চায়ের দোকানের টিভিতেই ওদের বিনোদন
জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম
অবসরে চা খেতে খেতে দোকানে থাকা টিভিতে বাংলা সিনেমা বা ফোক গান শুনেন তারা
আব্বাস আলীর বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই। কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। সকাল বা বিকেলের দিকে কাজ না থাকলে চলে যান চায়ের দোকানে। চা খেতে খেতে দোকানে থাকা টিভিতে কোনো বাংলা সিনেমা বা ফোক গান শুনে কয়েক ঘণ্টা অবসর কাটান তিনি।
অল্প আয়ের সংসারে টাকা খরচ করে বিনোদনের মৌলিক চাহিদা পূরণের সামর্থ্য নেই। তাই চায়ের দোকানের টিভিতেই উপভোগ করেন বিনোদন।
আব্বাস আলীর মতো মানিকগঞ্জের গ্রামাঞ্চলের মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম চায়ের দোকানের টিভি।
জেলার ৭টি উপজেলাতেই কম বেশি হাট বাজার রয়েছে। এসব হাট বাজারের চায়ের দোকানগুলোতে রয়েছে রঙিন টেলিভিশন। এসব চায়ের দোকানগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা তাদের প্রতিদিনের অবসর সময়ে টিভিতে নানা রকম বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখেন। তবে বাজারে চায়ের দোকানে যার স্মার্ট টিভি রয়েছে সেই দোকানে লোকজন ভিড় করে বেশি, বেচাকেনাও বেশি।
তিল্লি এলাকার ফজল মিয়া বলেন, করোনাকালীন আয় রোজহার কমে গেছে। খরচের বাড়তি চাপ এড়াতে ছয় মাস ধরে ডিসের লাইনের সংযোগ বন্ধ রেখেছি। তবে প্রতিদিন বিকেলে নিয়ম করে বাজারে চায়ের দোকানে গিয়ে টিভি দেখে আসি। আমাদের মতো গরিব মানুষের টাকা পয়সা খরচ করে বিনোদন নেওয়ার সুযোগ নেই।
ডাউটিয়া এলাকার আরিফ মোল্লা বলেন, গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই এখন টিভি ও ডিস লাইন আছে। কিন্তু চায়ের দোকানে গ্রামের ছোট বড় সবাই একসাথে টিভি দেখার মধ্যে যে আনন্দ বা বিনোদন পাওয়া যায় তা বাড়িতে নেই। চায়ের দোকানে সিনেমা চললে তো মনে হয় যেন সিনেমা হলের শো চলতেছে।
জয়রা এলাকার ইলিয়াস আলী বলেন, দুই যুগ আগে সারাদিন কাজ শেষে রাত জেগে মাতবরের বাড়িতে গান বাজনা, উঠান নাটক, ঘেটুযাত্রা দেখতে যেতাম। এখন আর আগের মতো এগুলো নাই। টিভিতে এগুলো দলবেঁধে না দেখলে ভালো লাগে না। তাই বাড়িতে টিভি থাকলেও গ্রামের সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে চায়ের দোকানে আসি।
সাটুরিয়া উপজেলার পাড়তিল্লি বাজারের চায়ের দোকানদার হাবেল মিয়া বলেন, প্রতিদিন সকালে সাড়ে চারটার দিকে বড় ভাই হাবু দোকান খোলেন। দুই ভাই মিলে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত এ বাজারে চা বিক্রি করি। চা বিক্রি বাড়াতে দোকানে স্মার্ট টিভি বসিয়েছি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিন থেকে চারটা বাংলা সিনেমা, সিনেমা শেষে মাঝে মাঝে ফোক, মারফতি গান ও যাত্রাপালার ভিডিগুলো টিভিতে দেখাই। এতে করে দোকানে লোকজনের ভিড় বাড়ে, বেচাকেনাও বাড়ে।
সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচির মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মামুন বলেন, তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ আর সিনেমা হলে যায় না। এছাড়া আগে গ্রামে গঞ্জে দলবেঁধে ঘেটুগান, যাত্রাপালা, বিভিন্ন গানের আসর উপভোগ করতো। দিন দিন সেগুলোও এখন হারিয়ে যাচ্ছে। তবে গ্রামের মানুষের দলবেঁধে বিনোদন উপভোগের সংস্কৃতি এখনো রয়ে গেছে। তাই দলবেঁধে এরা চায়ের দোকানগুলোতে টিভিতে এসব অনুষ্ঠান দেখে থাকে।
জাহিদুল/সুমি
আরো পড়ুন