ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

যমুনা নদীতে ঐহিত্যবাহী নৌকা বাইচ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১  
যমুনা নদীতে ঐহিত্যবাহী নৌকা বাইচ

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের মালতীপাড়া, গয়রাগাছা, গন্ধবপুর, কাজী বাজার এলাকার যমুনা নদীতে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) দিন ব্যাপী হুগড়া ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগনের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে এলাকাগুলোতে এক উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক খন্দকার আশরাফউজ্জামান স্মৃতি, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরই যমুনা নদীতে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। নৌকা বাইচ দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর লোক সমাগম হয়। সকাল থেকেই নদীর পাশে নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোররা জড়ো হতে থাকে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নৌকাবাইচ দেখতে যমুনা নদীর দুই পাড়ে ২০ সহশ্রাধিক দর্শনার্থীদের ঢল নামে। সাধারণ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাসহ বিভিন্ন নৌযানে করে শিশু-নারীসহ নানা শ্রেণির-মানুষ প্রতিযোগিতা দেখতে আসছেন। মাইক ও সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজায় দর্শনার্থীরা। এর সঙ্গে চলছে বাইচ দেখতে আসা তরুণদের উল্লাস। প্রতিযোগিতায় ঢাক-ঢোলের বাজনার সাথে তাল মিলিয়ে জারি-সারি ও ধুয়া গানের সঙ্গে মাঝিদের জোরে টানো ছন্দময় বৈঠা চালায় প্রতিযোগিরা।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে আসা আশরাফ আলী বলেন, ‘আমি ৬০ বছর যাবৎ নৌকা বাইচ দেখি। নৌকা বাইচের খবর শুনলে আর ঘরে বসে থাকতে পারি না। আজকেও প্রায় পাঁচ শতাধিক টাকা খরচ করে নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। নৌকা বাইচ দেখে খুবই ভাল লাগলো।’

গয়রাগাছা গ্রামের কবির মিয়া বলেন, ‘ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে যেমনে বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয় স্বজন আসে। ঠিক নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে ওই পরিমাণ আত্মীয় স্বজন এসেছে। সবাই নৌকা বাইচের অপেক্ষায় থাকে। এ নৌকা বাইচে আমরা অনেক আনন্দ উপভোগ করলাম।’

হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা বলেন, ‘গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হচ্ছে নৌকা বাইচ। বর্ষাকালে চরাঞ্চলের মানুষকে একটু আনন্দ দিতেই প্রতিবছরই এ নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়। এতে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ একটু হলেও আনন্দ পায়। একদিন হলেও আমাদের গ্রামের মানুষ অনেক উপভোগ করতে পারে। এ ধরনের আয়োজন ভবিষ্যতেও আরো অব্যাহত থাকবে।’

টাঙ্গাইল সদর আসনের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘নদী মাতৃক বাংলাদেশে বন্যাকে মোকাবেলা করেই আমাদের চলতে হয়। প্রাচীনকাল থেকেই বর্ষাকালে বিভিন্ন এলাকায় নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়। করোনা পরবর্তী সময়ে কয়েকটি গ্রামের মানুষ একটু বিনোদনের জন্য নৌকা বাইচের আয়োজন করেছে। সুন্দর একটি পরিবেশে নৌকা বাইচ দেখে অনেক ভাল লাগলো। টাঙ্গাইলের বাইরেও আশে পাশের আরো পাঁচ ছয়টি জেলা থেকে নৌকা বাইচে অংশ নিতে এবং বাইচ দেখতে এসেছে অনেক মানুষ। ভবিষ্যতে আরো বৃহৎ পরিসরে যমুনা নদীতে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হবে।’

প্রতিযোগিতায় প্রথম আলো, সোনার বাংলা, সোনারতরী, যমুনারতরীসহ বিভিন্ন রঙের  ৪৫ টি নৌকা অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে ভূঞাপুরের সোনারতরী প্রথম হয়েছে।

কাওছার/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়