‘বিতর্কিত-বিরোধীদের’ দিয়ে কমিটি, নেতাদের পদত্যাগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিত ও নৌকা বিরোধীদের রেখে ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৬ সদস্যের কমিটি থেকে ইতোমধ্যে চার নেতা স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন।
অব্যাহতি নেওয়া নেতারা হলেন— পাহাড়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি নাজমুল হাসান, সহ সভাপতি মাহমুদুল হাসান হেলন, সুমন মিয়া এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রুবেল মিয়া।
গত ৭ জুন রাত ১১টায় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাস্টার ও সাধারণ সম্পাদক রাসেল খান স্বাক্ষরিত ১৬ সদস্যের পাহাড়পুর ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটিতে ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়াকে বর্তমান সভাপতি ও সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী হওয়া মোনায়েম খাঁ’কে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
গত বুধবার নবগঠিত কমিটির পদ থেকে ৪ সদস্য অব্যাহতি চেয়ে উপজেলা যুবলীগের কাছে চিঠি পাঠান।
অব্যাহতি চেয়ে দেওয়া চিঠি সূত্রে জানা যায়, গত ২০ মে পাহাড়পুর ইউনিয়ন যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এক যুগ পর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে যুবলীগের কর্মীদের প্রত্যাশা ছিল, নতুন নেতৃত্ব নির্ভর ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনমুখী কমিটি হবে। কিন্তু বিগত কমিটিতে যারা নির্বাহী (সভাপতি-সম্পাদক) পদে ছিলেন, তাদের রেখেই আবার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
কমিটিতে অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিতর্কিত ও নৌকা প্রতীকের বিরোধী লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে— এমন অভিযোগ তুলে চার নেতা ইউনিয়ন কমিটির পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন।
নেতাকর্মীরা জানান, পাহাড়পুর ইউনিয়ন যুবলীগের সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন— সেলিম ভূঁইয়া, মোনায়েম খাঁ, মাহমুদুল হাসান হেলন, আলি হোসেন, সুমন মিয়া, কেফায়েত উল্লাহ শরীফ।
অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন— নাজমুল হাসান, রাকিবুল হাসান, রুবেল মিয়া।
সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় ১১ জন ভোট দেন। সভাপতি পদে সেলিম ভূঁইয়া ৪ ভোট, মোনায়েম খাঁ দুই ভোট পান। বাকিরা কোনও ভোট পাননি।
সাধারণ সম্পাদক পদে নাজমুল হাসান ৬ ভোট পান। রাকিবুল কোনও ভোট পাননি। আর নাজমুলকে সমর্থন দিয়ে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন রুবেল মিয়া।
ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রত্যাশী বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি-১ পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়া নাজমুল হাসান বলেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে ভোটে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় সম্মেলনের দিন জেলার নেতারা ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তখন উপজেলা যুবলীগ বাধা দিয়ে ৭ দিনের সময় নেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়া মোনায়েম খাঁ সভাপতি প্রার্থী হয়েছিলG তাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এই পদ টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, নৌকা প্রতীকের বিরোধীদের দিয়েই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে সহ সভাপতির পদ পাওয়া সেলিম মৃধা বিএনপি সমর্থনকারী।
ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি প্রত্যাশী ও বর্তমান সহ-সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়া মাহমুদুল হাসান হেলন বলেন, ১৩ বছর পর সম্মেলন হয়েছে। নতুন নেতাকর্মীদের দিয়ে কমিটি গঠন করার কথা বললে, আমরা প্রার্থী হয়েছি। আমি কমিটিতে সভাপতি প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে যারা কমিটিতে ছিলেন, সম্মেলনের পর তাদের দিয়েই কমিটি ঘোষণা করেছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, অযোগ্যদের দিয়ে নতুন কমিটি করেছে। টাকা না দেওয়ায় যোগ্যদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এই অর্থনৈতিক লেনদেনের সঙ্গে উপজেলা যুবলীগ জড়িত।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রাসেল খাঁ’কে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, যারা পদত্যাগ করেছে; তাদের কোনও কাগজপত্র আমি পাইনি। তবে পদত্যাগের বিষয়টি একজন আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন। সম্মেলনের দিন হলরুমে এক প্রার্থী সভাপতি প্রার্থীকে যেন সাধারণ সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীকে যেন সভাপতি করা না হয়- সে বিষয়ে কথা বলেছিলেন। জেলার নেতারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছিলেন।
১৩ বছর পর পুরনোদের রেখেই কমিটিতে ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাহাড়পুরের সিনিয়র নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল হক ভূঁইয়া। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা যুবলীগ সভাপতি শাহনুর ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস, ক্রীড়া সম্পাদক মশিউর রহমান। সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিজয়নগর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সঞ্চালনায় ছিলেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল খান।
মাইনুদ্দীন রুবেল/এনএইচ