ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

চালু হয়নি বর্জ্য শোধনাগার, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ময়লার ভাগাড়

ইমরান হোসেন, বরগুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১২:০৩, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
চালু হয়নি বর্জ্য শোধনাগার, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ময়লার ভাগাড়

উদ্বোধনের এক বছরেও চালু হয়নি বরগুনা পৌরসভার বর্জ্য শোধনাগার। তাই এখনো পৌর শহরের সোনাখালীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ফেলা হচ্ছে পুরো শহরের বর্জ্য। স্থানীয়রা বলছেন, মশা মাছির উপদ্রবের পাশাপাশি ময়লা পোড়ানো ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে ভুগছেন শিশু বৃদ্ধাসহ সবাই। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্মুক্ত স্থানে হাসপাতাল ও সাধারণ বর্জ্য ফেলার কারণে নানা ধরনের রোগবালাইয়ে সংক্রমিত হওয়ার হুমকিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষজন। 

আরো পড়ুন:

বরগুনা পৌর শহরের সব ময়লা ফেলা হয় সোনাখালীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। প্রতিরাতে ময়লার এ ভাগাড়ে আগুন ধরিয়ে দেয় পৌরসভার পরিছন্নতা কর্মীরা। সেই আগুন জ্বলতে থাকে দিনভর। ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিনসহ প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়া ধোঁয়া ও গন্ধে দুর্বিষহ দিন কাটছে এখানকার মানুষদের। 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হক রাইজিংবিডকে বলেন, ‘বরগুনা পৌরসহরের সব বর্জ্য সোনাখালী এলাকার খোলা স্থানে ফেলে রাখে পৌর কর্তৃপক্ষ। এই বর্জ্যের দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা দুর্গন্ধের মধ্যেই থাকতে হয় আমাদের। পৌর শহরের বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করা হয়েছে ১৬ কোটি টাকা ব্যয় করে। কিন্তু সেটি ব্যবহার করছে না পৌর কর্তৃপক্ষ।’ 

ময়লার স্তূপের একদম সামনেই সাবিনা ইয়াসমিনের বসতঘর। তিনি বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমার বাসার সামনে ময়লা ফেলা হয়। এখন এখানে বিশাল স্তূপ হয়ে গেছে। এখনো প্রতি রাতে ট্রাকে করে ময়লা ফেলা হয় এই স্তূপের ওপর। তখন বাড়ে দুর্গন্ধের মাত্রা। পুরো শহরের ময়লা ফেলানোর পরে এখানে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় কর্মীরা। এতে শ্বাস নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়। একদিকে ময়লার দুর্গন্ধ অন্যদিকে প্লাস্টিক আর পলিথিন পোড়া গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গত পৌরসভা নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কামরুল আহসান মহারাজ আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি নির্বাচিত হলে এখান থেকে ময়লা সরিয়ে নেবেন। এজন্য আমরা তাকে ভোট দিয়েছি। তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের দুই বছর অতিবাহিত হলেও তিনি কথা রাখেননি।’ 

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, পুরো এলাকা জুড়ে দুর্গন্ধ। ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধের কারণে মশা ও মাছিতে বারো মাস অতিষ্ঠ থাকতে হয়। দুর্গন্ধ কমাতে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হয়। এরপরেও মশা মাছি ঘরে ঢুকে যায়। প্রতিদিন ভাত খেতে হয় মশারি টাঙিয়ে। এই এলাকার মানুষ বাজারে গেলে গায়ের দুর্গন্ধ এতটাই তীব্র থাকে যে অপরিচিত লোকজনও বুঝতে পারে আমাদের বাড়ি সোনাখালী।

রাস্তার পাশে খোলা স্থানে ময়লা ফেলার কারণে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীসহ পথচারীরাও।

পথচারীরা বলেন, এই রাস্তাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বুড়িরচর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের বাজারে আসতে এই রাস্তা সহজ পথ। কিন্তু ময়লার দুর্গন্ধে এই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা কষ্টকর। 

এই পথ দিয়ে চলাচল করা স্কুল শিক্ষার্থী ফারজানা, মাহবুবা, হাসি, রাইয়ান ও মনসুর জানান, প্রতিদিন স্কুলে আসা যাওয়া করার সময় দুর্গন্ধ আর প্লাস্টিক পোড়া গন্ধে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। 

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. ফজলুল হক বলেন, ‘খোলা স্থানে হাসপাতাল ও সাধারণ বর্জ্যের সংমিশ্রনে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন স্থানীয়রা। তাই খোলা স্থান থেকে ময়লা সরিয়ে নিয়ে হাসপাতাল বর্জ্য ও সাধারণ বর্জ্য আলাদাভাবে রিসাইক্লিং করতে হবে। দুটি বর্জ্য মিলে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়ে মানুষের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করবে।’ 

এদিকে, অভিজ্ঞ লোকবল না থাকায় বজ্র শোধনাগারের ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানান পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ। তিনি বলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি লোকবল নিয়োগ দিয়ে হেউলিবুনিয়া এলাকার জনশূন্য এলাকায় নির্মিত শোধনাগারটি চালু করা হবে।’ 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়