ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

তিন বছরেও আলোর মুখ দেখেনি রংপুর শিশু হাসপাতাল 

আমিরুল ইসলাম, রংপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৮, ১১ জানুয়ারি ২০২৩  
তিন বছরেও আলোর মুখ দেখেনি রংপুর শিশু হাসপাতাল 

রংপুরের প্রাণ কেন্দ্রে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে মা ও শিশু হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও তিন বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি চিকিৎসা কেন্দ্রটি। ফলে এই জেলার শিশুদের জটিল রোগ চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয় রাজধানী ঢাকাতে। এছাড়াও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর ওপর বাড়ছে অভিভাবকদের নির্ভরতা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যে প্রত্যাশা নিয়ে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছে দীর্ঘ সময়ে চালু না হওয়ায় তা অধরাই রয়ে গেছে। 

কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবল ও চিকিৎসা যন্ত্রাংশ পেলেই চালু হবে হাসপাতালটি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিশুদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষায়িত এই শিশু হাসপাতালের দাবি করে আসছিল রংপুরবাসী। সেই দাবির প্রেক্ষিতে প্রায় তিন বছর আগে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এর পর করোনা মহামারী মোকাবেলায় হাসপাতালটি ব্যবহার হয় করোনা ডেডিকেটেট হাসপাতাল হিসেবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনো যন্ত্রাংশ ও জনবল নিয়োগ না হওয়ায় প্রাণ পাচ্ছে না রংপুর বিভাগের দীর্ঘ প্রত্যাশার এই শিশু হাসপাতালটি।

জেলা সিভিল সার্জন শামীম আহমেদ বলেন, ‘করোনার কারণে হাসপাতালটি শিশু চিকিৎসার কেন্দ্র হিসেবে চালু করতে দেড়ি হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে সার্বিকভাবে খবর নিচ্ছেন। অচিরেই হাসপাতালটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

রংপুর বিভাগীর স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়ে প্রশাসনিক অনুমোদনসহ যন্ত্রাংশ ও প্রয়োজনীয় লোকবলের জন্য চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি অচিরেই সব সঙ্কট কাটিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রটি উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।’

রংপুর বিভাগে প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। যার  ৪৭ শতাংশই শিশু। বয়স্কদের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত চিকিৎসার নানা সুযোগ সুবিধা থাকলেও শিশুদের জন্য এই সুযোগ একেবারেই সীমিত।

এদিকে, পুরো বিভাগে শিশুদের চিকিৎসার শেষ আশ্রয়স্থল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। যার শিশু ওয়ার্ডের ৮৮টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিশু। মাঝে মধ্যে এই সংখ্যা হাজার অতিক্রম করে। শিশু হাসপাতালটি চালু হলেই কেবল এই চাপ কাটিয়ে শিশু চিকিৎসা সেবায় স্বস্তি ফিরবে এমনটাই মত চিকিৎসা বিশেষজ্ঞসহ স্থানীয়দের।

নগরীর সেনপাড়া এলাকার তৌহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘শিশু হাসপাতালটি চালু হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপর চাপ অনেকাংশে কমে আসবে। রংপুরবাসী শিশুদের জন্য আলাদাভাবে চিকিৎসা সেবারও নিশ্চয়তা পাবেন।’

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ডা. এমএ মোস্তাকিম বলেন, ‘হাসপাতালটি চালু হলে বিনামূল্যে মিলবে শিশুদের জটিল সার্জারিসহ সব ধরনের রোগের চিকিৎসা। একইসঙ্গে প্রাইভেট হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীলতাও কমে আসবে।’

রংপুর জেলা প্রশাসক চিত্র লেখা নাজনীন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালটি চালু করার। তবে হাসপাতাল চালুর বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ দেখছে। সেখান থেকেই একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসলেই হাসপাতালটি উদ্বোধন করতে সক্ষম হবো।’

তিন তলা বিশিষ্ট এই শিশু হাসপাতালের মূল ভবনের প্রতি তলার আয়তন ২০ হাজার ৮৮২ দশমিক ৯৭ বর্গফুট। যার প্রথম তলায় থাকবে ইমার্জেন্সি, আউটডোর, চিকিৎসকদের চেম্বার এবং ল্যাব। দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার, ব্রোন ইউনিট এবং তৃতীয় তলায় ওয়ার্ড ও কেবিন থাকবে। 

এছাড়া চিকিৎসকদের জন্য ছয় তলা বিশিষ্ট ডক্টরস কোয়ার্টার। স্টাফ অ্যান্ড নার্স কোয়ার্টার। দুই তলা বিশিষ্ট গ্যারেজ কাম ড্রাইভার কোয়ার্টার। আছে তিন তলা বিশিষ্ট সুপারিনটেনডেন্ট কোয়ার্টার। আর বিদ্যুৎ সাবস্টেশন স্থাপনের জন্যও নির্মাণ করা হয়েছে আলাদা ভবন।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়