ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ভয়ঙ্কর করোনায় নাজুক খুলনা 

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৬, ১০ জুলাই ২০২১  
ভয়ঙ্কর করোনায় নাজুক খুলনা 

খুলনা বিভাগে মহামারি করোনা পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। প্রতিদিন করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের রেকর্ড ভাঙছে। দৈনিক মৃত্যু ও সংক্রমণের হারে ঢাকাকে ছাড়িয়ে এখন শীর্ষস্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ।

এক মাসে (৭ জুন থেকে ৮ জুলাই) খুলনা বিভাগে ৭৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা গত বছর সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর অর্ধেকের চেয়ে ৬৮ জন বেশি। একইসঙ্গে এক মাসে শনাক্তের সংখ্যা মোট শনাক্তের অর্ধেকের কাছাকাছি। ফলে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। ধারণক্ষমতার চেযে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। 

খুলনাঞ্চলে করোনার ব্যাপক সংক্রমণের কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা মানুষের অসচেতনতা এবং সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়াকে দায়ী করছেন। এ ছাড়া বাড়িতে চিকিৎসা শেষে শেষ-মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি, হাসপাতালে জনবল সঙ্কট ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের স্বল্পতা, অক্সিজেন সঙ্কট, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন না করায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনরা।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মার্চে সংক্রমণের শুরু থেকে গত বৃহস্পতিবার (০৭ জুলাই) পর্যন্ত খুলনা বিভাগে মারা গেছে ১ হাজার ৪১৬ জন। যার মধ্যে গত ৭ জুন পর্যন্ত বিভাগে মোট মৃত্যু ছিল ৬৭৪ জন। আর গত ৭ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত একমাসে মৃত্যু হয়েছে ৭৪২ জনের। যা আগের ১৫ মাসের প্রাণহানির অর্ধেকের বেশি। এ ছাড়া গত ৭ জুন পর্যন্ত খুলনা বিভাগে করোনা শনাক্ত হয় ৩৬ হাজার ৪১১ জনের শরীরে। আর বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) পর্যন্ত বিভাগে শনাক্ত হয়েছে ৬৭ হাজার ৫৩১ জনের শরীরে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক মাসে (৭ জুন থেকে ৮ জুলাই) শনাক্ত হয়েছে ৩১ হাজার ১২০ জনের। যা মোট শনাক্তের অর্ধেকের কাছাকাছি। আর গত বছর মার্চে দেশে করোনার প্রকোপ শুরুর পর একদিনে খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে গত শুক্রবার (৯ জুলাই)। এদিন সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৫৬ জনের শরীরে। সর্বশেষ শনিবার (১০ জুলাই) ৪৬ জনের মৃত্যু ও ৭৭২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

বিভাগে শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে খুলনা জেলা। এ ছাড়া কুষ্টিয়া, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট, নড়াইল ও সাতক্ষীরায় সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।

খুলনা করোনা হাসপাতালের ফোকাল পার্সন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, এ অঞ্চলে করোনা বাড়ার কারণ এটি ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চল। ভারত থেকে অনেক রোগী এবং লোক আসছে। এ অঞ্চলে বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর হওয়ার কারণে সকল রোগী খুলনা ও সাতক্ষীরার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে এই অঞ্চলে রোগটি ছড়িয়ে যাচ্ছে। হয়ত একজন লোক আসলেন এবং তিনি ছড়াতে ছড়াতে গেলেন। এ অঞ্চলের মানুষের অসচেতনতার কারণে রোগটি একটু বেশি ছড়াচ্ছে বলে জানান তিনি। 

খুলনা বিভাগে করোনার সংক্রমণ বাড়ার কারণ জানতে চাইলে খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আব্দুল আহাদ বলেন, আগে করোনার সংক্রমণ কিছুটা শহরকেন্দ্রিক ছিল। কিন্তু যখন গ্রামকেন্দ্রিক হয়ে গেছে, তখনই করোনার রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। রোগী বাড়ছে কিন্তু চিকিৎসার সরঞ্জাম সেই তুলনায় না বাড়ায় শনাক্ত ও মৃত্যু বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।  

ডা. আব্দুল আহাদ বলেন, গ্রামের রোগীদের শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাঁশি যখন খুব বেশি হচ্ছে, তখন তারা হাসপাতালে আসছেন। এই মানুষগুলোর চিকিৎসার শুরুতেই বিলম্ব হচ্ছে। যে কারণে তাদের হাই ফ্লো ন্যাজাল অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ছে। তাদের মৃত্যুর হারও বেশি। কারও যদি সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে তাদের পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। যদি পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হয় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা অনেক কম। স্বাস্থ্যবিধি মানতে তাদের মধ্যে অনীহা রয়েছে। যে কারণে সংক্রমণ বাড়ছে।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, এখন শুধু খুলনায় নয়, সারা দেশে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। মাস্কের বিকল্প নেই। 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়