ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আনন্দ-উদ্দীপনায় গোপালগঞ্জের স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীরা

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৫:২৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

দেড় বছর পর ব্যাপক আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গোপালগঞ্জে স্কুল ও কলেজে একযোগে শুরু হয়েছে ক্লাস। স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পদচারণায় আবারও হয়ে উঠেছে মুখোরিত। এসময় শিক্ষার্থীদের চকলেট দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয়দিন ও অন্যাণ্য শ্রেণির একদিন করে ক্লাস হবে। দীর্ঘ দিন পর বিদ্যালয় খুলে দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জ জেলা শহরের বেশ কয়েকটি স্কুল গিয়ে দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণের পর থেকে সারা দেশের মত দেড় বছর বন্ধ ছিল গোপালগঞ্জ জেলার ১২শ এর বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১২ সেপ্টেম্বর জেলার ৮৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২০৩টি মাধ্যমিক, ৮৯টি মাদ্রাসা ও শতাধিক কিন্ডারগার্ডেন স্কুল এবং কলেজে শুরু হয়েছে ক্লাস। আগের দিনে বিভিন্ন স্কুলে রঙিন কাগজ ও ফুল দিয়ে বিদ্যালয় ও ক্লাশ রুম সাজানো হয়।

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই ক্লাসে যোগ দিতে স্কুল ও কলেজ গেটে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। স্কুলে প্রবেশের আগে শিক্ষার্থীদের শারীরের তাপমাত্র মেপে ও সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে এবং স্যানিটাইজ করে বিদ্যালয় ও কলেজে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। এসময় শিক্ষার্থীদের চকলেট দিয়ে বরণ করা হয়। অনেক দিন পর বন্ধুদের দেখা পেয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়ে তারা।

পরে সামাজিক দূরত্ব বজার রেখে একই বেঞ্চে বসানো হয় দুইজন করে শিক্ষার্থী। এরপর চির চেনা রূপে শুরু হয় ক্লাস। শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতনতার ওপর নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষাদান শুরু করেন।

দীর্ঘদিন পর ক্লাস করতে পেরে আনন্দিত শিক্ষার্থীরা। এতে করে দেড় বছরে পড়াশোনায় যে ঘটতি থেকেছে তা কিছুটা হলেও পূরণ করা সম্ভব হবে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া স্কুল খুলে ক্লাস শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবারও নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে পড়াশোনা করতে পারবে। সেই সঙ্গে উৎসাহ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতে পরে খুশি শিক্ষকরা।

বীণাপানি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্তী সাদিয়া আলমগীর মেঘলা বলেন, ‘আবারও  স্কুলে আসতে পরে শুধু আমি না সবাই আনন্দিত। আবার স্কুলে আসতে পারবো ভাবতে পারিনি। কিছু দিনের মধ‌্যে মাধ্যমিক জীবন শেষ করে কলেজে উঠবো এটা ভাবতেই খুব আনন্দ লাগে।’

একই স্কুলের ১ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ওশান বিশ্বাস বলেন, ‘দেড় বছর পর আমরা আবার স্কুলে আসতে পেড়েছি। আবারও শিক্ষক ও বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হলো। সেই সঙ্গে পড়াশোনাও মনোযোগ দিতে পারবো। স্কুলে ক্লাস করতে পাড়ায় খুব আনন্দ লাগছে।’

স্বর্ণকলি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফেরদৌস কবির রাদিন বলেন, ‘দীর্ঘ করোনাকালীন ছুটির পর আবারও আমার ক্লাসে যোগ দিতে পেরেছি। আমরা সবাই আনন্দিত। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়েই আমরা আগামী দিনে ক্লাস করতে পারবো।’

শহরের পাচুঁড়িয়া এলাকার সৈয়দ আকবর হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ দিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মেয়ের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটেছিল। আবারও স্কুল খুলে দেয়ায় বাচ্চারা স্কুল গিয়ে পড়ালেখা করতে পারছে এতে আমি খুশি। ক্লাস না করতে পারায় পড়ালেখায় যে ক্ষতি হয়েছে তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে।’

একই এলাকার একরামুল কবীর বলেন, ‘দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় আমার দুই ছেলে পড়ালোখায় মনোযোগ দিতে পারছিলেন না। তবে স্কুল খোলায় বাচ্চারা আবারও মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করতে পারবে। এতে আগামী দিনের প্রস্তুতি নিতে পারবে।’

গোপালগঞ্জ এস এম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার জানান, করোনাকালীন দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীরা খুব কাছ থেকে পাঠদানে অভ্যস্থ ছিল। অনলাইনে ক্লাসে তারা অভ্যস্থ ছিল না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু পুঁথিগত শিক্ষা অর্জনের জন্য নয়, এখানে শিশুরা অনেক কিছুই শিখে থাকে। শিষ্ঠাচার শেখে, বন্ধুত্ব শিখে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শিখে, নিজেদের মূল্যবোধের মাধ্যমে গড়ে তেলা শেখে। এতদিন বিদ্যালয়, মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ কোলাহলমুক্ত ছিল। আজ থেকে বিদ্যালয় কোলাহলে পূর্ণ হয়ে যাবে এটা ভাবতেই খুব ভাল লাগছে।

গোপালগঞ্জ বীণাপানি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃন্ময় বাড়ৈ জানান, আজকের দিনটি আমাদের ও শিক্ষার্থীদের জন্য সুখকর। এতদিন ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমাদেরও খারাপ লেগেছিল। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই স্কুল খুলে দেওয়ার জন্য। সেই সঙ্গে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আর যাতে স্কুলগুলো বন্ধ করে দেওয়া না লাগে। শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল নিরাপদ জায়গা। আমরা শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।

গোপালগঞ্জ/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়