ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পানির জন‌্য হাহাকার

এইচ মাহমুদ, নরসিংদী  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ২ মে ২০২১   আপডেট: ১৮:১৯, ২ মে ২০২১
পানির জন‌্য হাহাকার

সাধারণ পাম্পেও পানি উঠছে না

নরসিংদীতে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নেমে যাওয়ায় গ্রীষ্মের শুরুতেই শহরাঞ্চলের বেশিরভাগ বাসা-বাড়ির সেচপাম্প ও নলকূপে পানি উঠছে না। কোথাও কোথাও গভীর নলকূপেও তোলা যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় পানি। তাপদাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকটও। এতে চরম দুর্ভোগ পড়েছেন শহরের বাসা-বাড়ির বাসিন্দারা। তারা বলছেন, সুপেয় ও ব‌্যবহারযোগ‌্য পানির জন‌্য দিনে দিনে হাহাকার বেড়েই চলছে। সমাধান কবে হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। 

জানা গেছে, নরসিংদী জেলায় সাধারণত পানির স্তর গড়ে ২২ থেকে ২৮ ফুট গভীরে। গ্রীষ্মকালে এই স্তর  নেমে যায় ২৮ থেকে ৩৫ ফুট নিচে। বেশিরভাগ এলাকায়ই এই স্তরের গভীরে পৌঁছালেই পানির স্তর পাওয়া যেতো। প্রায় এক যুগ ধরে জেলা শহর ও শিল্পাঞ্চলে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে গেছে। প্রতিবছর  জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত  এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করে।  

ভুক্তভোগীরা জানান, শুধু ৬১ মিটর গভীরতার অগভীর নলকূপে, শহর এলাকায় গভীর নলকূপেও  পানি উঠছে না। দেড়শ থেকে ২০০ ফুট গভীরেও পানির সন্ধান মিলছে না। এতে  পানি সংকট আরও বাড়ছে। আশেপাশের এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করে জীবনযাপন করছেন অনেকে। কেউ কেউ প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করছেন পুকুর কিংবা নদীর পানি। নিরাপদ পানির সুব্যবস্থা করা না গেলে, অদূর ভবিষ্যতে পানি সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। 

নরসিংদী শহরের পূর্ব ভেলানগর মহল্লার বাসিন্দা পারভেজ মিয়া বলেন, ‘অন্যান্য বছর সমস্যায় না পড়লেও এই বছর গরম শুরুর পর থেকে বাসার সেচপাম্পে পানি ওঠানো যাচ্ছে না। এতে বাড়ির ভাড়াটিয়াসহ নিজেরা বিপাকে পড়েছি। বাধ্য হয়ে ব্যয়বহুল গভীর নলকূপ (সাব-মার্সেবল) বসাতে হচ্ছে।’

নলকূপে উঠছে না পানি। দুর্ভোগে নরসিংদী শহরের বাসিন্দারা

সদর উপজেলার চিনিশপুর এলাকার ভাড়াটিয়া আবুল কাসেম বলেন, ‘৫ তলাবিশিষ্ট একটি ভবনে কয়েক বছর ধরে ভাড়া থাকি। এমন পানি সংকটে আর পড়িনি। প্রায় দুই সপ্তাহ টাসা পানি সংকটের কষ্টের পর বাসার মালিক নতুন করে আরও গভীর নলকূপ বসিয়েছেন।’

একই উপজেলার দগরিয়া ঝাড়তলা এলাকার সজিব সরকার ও আমিনুল হক বলেন, ‘প্রতি বছরই এই সময়ে টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। প্রয়োজন মেটাতে দূরবর্তী বিভিন্ন লোকজনের সাব-মার্সেবল (গভীর নলকূপ) থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়া অন্যান্য কাজের জন্য পুকুরের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। প্রতি বছরই এই পানি সংকট বাড়ছে। ব্যয়বহুল হওয়ায় সবার পক্ষে গভীর নলকূপ বসানোও সম্ভব হয় না। এই সংকট সমাধানে সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে উদ্যোগ নিতে হবে।’

এই সংকট সমাধানে করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (নরসিংদী) নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার সামসুল ইসলাম বলেন, ‘নরসিংদী শিল্পাঞ্চল হওয়ায় অতিরিক্ত ভূ-গর্ভস্থ পানি তোলা হয়। এছাড়া পরিবেশগত নানা কারণে গ্রীষ্মকালে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য হস্তচালিত টিউবওয়েলের পরিবর্তে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী গভীর নলকূপ (সাব-মার্সেবল পাম্প) বসানো হচ্ছে।  বৃষ্টি হলে এই সংকট কেটে যাবে।’

/এনই/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়