ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শ্রীবরদীর ৯ ইউপিতে ক্রমে বদলে যাচ্ছে ভোটের হিসাব

শেরপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ২২ ডিসেম্বর ২০২১  
শ্রীবরদীর ৯ ইউপিতে ক্রমে বদলে যাচ্ছে ভোটের হিসাব

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ঘিরে শেষমুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে শেষবারের মতো ভোট প্রার্থনা করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। সেইসঙ্গে চলছে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। 

সময় যতই গড়াচ্ছে, ততই বাড়ছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তোড়জোড়। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। সন্ধ্যা থেকে গ্রামে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয় বাজারে চায়ের দোকানে আর প্রার্থীদের নির্বাচনী কার্যালয় ঘিরে নির্বাচনের উৎসবের সৃষ্টি হচ্ছে। এটি চলে গভীর রাত পর্যন্ত।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে দেখা যাচ্ছে সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের। বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের বড় অংশের সমর্থন রয়েছে। 

এ বিষয়ে একাধিক নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন বিশ্লেষক বলেন, শ্রীবরদী উপজেলার নয়টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের হারের প্রধান কারণ হতে পারে দলীয় কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নীরব সমর্থন। প্রতীক বরাদ্দ থেকে শুরু করে আজ বুধবার (২২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে একাধিকবার ঘুরে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। 

কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল আহমেদ জানান, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কতিপয় নেতাকর্মী, সমর্থক গোপনে ভোট চাইছেন দলের বিদ্রোহী আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে। তিনি কয়েকজন পদধারী নেতার নাম উল্লেখ করে বলেন, তারা প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। 

তবে সচেতন ও শিক্ষিত ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অন্য কথা। তারা জানান, যোগ্য, সৎ ও জনপ্রিয় বা পছন্দের ব্যক্তিকে আওয়ামীলীগ মনোনয়ন দেয়নি। এ জন্য অনেকে প্রার্থীদের মেনে নিতে পারছেন না। মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে দলমত নির্বিশেষে যোগ্য প্রার্থীকেই তারা ভোট দেবে।

নৌকা প্রতীকের একাধিক প্রার্থী জানান, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে কারা বিপক্ষে কাজ করছে তা জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে। দলীয়শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে শাস্তির দাবি জানাবেন। নৌকার প্রার্থীরা আরও বলেন, ভোটের মাঠে তারা কোনোক্রমে বিদ্রোহীদের চেয়ে কম নন। প্রচার-প্রচারণা আর গণসংযোগে তারা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন। জেলা ও উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নৌকার সঙ্গে কাজ করছেন। 

শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহারুল ইসলাম লিটন বলেন, ‘আওয়ামীলীগ দেশের বড় রাজনৈতিক সংগঠন। এখানে নেতাকর্মীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই অনেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী অবস্থান নিয়েছেন। তবে এতে আমাদের ফল বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা নেই। যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’ সরকারের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে নৌকা প্রতীকে ভোট আহ্বান করেন তিনি। 

উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এমএ মতিন বলেন, দলের সব নেতাকর্মী মাঠে নামলে বর্তমান দৃশ্যপট অনেকটাই পরিবর্তন হবে। গোপনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছি।’  

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম ভাষানী বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কেউ কেউ কাজ করছে এমন গুটিকয়েক তথ্য আমি পেয়েছি। তাদের একটা তালিকা আমরা করবো। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ 

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। একাধিক প্রার্থী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কাছ থেকে মিথ্যা মামলা, হামলা ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে ঘাটতি দেখা যায়নি।

কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ খান নুন বলেন, ‘আমি সাবেক চেয়ারম্যান ছিলাম তাই এই বারও মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী হয়েছি। এবারও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হোক এটাই আমার চাওয়া।’ তিনি আরও বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার রয়েছে। এই অধিকার প্রতিষ্ঠা পেলে জনগণের পছন্দের প্রার্থী জয়ী হবে অন্যথায় গ্রহণযোগ্যতা হারাবে নির্বাচন কমিশন। 

ভোটার ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনী মাঠে ভোটের পরিবেশ, পরিসংখ্যান ও ভোটারদের অবস্থান বদল হচ্ছে সময়ে সময়ে। তাই কে জিতবে, কে হারবে- এটা নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত। 

তারিকুল/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়