ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যুবককে ২২ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল

বাগেরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৫, ২৮ মার্চ ২০২৩  
যুবককে ২২ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল

বাগেরহাটের রামপালে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চুরির অপবাদ দিয়ে শেখ আব্দুল্লাহ (২৫) নামের এক যুবককে প্রায় ২২ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে নির্যাতনের পর ফাঁকা স্ট্যাম্পে সই রেখে ভুক্তভোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। ওই স্ট্যাম্পে নির্যাতনের শিকার যুবকের মার সইও নিয়েছে অভিযুক্তরা।

ঘটনাটি ঘটেছে রামপাল উপজেলার ব্রী-চাকশ্রি এলাকায়। 

নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বাগেরহাট সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ এলাকার শেখ গফুরের ছেলে। সে বর্তমানে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ইজিবাইকে করে বাগেরহাটে আসছিলেন আব্দুল্লাহ। রামপাল উপজেলার চাকশ্রি নামক স্থান থেকে জোর করে তাকে তুলে নিয়ে যান ব্রি চাকশ্রী এলাকার শেখ হাসান আলী ও ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন। পরে চুরির অপবাদ দিয়ে প্রায় ২২ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় আব্দুল্লাহকে। গত শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। 

এদিকে চারদিন পার হলেও এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক।

ভাইরাল হওয়া ২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ঘরের পেছনে আম গাছের সঙ্গে বেঁধে এক যুবককে মারধর করছে কয়েকজন যুবক। পরে মাটিতে ফেলে ওই যুবককে গালিগালাজ করা হচ্ছে। এক পর্যায়ে দুই পায়ের তলায় মোটা লাঠি দিয়ে পেটাতে দেখা যায় অভিযুক্ত আবু সালেকে। নির্যাতনে ভুক্তভোগী যুবককে ‘মাগো’ ‘মাগো’ বলে চিৎকার করতে শোনা যায়।

নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বলেন, পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ব্রি চাকশ্রী এলাকার শেখ হাসান আলীকে আমি ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা ধার দেই। কিন্তু সে আমাকে টাকা না দিয়ে ঘোরাতে থাকে। পরবর্তীতে শেখ হাসান আলী তার মালিকানাধীন ইজিবাইকটি আমার কাছে বিক্রি করে দেন। প্রতিদিন ২০০ টাকা ভাড়ায় তিনি ইজিবাইকটি চালাতে থাকেন। কিন্তু কয়েকদিন টাকা দেওয়ার পরে আর টাকা দিচ্ছিলেন না শেখ হাসান আলী। যার কারণে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি ইজিবাইক নিয়ে বিক্রি করে দেই। পরবর্তীতে এই বিষয় নিয়ে আর কথা হয়নি। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ইজিবাইকযোগে রামপাল থেকে বাগেরহাট আসার পথে চাকশ্রী নামক স্থান থেকে  শেখ হাসান আলী ও চেয়ারম্যানের ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন মিলে আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে যান। 

তিনি আরও বলেন, ব্রি চাকশ্রী এলাকায় শেখ হাসান আলীর বাড়িতে নিয়ে আমাকে নির্যাতন করে। সন্ধ্যার দিকে আমার বন্ধু প্রাইভেট কার চালক আল আমিনকে চাকশ্রী আসার জন্য আমাকে দিয়ে ফোন করায়। পরে আল আমিন গেলে তাকেও বেঁধে রাখে হাসান ও আবু সালেহরা। সারারাত আমাকে নির্যাতন করেছে আবুল সালেহ ও হাসানসহ কয়েকজন। তারা আমার শরীরে সিগারের ছেঁকা ও আঙ্গুলের মধ্যে খেজুরের কাটা ঢুকিয়েছে। চোখ উঠিয়ে ফেলার কথা বলেছে।

আব্দুল্লাহ আরও বলেন, সারারাত অত্যাচারের পরে শুক্রবার দুপুরে বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর কাছে নিয়ে যায় আমাকে ও আমার বন্ধু আল আমিনকে। তিনি কোনো কথা না শুনে আমাদের চোখ তুলে ফেলতে বলেন। পরে ফাঁকা স্ট্যাম্পে আমার এবং আমার মায়ের সই রেখে এবং ৩ লাখ টাকা দেওয়ার স্বীকারোক্তি রেখে ছেড়ে দেন। আমার উপর হামলাকারীদের কঠিন বিচার চাই।

আব্দুল্লাহর মা খালেদা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে যেভাবে নির্যাতন করেছে তা মানুষে করে না। চেয়ারম্যানের কাছে যেয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। আমি বিচার চাই।
প্রত্যক্ষদর্শী শেখ আব্দুল্লাহ‘র বন্ধু প্রাইভেটকার চালক আল আমিন বলেন, আল আমিনের ফোন পেয়ে চাকশ্রী বাজারে যাই। সেখানে হাসান ও আবু সালেহ আমাকে বেঁধে রাখে। সারারাত আব্দুল্লাহকে নির্যাতন করে। শুক্রবার দুপুরে আমাদের ছেড়ে দেয়। 

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ বলেছেন, তার সামনে কোনো নির্যাতন হয়নি। আবু সালেহ তার ভাগ্নে নয়।

বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্ধার বলেন, যুবক আব্দুল্লাহ‘র শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম রয়েছে। মারাক্তক ইনজুরি রয়েছে কিনা সে বিষয়ে পরিক্ষার পর জানা যাবে।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, ভিডিওটি আমরা দেখেছি। বিষয়টির তদন্ত চলছে। অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

টুটুল/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়