ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সিলেটের পর্যটনে প্রাণ ফিরছে 

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ২১ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ২০:৩৩, ২১ আগস্ট ২০২১
সিলেটের পর্যটনে প্রাণ ফিরছে 

করোনা সংক্রমণ রুখতে চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে বন্ধ ছিল সিলেটের সকল পর্যটনকেন্দ্র। দীর্ঘ ৫ মাস বন্ধ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে এসব পর্যটনকেন্দ্র।

এরই মধ্যে পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। ফলে টানা কয়েক মাস বন্ধের কারণে ক্ষতির মুখে পড়া পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্তরা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন। আর নতুন নতুন ইভেন্ট তৈরির মাধ্যমে পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন ট্যুর অপারেটররাও।

আরো পড়ুন:

অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন এলাকায় গমনের কথা বলা হলেও এ ব্যাপারে বরাবরের মতোই উদাসীন দর্শনার্থীরা। নানা অজুহাতে এখনও তারা স্বাস্থ্যবিধি ভাঙছেন। তবে টুরিস্ট পুলিশসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সচেনতনামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

শনিবার (২১ আগস্ট) সিলেটের জাফলং, বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ, রাতারগুলে দর্শনার্থীদের ভিড় রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। দলবেঁধে দূর থেকেও অনেকে ঘুরতে এসেছেন। তবে বেশিরভাগ দর্শনার্থীর মুখে ছিলো না মাস্ক। স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতাও ছিল কম।

গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে কথা হয় কুমিল্লা থেকে বেড়াতে আসা আশরাফের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘করোনার কারণে অনেক দিন ধরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নি। তাই পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুদের নিয়ে সিলেটে ঘুরতে এসেছেন।’

জাফলং ফটোগ্রাফার সমিতির সভাপতি সোহেল আহমদ জানান, জাফলংয়ে প্রায় ৪ শতাধিক তরুণ ফটোগ্রাফি পেশায় রয়েছেন, যারা এর উপার্জন থেকে পরিবার চালায়। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তারা বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। এখন পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়ায় তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে বলেও জানান তিনি।

ট্যুরিস্ট পুলিশের জাফলং সাব জোনের ইনচার্জ মো. রতন শেখ জানান, পর্যটন এলাকায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। তারা পর্যটন কেন্দ্রে আগত দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও মাস্ক পরিধানে উদ্বুদ্ধ করছেন বলেও জানান তিনি।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ জিরোপয়েন্টের ‘সাদাপাথর’ পর্যটনস্পটেও দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আবিদুর রহমান। তিনি কোম্পানীগঞ্জ ট্যুরিস্ট ক্লাবেরও সাধারণ সম্পাদক।

আবিদুর রহমান বলছিলেন, ‘প্রায় ৫ মাস পর পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়াতে দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। প্রথম দুই দিন আবহাওয়া খারাপ থাকায় দর্শনার্থী কিছু কম এসেছেন। তবে আজ অনেক বেশি দর্শনার্থীর উপস্থিতি সেখানে দেখা গেছে।’

সিলেট ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন জানান, সরকার পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়াতে কর্মহীন ট্যুর গাইডরা আশার আলো দেখছেন। তারা দীর্ঘ ৫ মাস ধরে কর্মহীন অবস্থায় ছিলেন। এখন ট্যুরিস্ট আসতে শুরু করায় তারা আবারও আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর গ্রুপ নতুন নতুন ইভেন্টের মাধ্যমে প্যাকেজ সিস্টেমে ট্যুরিস্টদের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। 

দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকা সিলেটের হোটেল-গেস্ট হাউসেও প্রাণ ফিরছে। অবশ্য করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় প্রতিদিনই কোটি টাকার উপরে আয় থেকে বঞ্ছিত হয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে তারা ক্ষতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছেন।

সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমাত নূরী জুয়েল বলেন, সরকার পর্যটন শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। তবে এর আগেই করোনায় বন্ধ থাকার কারণে হোটেল-মোটেল খাতের ব্যবসায়ীদের চরম ক্ষতি হয়েছে। তারপরও শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবারও প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। 

ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. আলতাফ হোসেন জানান, সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনস্পটে দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। এসব স্পটে প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন করা হচ্ছে। 

দর্শনার্থীরা নগরের পাশ্ববর্তী লাক্কাতুড়া চা বাগান, মালনীছড়া চা-বাগান, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, বাইশটিলা, ক্বিনব্রীজ, টিলাগড় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র, খাদিমনগর ইকোপার্কসহ শহরের ভেতরে দৃষ্টিনন্দন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করছেন।

নোমান/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়