ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ব্যাংকার রাসেলের পথকলি স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬২

নরসিংদী প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৬, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২  
ব্যাংকার রাসেলের পথকলি স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬২

আমাদের সমাজে একটি শ্রেণি হল সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু। যাদের অধিংকাশেরই কোন পরিচয় নেই। কারো বাবা আছে মা নেই, বা কারো পৃথিবীতে কেউ নেই। খোলা আকাশের নিচেই কাটছে জীবন। শহরের অন্য বাচ্চারা যখন ব্যাগ কাঁধে বাবা-মার হাত ধরে স্কুলে যায় তখন এই পথশিশুরা স্টেশন এলাকায় ঘুরে বেড়ায় একমুঠো খাবারের সন্ধানে। 

নরসিংদীর স্টেশনে ঘুরে বেড়ানো পথশিশুদের একটু শিক্ষিত করতে পাশে দাঁড়িয়েছেন তরুণ ব্যাংকার রাসেল।

তিনি পাঁচ বছর ধরে নরসিংদী স্টেশনের সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের জন্য ‘পথকলি’ নামে ভ্রাম্যমাণ স্কুল পরিচালনা করছেন। সপ্তাহে প্রতি শুক্র ও সোমবার বিকেলে নরসিংদী স্টেশন পার্কে এসব পথশিশুদের নিয়ে বসেন রাসেল। পড়াশোনা শেষে খাবারও দেন। তার ‘পথকলি’ স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬২। বাংলা, ইংরেজি ও আরবি শেখান। আরবি পড়ানোর জন্য একজন শিক্ষক রেখেছেন। রাসেল পড়ান বাংলা ও ইংরেজি। প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেন তাদের।

‘পথকলি’ স্কুলের রাকিব, রাব্বিসহ অন্য সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা জানায়, নিজেদের বাড়ি বলতে রেলওয়ে স্টেশন। এখানেই থাকা-খাওয়া। পরিবার বলতে তেমন কেউ নাই। মানুষের কাছ থেকে যা পাওয়া যায় তা দিয়েই পেট চলে ওদের। 

পথশিশু রাকিব বলে, আমাদের সেই দুঃখ কমিয়ে দিয়েছে আমাদের প্রিয় রাসেল স্যার। তিনি পড়াশোনা শিখান।  এখন ইংরেজি ও আরবি পড়তে ও বলতে পারি আমরা। প্রতি সপ্তাহে দুইদিন স্যার আমাদের পড়ান। ভালো ভালো খাবার ও নতুন জামা দেন। মনদিয়ে পড়াশোনা করতে উৎসাহ দেন। আমরাও শিক্ষিত হয়ে বড় চাকরি করবো।

ব্যাংকার রাসেল বলেন, কলেজ জীবনে ওদের অসহায় অবস্থা দেখে খারাপ লাগত। আরো খারাপ লাগত, ওদের মানুষের কাছে হাতপাততে দেখে। তো বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে শুক্রবার ও রোববার দিনটা বেছে নিলাম ওদের পড়াশোনা শিখানোর জন্য। ওদের স্কুলের নাম ‘পথকলি’। এখন অনেকেই অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। পথকলির প্রথম ব্যাচের অনেক ছাত্র স্কুলে ক্লাস ফোর-ফাইভে পড়ছে। সবুজ, ইমদাদ, রহিম স্কুলে নামও করেছে। 

আরো বলেন, সমাজের বুঁকে এই শিশুগুলোকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। যাতে তারা আর ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে না নেয়। শুরু থেকেই প্রতি ঈদে ওদের কাপড়, রান্না করা খাবার, পয়লা বৈশাখে জামা কিনে দেওয়া। রমজানে পুরো মাসজুড়ে ওদের জন্য ইফতারির ব্যবস্থা করাসহ মৌসুমি ফল দেওয়া এ কাজগুলো করে থাকি। নিজে  খরচ বহন করি। ব্যাংকে চাকরি করে যা পাই, তার অর্ধেক এখানে ব্যয় করি। কেউ দিতে চাইলে বলি, খাবার কিনে খাইয়ে দিয়ে যান।

নরসিংদী ইনডিপেনডেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা বলেন, এই সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চাগুলোকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছে ব্যাংকার রাসেল। উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে কয়েক বছর ধরে এবং সেটা ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাওয়াটা সত্যিই প্রশংসনীয়। সমাজের সকলের উচিত ব্যাংকার রাসেলের মতো অসহায় শিশুগুলোর প্রতি সুদৃষ্টি রাখা।

হৃদয়/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়