ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

৩৫ শতাংশ প্লটে নেই শিল্প কারখানা, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্রশিল্প

সুদীপ্ত শামীম, গাইবান্ধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৯, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৭:০৭, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
৩৫ শতাংশ প্লটে নেই শিল্প কারখানা, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্রশিল্প

দেশের উত্তরের অপার সম্ভাবনার জনপদ গাইবান্ধা। এখানে প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরেও দাঁড়াতে পারেনি গাইবান্ধার বিসিক শিল্প নগরী। অদক্ষতা, আমলাতান্ত্রিক জঠিলতা, রাজনৈতিক প্রভাব, বিনিয়োগ, বিজ্ঞান ভিত্তিক পরিকল্পনার অভাব ও দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির কোনো সুফল পায়নি এ জেলার মানুষ। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধা বিসিক শিল্প নগরীতে বরাদ্দ পাওয়া ৩৫ শতাংশ প্লটেই কোনো শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি। শিল্পের নামে বরাদ্দ নিয়ে দখল করে রাখা হয়েছে এখানকার প্লটগুলো। ক্ষুদ্রশিল্পে আগ্রহী উদ্যোক্তা থাকলেও প্লট খালি না থাকায় সেখানে নতুন করে ইউনিট গড়ে তোলার কোনো চিন্তাই করেছে না বিসিক কর্তৃপক্ষ। ফলে ক্ষুদ্রশিল্পের নতুন উদ্যোক্তারা আগ্রহ হারাচ্ছেন।

বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধা শহরের ধানগড়া এলাকায় ১৯৯৬ সালে ১৫ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠে বিসিক শিল্প নগরী। এই জমির মধ্যে ১০৫ প্লটে ৫০টি শিল্প কারখানার ইউনিট তৈরী করা হয়। এখানকার সব প্লটই বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৫০টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে মাত্র ৩৪টিতে শিল্প কারখানা চালু রয়েছে। বাকি ১৬টি প্লটের বরাদ্দ পাওয়া মালিকদের বারবার কারখানা চালু করার তাগিদ দেওয়া হলেও কারখানা চালু করা সম্ভব হয়নি।

বিসিকের প্লট মূলত ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। উদ্যোক্তারা চাইলে একবারে প্লটের ইজারার পুরো অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। আবার অর্ধেক নগদ ও বাকিটা ৫ বছরে ১০ কিস্তিতেও পরিশোধ করতে পারেন। ৯৯ বছরের ইজারা হলেও যে কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে বিসিক ওই প্লট বাতিল করতে পারে। তবে যারা বরাদ্দ পায়, তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বিসিক। 

গাইবান্ধা শিল্প নগরীর সবগুলো কারখানা চালু থাকলে প্রতিদিন ১৭০০ থেকে ১৮০০ শ্রমিক কাজ করতে পারবেন। বর্তমানে এ শিল্প নগরীতে প্রতিদিন ৮০০ শ্রমিক কাজ করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সরিষা তেলের ৫/৬ টি মিল বাদ দিয়ে বরাদ্দকৃত শিল্প ইউনিটের প্রায় সব কারখানাই বন্ধ। কিছু কিছু শিল্প কারখানা মাঝে মধ্যে চালু হয়। মালিকরা আবার পরে বন্ধ করে রাখেন তাদের নিজেদের মত করে। 

গাইবান্ধা বিসিকের কোনো প্রাচীর নেই। ফলে যে কোনো মুহূর্তে বিসিকে যে কেউ প্রবেশ করতে পারেন। ভেতরে চলাচলের রাস্তাগুলোর পিচ উঠে গেছে অনেক আগেই। যার ফলে শুষ্ক মৌসুমেও গর্ত হয়ে গেছে অনেক স্থানে। সেগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। 

উদ্যোক্তারা জানান, গাইবান্ধা বিসিক শিল্প নগরীতে সম্ভবনাময় ক্ষুদ্র শিল্প ইউনিট গড়ে তুলতে বরাদ্দ পাওয়ার পর অব্যবহৃত প্লটগুলো লিজ বাতিল করে নতুনভাবে বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা নিলে এ অঞ্চলের বেকারত্ব ঘোচানো সম্ভব হবে। তাই প্লটগুলোর লিজ বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জেলার আগ্রহী উদ্যোক্তারা।  

উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিসিক শুরু থেকেই অনেকে প্লট দখল করে আছে। প্লটের মালিকরা কোনো ব্যবসাও করছেন না। আমরা নতুন উদ্যোক্তারা বিসিকে জায়গার অভাবে পণ্য তৈরী করতে পারছি না। যেসব প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পরেও কোনো কারখানা বা ব্যবসা চালু হয়নি সেগুলো নতুন করে আমাদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি করছি।’

নারী উদ্যোক্তা ফরিদা ইয়াসমিন শোভা বলেন, ‘বিসিকে শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না পণ্য তৈরীর জায়গা করে দিতে হবে। বিসিকের সব প্লটই বরাদ্দ হয়ে গেছে। অনেকেই বিসিক চালুর সময় প্লট বরাদ্দ পেলেও এখন কারখানা চালু করেনি। সেগুলোর লিজ বাতিল করে নতুন উদ্যোক্তাদের প্লট বরাদ্দের দাবি জানাই।’

শহরের ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ বাবু বলেন, ‘বিসিক শিল্প নগরীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উদ্যোক্তারা কারখানা স্থাপন করতে ব্যর্থ হলে প্লট বরাদ্দ বাতিল করে সেটি অবশ্যই অন্য উদ্যোক্তাকে দিতে হবে। শুধু জায়গা দখল করে ফেলে রাখা যাবে না। অন্যদের ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে।’

গাইবান্ধা বিসিকেব শিল্পনগরী কর্মকর্তা মো. সুমন মিয়া বলেন, ‘এ শিল্প নগরীতে ৩৪টি কারখানা চালু আছে। তবে এগুলোও মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকে। অনেকেই অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে কারখানা বন্ধ করে রেখেছেন। কারখানা চালু থাকলে শ্রমিকদের তো বেতন দিতে হয়। এজন্যই মালিকরা কারখানা বন্ধ করে রাখেন।’ 

গাইবান্ধা বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রবীন চন্দ্র রায় বলেন, ‘যারা শিল্প প্লট বরাদ্দ নিয়ে কোনো কার্যক্রম চালাচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার প্লট বরাদ্দ নিয়ে ফেলে রাখা মালিকদের কারখানা চালুর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। ফেলা রাখা প্লট মালিকদের বিষয়ে জেলা প্রশাসককে মহোদয়কে অবগত করা হবে।’

মাসুদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়