকার অনেক কম। যারা আশপাশের পাইকার এরাই শুধু আসতেছে। দূরের পাইকার আসতে পারতাছে না।’ 

মাস্ক না পরার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরে কথা বললে দূরের থেকে শুনতে পায় না। তাছাড়া লোকজন নাই, এখন ফাঁকা তাই।’

অনেকে আবার মাস্ক না পরার নানা অজুহাত দেখান। তবে করোনার ভয়াবহতার কথা জানালে ভুল স্বীকারও করেন। আড়তের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘মাছটা নামাইছিতো, সাজাইতেছি। মাস্ক পকেটে আছেতো। মাছের পানি ছিইট্টা আহে ময়লা মাইখা যায়। মাছে পানি ছিটে প্রচুর। এর জন্য খুইলা রাখছি।’

অনেক মানুষের মাঝে বসে মাস্ক ছাড়া টাকা গুনছিলেন দেলোয়ার হোসেন নামে আরেক আড়তদার। মাস্ক নেই কেন জিজ্ঞেস করতেই হতচকিয়ে যান তিনি। দ্রুত টেবিলের ওপর পড়ে থাকা সুতাবিহীন ছেঁড়া মাস্ক দেখিয়ে বিরুক্তির সুরে বলেন, ‘আরে ভাই ট্যাকা গুনতাছি। মাস্কতো এহানে থুইছি বোঝেন না ক্যা আপনে?’ 

আশুলিয়া থানা মৎস্য ব্যবসায়ী মার্কেটের ম্যানেজার মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি। সবাইকে সচেতন করছি। কিন্তু দেখা যায়, কিছু অসচেতন লোক থেকে যায়। যাদের কারণে সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছি।’  

বাজারে সচেতনতামূলক একটি ব্যানার লাগানো থাকলেও সেটি উল্টানো- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা দু-তিনটি ব্যানার লাগিয়েছি। সবাইকে বলা হয়েছে, মাস্ক ছাড়া কেউ মাছ বিক্রি করতে পাররে না। আর যারা বাইরে থেকে আসে, তাদের ওইভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেও পারি না।’ 

সাভার উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম  বলেন, ‘মাছ বাজার বিষয়টাই এমন, এখানে লোক সমাগম হবে। গত বছর লকডাউনের সময় আমরা বাজারগুলোকে উন্মুক্ত স্থানে নিয়ে যায়। এটা শুধু মৎস্য অধিদপ্তরের উপরে নির্ভর করে না। সেক্ষেত্রে উন্মুক্ত জায়গাটাও থাকতে হবে এবং সেখানে সবার সমন্বয়ে কাজটা করতে হবে। ঢাকার জেলার অন্যান্য জায়গায় যেমন নবাবগঞ্জ, দোহারে ওরা উন্মুক্ত জায়গায় বাজার নিয়ে গেছে। তবে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এখনও সাভারে এমন কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ইউএনওকে বলেছি, এখানে যে আড়তগুলো আছে, তা পুরোপুরি স্থানান্তর করা সম্ভব না। কিন্তু কোনোভাবে যদি ভিড়টা কমানো যায়। যেমন সকালে একদফা হলো আর বিকেলে একদফা। মানুষ অর্ধেক কমে গেলে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।’

সাভার উপজেলার আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের শীঘ্র আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে এবং হবে।’

/বকুল 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়