ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ, ২২ জনের মৃত্যু

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২  
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ, ২২ জনের মৃত্যু

কক্সবাজারে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও ডেঙ্গুর ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। গত ১ বছরে জেলায় আক্রান্ত ১২ হাজার ২৪৬ জন রোগীর মধ্যে ১১ হাজার ৬৫৮ জন রোহিঙ্গা। আর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ২৩ জনের মধ্যে ২২ জনই রোহিঙ্গা। বাকি ১ জন স্থানীয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, তার স্ত্রী ও সন্তান কয়েকদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিল। প্রথমে ক্যাম্পের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত তার সন্তান ও স্ত্রীর অবস্থা ভালো নয়।

আরো পড়ুন:

লম্বাশিয়া ক্যাম্প, ইস্ট ব্লক ডি/৮ এর বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ছোট ছেলেকে নিয়ে ৪ দিন ধরে হাসপাতালে আছি। এখনো জ্বর একটু কমলেও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি আমার ছেলে। তাকে নিয়ে ভয়ে আছি।’ 

ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে স্থানীয়রাও আতঙ্কে রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার আক্তার কামাল বলেন, ‘আমার এলাকার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ডেঙ্গু আতঙ্কে রয়েছে। এমনকি অনেক পরিবার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।’ 

কক্সবাজার সমিতি পাড়ার মোবারেকা বেগম বলেন, ‘আমার ৮ বছরের ছেলে ফরহাদ হোসেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ৪ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এখন অবস্থা একটু উন্নত হয়েছে।’ 

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজারের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে এক দিনে ভর্তি রয়েছে ৫২ জন। আইসিওতে রয়েছে ৩ জন। গত এক মাসে স্কুল ছাত্রসহ মারা গেছেন ৫ জন। 

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ আশিকুর রহমান জানান, সদর হাসপাতালে অন্যান্য মাসের চেয়ে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। জাতীয় গাইডলাইন অনুযায়ী ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। মশা বিস্তারের স্থান ধ্বংস করা এবং মশারী সহ নানা প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে ভাইরাসজনিত এই রোগ থেকে বাঁচতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, কক্সবাজারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। বর্ষাকালে চিপসের প্যাকেটসহ প্লাস্টিকের নানা বর্জ্যে পানি জমে থাকে। আর এই প্যাকেটই এডিস মশা প্রজননের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে চিকিৎসার পাশাপাশি সচেতনতামূলক প্রচারণা চলছে স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মাঝে। উখিয়া-টেকনাফের প্রতিটি ক্যাম্পে ডেঙ্গু চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি এনজিও-আইএনজিওগুলো কাজ করছে। চিকিৎসার সঙ্গে প্রতিরোধকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে যেখানে সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য না ফেলা, ঘরের আশপাশে পরিষ্কার রাখা ও রাতের বেলায় ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দেন এই চিকিৎসা কর্মকর্তা।

চিকিৎসকরা জানান, বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগ প্রথম দেখা দেয় ১৯৬৪ সালে। তবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে আক্রান্তের হার ছিল খুব কম। এরপর ২০০২-০৩ সালে এবং ২০১৭ সালে পুনরায় বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগ দেখা দেয়।
 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৭ সালে ২ হাজার ৭৬৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। পরের বছর সেই সংখ্যা প্রায় চারগুণ বেড়ে ১০ হাজার ১৪৮ জনে দাঁড়ায়। আর এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা প্রায় দশগুণে বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জনে। যারমধ্যে ১৭৯ জন প্রাণ হারান।
 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়