ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কাকিনার তাঁতীরা এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন

ফারুক আলম, লালমনিরহাট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১০, ৯ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৪:১২, ৯ ডিসেম্বর ২০২২
কাকিনার তাঁতীরা এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন

তাঁত শিল্প আমাদের ঐতিহ্যের অংশ।  লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নে ২৪৫টি ঘর হাতে বুননের এই শিল্পটি এখনো আগলে রেখেছে। বাপ দাদার রেখে যাওয়া পেশা বদল করেননি অনেকেই। 

তারা বলছেন, এই পেশায় এখন পেট চালানো দায়। তাই কেউ কেউ বছরের অর্ধেক সময় চলে যান শহরে,অন্য কোনো কাজে। যারা আছেন, তারাও দিনের অর্ধেক সময় অন্য পেশায় শ্রম দেন। মহিলা আর বৃদ্ধরাই এখন মূল কারিগর। নতুন কেউ নিজেদের জড়াচ্ছেন না এই পেশায়। অথচ এই পেশা কেন্দ্রীক সঠিক বাজার তৈরি হলে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে।

জেলায় কোনো বুটিক-বাটিক, হ্যান্ডিক্রাপ্টের বাজার নেই। ডিলার বা বড় ব্যবসায়ি নাই। এগিয়ে আসেনি কোনো সংস্থা। বিনিয়োগ করেনি কেউ। নেই কোনো প্রকার প্রনোদনা। লালমনিরহাটের ২৪৫টি ঘরের এই ব্যবসাকে অন্য কোথাও পরিচয় করিয়েও দেয়নি কেউ। যার ফলে এর প্রসার বাড়েনি, কমেছেই শুধু।

কারিগররা বলছেন, স্থানীয় বাজার ছোট পরিসরের। নেই ছোট বড় কোনো বিনিয়োগ। ঋণ সুবিধার আওতায় আনলে তারা তাদের এই তাঁত শিল্পের মাধ্যমে তৈরি করতে পারেন নতুন এক অধ্যায়।

দীর্ঘদিনে বাজার গড়ে না ওঠা যেমন একটি বড় সমস্যা- তেমনি এর সাথে সুতার দাম বৃদ্ধি, সুতা পরিবহন খরচ, রেশমি সুতার উৎপাদনের মতো সমস্যাগুলোও ধীরে ধীরে প্রকট আকার ধারণ করছে। সুতা কিনতে যেতে হয় এই শিল্পের প্রধান উপকরণের পাইকারি বাজার বগুড়ায়। 

চরকি ঘুড়িয়ে সুতা তৈরি ও সোয়েটার বুনছিলেন ৫৫ বছরের শরিফা বেগম। তিনি বলেন,আমরা সোয়েটারসহ সব রকম কাজ করতে পারি।শুধু এগুলো করে এখন আর পুষিয়ে উঠতে পারছি না। বাধ্য হয়ে অন্যের কাজ করতে হয়।আর আমার স্বামী মিস্ত্রির কাজ করে।কোনো রকম পিতৃপুরুষের পেশা ধরে রেখেছি। আর্থিক অনুদান পেলে আমরা আরো ভালো কাজ করতে পারবো।

৭০ বছরের হালিম মিয়া বলেন,আমাদের তাঁতীদের বিশাল সমস্যা।আমরা হাঁটু পানিতে ডুবে যাচ্ছি। আমাদের আর্থিক প্রনোদনা প্রয়োজন। আমরা আগে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে সুতা কিনতাম।এখন ৫৫০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। তবুও সুতা পাইনা। আগে ঢাকাসহ বড় শহর থেকে লোকজন দেখতে আসতো। যাওয়ার সময় ১০/২০টা তাঁতের পণ্য নিয়ে যেতো।আগে সব সময় ২০০ থেকে ২৫০টা তাঁত চালু ছিলো। এখন ৬ মাস চালু থাকে, ৬ মাস বন্ধ। সচল তাঁত আছে ৮ থেকে ১০টি।

তাঁতী শফিকুল ইসলাম বলেন, বাপ দাদার পেশা ধরে রেখেছি।আমি নিজেই ৬ মাস এই কাজ করি।কোনো সংস্থা বা সরকার যদি সহায়তা বা দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ দিতো,তবে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম।বর্তমানে প্রতি জোড়া চাদর কাকিনা বাজারে ৫০০ টাকা জোড়া বিক্রি হয়।বাহিরের কোনো ক্রেতা আমাদের নেই।

কাপড় ও পোশাক বিক্রেতারা বলছেন,কাকিনার তাঁতের পণ্য মানে অনন্য।আধুনিক প্যাকেজিং ও একটু প্রচারণা হলেই আরো বেশি ক্রেতা আকৃষ্ট করতে পারবে এবং বেচা বিক্রিও বাড়বে। বাইরের পাইকারি বাজারও ধরা যাবে।

স্থানীয় সুধী সমাজ মনে করছেন,এই তাঁতীদের কাজে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে কাকিনার এই তাঁত ঘুরে দাঁড়াবে। এদের পণ্যের কদর তো আছেই, বাড়বে প্রসার। এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, এনজিওরা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, রংপুরে তাঁত বোর্ড আছে। সেখানে তারা যোগাযোগ করতে পারে। এছাড়াও সরকারের যে ডিপার্টমেন্টগুলো থেকে সহোযগীতা পেতে পারে, সেই সব কর্তৃপক্ষের সাথে যোগযোগ করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের লোন আছে,এগুলো তারা নিতে পারে। আর তাদের প্রতিটা কাজে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগীতা করা হবে।

/টিপু/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়