ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শ্রীপুরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে নিষিদ্ধ সাকার ফিশ

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ২৮ মে ২০২৩  
শ্রীপুরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে নিষিদ্ধ সাকার ফিশ

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শীতলক্ষ্যা, সুতিয়া, খিরু ও মাটিকাটা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে নিষিদ্ধ সাকার ফিশ। যেকোনো মাছ শিকারের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে উঠছে সাকার মাছ। এমনকি এই মাছ ছড়িয়ে পড়ছে খাল বিল পুকুর ডোবায়। ফলে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছের পরিমাণ কমেছে বহুগুণ।

এদিকে, নিষিদ্ধ সাকার মাছ নদ-নদী থেকে ধ্বংস করা বা এ থেকে মুক্তি পাওয়ার তেমন কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেয়নি মৎস্য বিভাগ। নদ-নদী থেকে খাল বিল এমনকি বর্তমানে বাড়ির পাশের পুকুরেও এই মাছ ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে আছেন স্থানীয় জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। জীব বৈচিত্র্যের জন্য যথেষ্ট হুমকি নিষিদ্ধ সাকার ফিশ। এই মাছ দমনে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জেলেরা।

রোববার (২৮ মে) সরেজমিন শীতলক্ষ্যা সুতিয়া খিরু এবং মাটিকাটা নদী ঘুরে স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর পূর্বে মাঝে মধ্যে দু-একটি সাকার ফিশ নামক নিষিদ্ধ মাছ ধরা পড়ত বড় নদীগুলোতে। কিন্তু সম্প্রতি যেকোনো জালে ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসছে সাকার ফিশ। তার তুলনায় দেশীয় প্রজাতির মাছ অল্প পাওয়া যাচ্ছে। যেকোনো জাল ফেলা হলে অন্য মাছ না ধরা পড়লেও সাকার ফিশ ধরা পড়ছে প্রচুর।

নান্দিয়া সাঙ্গুন জেলে পাড়ার জেলে রাখাল বর্মণ জানান, নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারণে কয়েক বছর আগে থেকেই দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ কমেছে বহুগুণ। আগে জাল ফেলা হলেই প্রচুর পরিমাণ দেশীয় মাছ উঠত। সম্প্রতি বছরগুলোতে বড় সমস্যা এই নিষিদ্ধ মাছ। নদীতে জাল ফেলা হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসছে সাকার ফিশ।

অপর জেলে মাদব বর্মণ বলেন, আগে নৌকা আর জাল হলেই আমাদের সংসার ভালো চলত। কিন্তু সম্প্রতি অন্য পেশায় যেতে হয়। অনেক জেলে ইতিমধ্যে পেশা বদলে ফেলেছে। কি করা নদীতে মাছ নেই, অনেকেই নদী থেকে জাল ফেলে শামুক কুড়িয়ে এনে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

তিনি আরও বলেন, কারখানার বর্জ্যের কারণে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি নষ্ট হয়ে গেছে কয়েক বছর আগেই। যার কারণে নদীগুলোতে এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। তবে সম্প্রতি একটি কাঁটাওয়ালা মাছের দেখা মিলছে প্রচুর। মানুষ মুখে মুখে বলছে এটি সাকার ফিশ। এই মাছ নদীতে আসার পরপরই দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ কমে গেছে। নদীগুলো এই মাছে ভরে গেছে। জাল ফেললেই এই মাছ ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসছে।

কাওরাইদ গ্রামের স্কুলশিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, নিষিদ্ধ এই মাছ ইতিমধ্যে দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ গিলে খেয়েছে। এরপর আশপাশের খাল বিল ডোবা, এখন চলে এসেছে পুকুরে। আশ্চর্যের বিষয় হলো মৎস্য বিভাগ নিষিদ্ধ সাকার ফিশের ব্যাপারে তেমন কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। নদ-নদীগুলোতে যেভাবে নিষিদ্ধ সাকার ফিশ ছড়িয়ে পড়ছে। এটা রীতিমতো আতঙ্কিত হওয়ার মতো।

বরমী এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী মাজাহার হোসেন বলেন, নিষিদ্ধ সাকার ফিশ এখন আমাদের মৎস্য খামারে মিশে গেছে। এরা (সাকার ফিশ) এতটাই ক্ষতিকারক যে মাছের পোনা খেয়ে সকল মাছ দমন করে ফেলতে পারে। আমরা যতদূর জানতে পারছি এরা অনেক কম অক্সিজেনে দীর্ঘ সময় বাঁচতে পারে, তাই এদের সহজে নিধন করা সম্ভব নয়। নদীর পাড়ে অথবা পুকুর পাড়ে একদিন ফেলে রাখলেও এ জাতীয় মাছ বেঁচে থাকে। এরা খুবই শক্তিশালী। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি মৎস্য বিভাগের।

শ্রীপুর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, সাকার ফিশ শুধু আজ নদ-নদীতে সীমাবদ্ধ নয়। আজ নিষিদ্ধ সাকার ফিশ খাল বিল ডোবা নালা পুকুরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এটি নিধনের জন্য মৎস্য বিভাগ নানা ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়ে কাজ করছে। নিষিদ্ধ এই মাছটি যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই মেরে ফেলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাছটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে এটি নিধন করতে সময় লাগবে।

তিনি আরও জানান, নিষিদ্ধ সাকার ফিশ নদ নদী খাল বিলে থাকা অনন্য মাছের ডিম খেয়ে মাছের বংশবৃদ্ধিতে বাঁধা সৃষ্টি করছে। তাই নিষিদ্ধ সাকার ফিশ দমনে সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে।

রফিক/কেআই

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়