কম খরচে হারভেস্টারে ধান কাটতে আগ্রহী শেরপুরের কৃষক
শেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
শেরপুরে ধান কাটা ও মাড়াইসহ কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। এ সব যন্ত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার ও ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্র। এর মধ্যে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে কৃষি বিভাগের ভর্তুকিতে কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে সাড়ে চার গুণেরও বেশি। এতে কৃষকের ফসল ঘরে তুলতে খরচ যেমন কমছে, পাশাপাশি সময়ও রক্ষা পাচ্ছে।
চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় শুধু ধান কাটা ও মাড়াইয়ে যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে কৃষকের দুই তৃতীংশের বেশি টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানান কৃষি বিভাগ। এ যন্ত্র দিয়ে একদিনে প্রায় ১০ একর জমির ধান কাটা ও মাড়াই করা সম্ভব। প্রতি একরে ধান কাটা ও পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা ১২ থেকে ১৬ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নেন। যেখানে সময় লাগে ৩ দিন। কিন্তু যন্ত্রের মাধ্যমে কাটা ও মাড়াই এবং ধান বস্তায় ভরতে খরচ হবে মাত্র ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা, যার সময় লাগে ১ দিন।
জেলায় এবার প্রায় ৯১ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। চলতি বছরে জেলায় ১০৬টি হারভেস্টার মেশিন চলমান রয়েছে এবং আগামীতে তা আরও বাড়ানো হবে বলে কৃষি বিভাগ জানায়।
এক সময় ধান কাটার মওসুম শুরু হলে কৃষকরা উচ্চমূল্যে শ্রমিক নিয়োগে হিমশিম খেতে হতো। হন্যে হয়ে ছুটতে হতো শ্রমিকের পিছু পিছু। ধানের দামের চেয়ে বেশি দামে শ্রমিকের মূল্য পরিশোধ করতে হতো কৃষকদের। এতে হতাশায় ভুগতো কৃষকরা। এ হার্ভেস্টার মেশিনে এক একর জমির ধান কাটতে সময় ব্যয় হচ্ছে কম। শুধু তাই নয়, শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে বাড়িতে এনে তা মাড়াই, শুকানো, খড় শুকাতে বাড়তি শ্রমিকের খরচ কমে যাওয়ায় কৃষকরা ধান চাষে আগের চেয়ে অধিক লাভের মুখ দেখছে।
হারভেস্টার ব্যবহারকারী শ্রীবরদী উপজেলার মাদারপুর গ্রামের কৃষক আবু সালেহ বলেন, ‘হারভেস্টার শুধু সাশ্রয়ীই নয়, আমাদর অনেক সময়ও বাঁচায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে মাঠে পাকা ধান রেখে আমরা রাতে ঘুমাতে পারি না। এ মেশিন আসায় আমরা দ্রুত ধান কাটা মাড়াই করে দিনের দিন ফসল ঘরে তুলতে পারি।’
হারভেস্টার মালিক মোশারফ হোসেন বলছেন, ‘হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটলে কৃষকরাও কম মূল্যে ধান কাটতে পারবে। আমরাও হারভেস্টার মূল্য পরিশোধে কিস্তি দিয়েও লাভবান হচ্ছি। আমার একটি মেশিনের দাম প্রায় উঠে গেছে। তাই নতুন আর একটি মেশিনের অর্ডার দিয়েছি।’
এ বিষয়ে শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. সুকল্প দাস জানায়, দেশে ধান যখন পাকে তখন প্রতি বছর শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। এ জন্য সরকারের কৃষি ভর্তুকিতে হারভেস্টার মেশিন দেয়া হচ্ছে। এতে কৃষকেরা সহজে ধান কাটতে পারবে। এখানে হারভেস্টার সংকট দেখা দিলে অন্য জেলা থেকে হলেও এখানে এনে ধান কাটার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
তারিকুল/বকুল