ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সালথায় সংঘর্ষের ঘটনায় আটক-১৫, নারী ও শিশুরা আতঙ্কে 

ফরিদপুর সংবাদদাতা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৬, ২৪ অক্টোবর ২০২১  
সালথায় সংঘর্ষের ঘটনায় আটক-১৫, নারী ও শিশুরা আতঙ্কে 

ফরিদপুরের সালথায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার (২৪ অক্টোবর) সকালে আরো বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের পর এলাকায় একটি পক্ষের পুরুষরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে ওই এলাকায় নারী ও শিশুরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। 

ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হওয়া সংঘর্ষের সময় পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে সালথা থানা পুলিশের এসআই হান্নান বাদী হয়ে শনিবার (২৩ অক্টোবর) রাতে থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় পুলিশ ১৫ ব্যক্তিকে আটক করেছে। 

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রোববার (বিকেল ৫টা) পর্যন্ত মারিজ শিকদার নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আরো পড়ুন: ফরিদপুরে ইউপি নির্বাচন নিয়ে সংঘর্ষ, যুবক নিহত

রোববার সকালে সরেজমিনে উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সংঘর্ষে নিহত মারিজ শিকদারের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে মারিজ ছিল মেজো। তার স্ত্রীর নাম জুই আকতার। মুসলিমা ইসলাম নামে তাদের দুই বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে মারিজের লাশ দাফন করা হয়েছে। 

নিহত মারিজের বোন শিল্পী আকতার জানান, মারিজ অন্যের জমিতে কাজ করে তার ছোট্ট সংসার চালাতেন। এখন কিভাবে চলবে ওর সংসার। কে দেখবে ওর স্ত্রী-সন্তানকে। অকালে এভাবে আমার ভাইয়ের হত্যার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। আমি আমার ভাই হত্যার সঠিক বিচার চাই। তিনি আরো জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।স্থানীয়রা জানান, মারিজের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরার পর সংঘর্ষ শেষে আ.লীগ দলীয় প্রার্থীর পুরুষ সমর্থকরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই সুযোগে শনিবার সারারাত ও রোববার সকালে তাদের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। ভাংচুর করা হয় যদুনন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়া, সংসদ উপনেতার সাবেক এপিএস আবু বক্কর সিদ্দিকী, ইউপি সদস্য ইমরুল খান ও তোরাপ হোসেনের বাড়িঘর। গুড়িয়ে দেওয়া হয় এসব ঘরে থাকা আসবাবপত্র। লুটপাট করা হয় গরু-ছাগলসহ মালামাল। বর্তমানে ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছে এসব বাড়ির নারী ও শিশুরা।

স্থানীয় বাসিন্দা জালাল শেখ বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় যুবকের মৃত্যুর পর পরই এলাকায় তান্ডব চালানো হয়েছে। অন্তত ৭০ থেকে ৮০টি বসতঘরে হামলা চালানো হয়েছে। বর্তমানে ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছে এসব বাড়ির নারী ও শিশুরা।

তবে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রব মোল্লা, বিদ্রোহী প্রার্থী রফিক মোল্লা, নুরুজ্জামান টুকু ঠাকুর ও যদুনন্দী ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়ার বক্তব্য নিতে তাদের মোবাইলে একাধিবার ফোন করা হলেও সবার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান বলেন, শনিবার বিকালে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। সংঘর্ষের সময় পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোট ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আসন্ন ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আ.লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি আব্দুর রব মোল্লা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তার বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র মনোনয়নপত্র জমা দেন ইউনিয়ন  আ.লীগ কর্মী মো. রফিক মোল্লা ও উপজেলা আ.লীগের সদস্য নুরুজ্জামান ওরফে টুকু ঠাকুর। 

রফিক মোল্লা ও নুরুজ্জামান টুকু ঠাকুর খারদিয়া এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে একই দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তাদের বাড়িও একই গ্রামে। এক মাস আগে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে বিরোধ জেরে রফিকের কাছ থেকে আলাদা হয়ে নুরুজ্জামান টুকু ঠাকুর নৌকার মনোনীত প্রার্থী রব মোল্লা ও তার সমর্থক ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর মিয়ার দলে যোগ দেন। এরই জেরে শনিবার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খারদিয়া এলাকায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে গুরুতর আহত মারিজ সিকদার নামে এক যুবক ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিতসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া আহত হয় অন্তত ৩০ জন। আহতরা ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

উজ্জল/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়