ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রাজবাড়ী পৌরসভার বেশিরভাগ সড়কেরই বেহাল দশা, চলা দায়

রাজবাড়ী সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১২:৪৯, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
রাজবাড়ী পৌরসভার বেশিরভাগ সড়কেরই বেহাল দশা, চলা দায়

রাজবাড়ী পৌরসভার বেশির ভাগ রাস্তারই এখন বেহাল দশা। এ কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীকে। 

দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল সড়ক, এতিমখানা সড়ক, ভবানীপুর সড়ক, ড্রাইআইচ ফ্যাক্টরি সড়ক, বিনোদপুর ভাজনপাড়া সড়ক, লক্ষীকোল সড়ক, ভকেশনাল সড়কগুলো ভেঙে গেছে। কোথাও সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। বৃষ্টি হলেই জমে যায় পানি। 

হাসপাতাল সড়ক দিয়ে দিনের বেশির ভাগ সময়ই রোগী ও তার স্বজনরা যাতায়াত করে থাকেন। রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে গাড়ির ঝাঁকিতে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শহরের দুই লেনের প্রধান সড়কটিরও বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। 

পৌর কর্তৃপক্ষের হিসাবে পৌর এলাকার ১০৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৪০ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। তারা তাকিয়ে আছে প্রকল্পের দিকে।

সরেজমিনে হাসপাতাল সড়ক পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে, সারের গোডাউনের সামনে, খবিরের দোকানের সামনে, ২ নং বেড়াডাঙ্গার মাথায়, ন্যাশনাল ব্যাংকের সামনে, শহিদুলের চটপর্টির দোকানের সামনে ভেঙে গেছে। কোথাও রাস্তার দুই পাশই দেবে গেছে। বৃষ্টি হলেই এসব স্থানে পানি জমে থাকে।

রাজবাড়ী রেলগেট-অন্তারমোড় সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশ অটেরিকশা, রিকশা, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন যাতায়াত করে থাকে। এই সড়কের নুরপুর পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এলাকা পড়েছে রাজবাড়ী পৌরসভার মধ্যে। এই দেড় কিলোমিটারের অন্তত অর্ধেক স্থানজুড়েই ভাঙাচোরা। বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে কোথাও খোয়া কোথাও মাটি বেরিয়ে গেছে।

এ রুটে চলাচলকারী দাদশির জুয়েল শেখ বলেন, আমি এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শ্রীপুর টার্মিনালে কাজে যাই। রাস্তার এমন অবস্থায় আমি ভালোভাবে বাইক চালাতে পারি না। রাস্তার প্রায় সব জায়গায়ই গর্ত। আবার গর্তের মধ্যে পানি জমে থাকে। যেকোন সময় ঘটতে পারে দূর্ঘটনা। এছাড়া অটো,  রিকশা এইসব গাড়িও চলে খুব ধীরে। অনেক সময়ই দেখি এই রুটে চলাচল করা রিকশা কিংবা অটো নষ্ট হয়ে যায়।

বিনোদপুর এলাকার বাসিন্দা বিষু সরকার জানান, তিনি রাজবাড়ী রেলগেট থেকে অন্তারমোড় পর্যন্ত অটোরিকশা চালান। এই রাস্তার অবস্থা খুবই ভয়ংকর। যে গাড়ি চালাবে তার অবস্থাও খারাপ। যাত্রীদের অবস্থাও খারাপ। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে গর্ত হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যেই গাড়ি উল্টে যাচ্ছে। প্রতিদিন একটা দুইটা বিয়ারিং ভেঙে যাচ্ছে। একটা বিয়ারিংয়ের দাম ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। যা আয় হয় তার অর্ধেকই চলে যাচ্ছে গড়ি মেরামতে। চাল ডাল খাওয়াই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সজ্জনকান্দার পাবলিক হেলথ মসজিদ থেকে টেকনিক্যাল স্কুল হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সড়কটিরও বেহাল অবস্থা। এখানে সামান্য বৃষ্টি হলে জমে যাচ্ছে পানি। বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ ও জলাবদ্ধতায় সড়কটি হয়ে পড়েছে চলাচলের অনুপযোগী। এখানে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বৃষ্টি হলেই দোকানের সামনে পানি জমে যায়। যখন যানবাহন যায় তখন রাস্তার পানি দোকানের মধ্যে চলে আসে। খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে আছেন তারা। পানি বের হওয়ার কোনো জায়গা নেই। পানি পার হয়ে কেউ তাদের দোকানে আসতে চায় না। এ কারণে ব্যবসার অবস্থা খারাপ যাচ্ছে।

শহররের শ্রীপুরের বাসিন্দা সোহাগ মিয়া বলেন, আমি প্রতিনিয়তই হাসপাতাল সড়ক দিয়ে চলাফেরা করি।একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে থাকে। তাছাড়া রাস্তাটি খানাখন্দে ভরে গেছে। সবসময় রোগী যাতায়াত করে এই রাস্তায়, অথচ আমাদের চলাফেরা করতেই কষ্ট হয়। রাস্তাটা দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মোহাম্মদ আলী বলেন, তাদের পৌরসভায় বাৎসরিক উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। এ পরিকল্পনায় সব রাস্তাগুলো ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন করার চিন্তা ভাবনা আছে। কিন্তু আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে তেমন কোনো উন্নয়ন কাজ করতে পারিনা। কারণ, পৌরসভার যে টাকা আয় হয় সেই টাকার বেশি খরচ হয়ে যায়। উন্নয়নের জন্য প্রজেক্টের উপর নির্ভর করতে হয়। এই মুহূর্তে যে প্রকল্প চলমান আছে তা দিয়ে কিছু উন্নয়ন এই অর্থ বছরে করতে পারবেন। বাকীটা বড় কোনো প্রজেক্টের উপর নির্ভরশীল। ইউপিজিপি নামে একটি প্রজেক্ট একনেকে অনুমোদন হলে রাজবাড়ীর উন্নয়ন এক ধাপ এগিয়ে যাবে। তা নাহলে খুব খারাপ অবস্থায় চলে যাবে। প্রধান সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো এ প্রকল্পের আওতায় থাকবে। 

তিনি বলেন, রাজবাড়ী পৌরসভার মধ্যে ১০৭ কিলোমিটার রাস্তা আছে। এর ৪০ কিলোমিটারের উপরে বেহাল দশা।

রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র আলমগীর শেখ বলেন, একনেকে একটি প্রকল্প পাস হওয়ার কথা আছে। এই প্রকল্প পাস হলে রাজবাড়ী পৌরসভার রাস্তাগুলো সংস্কার করা হবে। আমরা এখন একনেকের প্রকল্পটি পাস হওয়ার অপেক্ষায় আছি।

রবিউল আউয়াল/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়