ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কটিয়াদীতে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৩, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১১:০৬, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২
কটিয়াদীতে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা

দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার মধ্যেই কিশোরগঞ্জের কাদিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাই গ্রামে শুরু হয়েছে কয়েক শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা। মেলা ঘিরে উৎসবে মেতে উঠেছে আশপাশের এলাকার মানুষ। তাই কুড়িখাই গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে এখন চলছে আনন্দের আমেজ।

প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ সোমবার থেকে কুড়িখাই গ্রামে শুরু হয় এ মেলা। চলবে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কুড়িখাই গ্রামের নামে পরিচিত এ মেলাটি জেলার সবচেয়ে বড় গ্রামীণ মেলা হিসেবে পরিচিত। ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ শামসুদ্দিন বুখারির (রহঃ) মাজারের ওরসকে ঘিরে বসে এ আয়োজন। মুসলমানদের উৎসব হলেও সময়ের বিবর্তনে এ মেলা এখন সার্বজনীন উৎসব ও ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। 

                                                                         শিশুদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন বিনোদনের আয়োজন

শুধু কটিয়াদী নয় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এখানে ঘুরতে আসেন এই মেলায়। মেলা উপলক্ষে গ্রামের জামাইদের দাওয়াত দিয়ে আদর-আপ্যায়ন করা এখানকার রীতি। সেই সুবাদে বাবার বাড়িতে নাইওরে আসে গ্রামের মেয়েরাও।

মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো মাছ। বড় বড় বিভিন্ন জাতের মাছ উঠেছে মেলায়। চড়া দামে বিক্রিও হচ্ছে এসব মাছ। কুড়িখাই গ্রামের দাওয়াতি জামাইরা এসব মাছের মূলক্রেতা। মেলা থেকে মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাওয়া এখানকার পুরনো রীতি। আবার নিজ বাড়িতে ফেরার সময়ও শ্বশুড়বাড়ির লোকজন হাজার হাজার টাকার মাছ কিনে দেন জামাইকে। 

মেলায় মাছ বিক্রি করতে আসা মদন মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রতিবছরই এ মেলায় সবচেয়ে বড় মাছ গুলো নিয়ে আসি। এ মেলায় ধনী-গরিব সবাই মাছ কিনতে আসেন। তাই সবার চাহিদা মত মাছই এখানে আমরা বিক্রি করে থাকি। এ বছর বড় বড় রুই, কাতল, বোয়াল, চিতল, বাইম, চিংড়ি, ছুরি, বাঘাইরসহ নানা জাতের মাছ নিয়ে এসেছি। সর্বনিম্ন একহাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ পঞ্চাশ হাজার টাকা দামের মাছ বাজারে প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে। আর এ মেলায় যত বড় মাছই হোক না কেন সেটি বিক্রি হবেই।’

                                             বেড়াতে আসা জামাইদের জন্য মেলা থেকে মাছ কিনে শ্বশুড়বাড়িতে যাওয়া একটি রীতি 

কুড়িখাই গ্রামের জামাই আকরাম হোসেন বলেন, ‘গত বছরই আমি এ গ্রামের মেয়েকে বিয়ে করেছি। এইবারই প্রথম মেলা উপলক্ষে আসলাম। আমাকে এ এলাকার মানুষ এবং শ্বশুড়বাড়ির লোকজন দাওয়াত দিয়েছেন। শুনেছি মেলা থেকে মাছ কিনি নিয়ে যাওয়া এখানকার রীতি। আমারও খুব ভাল লাগছে এখানকার মানুষের আন্তরিকতায়। মাছ বাজারে এসেছি, ইচ্ছে আছে কিছু বড় মাছ কিনে শ্বশুড়বাড়ি যাব।’

কথিত আছে শাহ শামসুদ্দিন আউলিয়া সুলতানুল বোখারি (রহ.) তিনজন সঙ্গী নিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাই এলাকায় ইসলামধর্ম প্রচার শুরু করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ভক্তরা মাজারকে ঘিরেই কুড়িখাই মেলার প্রবর্তন করেন। মেলা কমিটির লোকজন জানিয়েছেন, শতশত বছর ধরে কুড়িখাই মেলাটি হচ্ছে। 

কুড়িখাই গ্রামের এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায় বসেছে বিভিন্ন দোকানপাট। কাঠের আসবাবপত্র, শিশুদের খেলনা, মেয়েদের সাজসজ্জার জিনিস থেকে শুরু করে মুড়ি, মিষ্টি, খৈসহ এমন কিছু নেই যা মেলায় ওঠেনি। মেলায় শিশুদের জন্যও রাখা হয়েছে পুতুলনাচ, সার্কাস, নাগরদোলাসহ আরো বেশকিছু আয়োজন। 

মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, প্রতিবছরই এ মেলায় তারা আসেন। তবে এ বছর করোনার পরিস্থিতির কথা ভেবে সবাই মাস্ক পরিধান করেছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে মেলা ঘুরে কেনাকাটা করতে খুব ভালো লাগছে তাদের। অনেক বড় পরিসরে এ মেলাটি যুগ যুগ ধরে দেখে আসছেন তারা। এত বড় মেলা একদিনে দেখে শেষ করা যায়না।

মেলা পরিদর্শনে এসেছিলেন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদি-পাকুন্দিয়া) আসনের সাংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ। তখন তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মেলার জন্য পর্যান্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাছাড়া করোনার এমন সময়ে যারা দর্শনার্থী, তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় আসতে বলা হয়েছে। যতটুকু ঘুরে দেখলাম প্রায় মানুষের মুখেই মাস্ক রয়েছে। এ মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মাছের মেলা। এলাকার জামাইরা বড় বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে যান। আর খাবারে ঐতিহ্য মেলার লাল জিলাপী। আশা করছি মেলার সাতদিন সবাই স্বাস্থ্য মেনে মেলা উপভোগ করবেন।’ 

                                                                                মেলায় উঠেছে নানা রঙের কাচের চুড়ি

মেলা কমিটি জানায়, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ মেলা। মাজার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তাছাড়া মেলার দোকান বরাদ্দ থেকে যে আয় হয়, তা মাজার ও মসজিদের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়।

রুমন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়