ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া)
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলামের জয়ের নেপথ্যে
সাভার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
বাঁ থেকে : সাইফুল ইসলাম, এনামুর রহমান ও তৌহিদ জং মুরাদ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে জয় পেয়েছেন সাভার উপজেলার স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ও সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদকে পরাজিত করেছেন।
সাইফুল ইসলামের বিজয়ী হওয়ার নেপথ্যে শিল্লাঞ্চল আশুলিয়ার শ্রমিকদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক, করোনার সময় শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো, আওয়ামী লীগের একটি অংশে তৌহিদ জং মুরাদকে নিয়ে ভয়, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বিষয়ে মুরাদ জংয়ের বিরুদ্ধে সাইফুলের সমর্থকদের প্রচারণাকে মূল কারণ হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা।
ঢাকা-১৯ আসনের ফলাফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৪১২ ভোট। নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ পেয়েছেন ৭৬ হাজার ২০২ ভোট। ভোটের ব্যবধান ৮ হাজার ২১০টি। এনামুর রহমান পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৩৬১ ভোট।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মী জানান, এবারের নির্বাচনে সাইফুল ইসলামের পক্ষে কাজ করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ভোটের আগে শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সাইফুল ইসলামের করোনাকালে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো ও মৃত শ্রমিকদের জন্য কবরস্থানের জায়গা করে দেওয়ার ঘোষণা এবং রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিকে সামনে এনে ওই ঘটনায় তৎকালীন সংসদ সদস্য মুরাদ জংয়ের বিপক্ষে শ্রমিকদের সমর্থন যোগান। এছাড়া সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজিবের সঙ্গে মুরাদ জংয়ের পূর্ব রাজনৈতিক বিরোধও ভোটে প্রভাব ফেলে। সাইফুলকে একপর্যায়ে রাজিব সমর্থন দিয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। ভোটের আগে রাজিব দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের সঙ্গে থাকলেও শেষ পর্যন্ত তার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন শেষে মূহুর্তে তিনি সাইফুল ইসলামের পক্ষে কাজ করেছেন। স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের কারণে সাইফুল ইসলাম ওই এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরাও তার সঙ্গে ছিলেন৷ মুরাদ জংয়ের সঙ্গে মঞ্জুরুল আলম রাজিবের পূর্ব রাজনৈতিক বিরোধ থাকায় মুরাদ ঠেকাও অবস্থান নিয়েছিলো রাজিবের কর্মীরা। এসব কারণে পরাজিত হন মুরাদ জং। অপরদিকে এবার তৃণমূলে এনামুর রহমানের সমর্থন কম ছিলো। ভোটের মাঠে সাইফুল ইসলাম ও মুরাদ জংয়ের আধিপত্য থাকায় আগে থেকেই তিনি ছিলেন কোনঠাসা অবস্থায়।
স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল কামরান বলেন, সাইফুল ইসলাম খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নেন। করোনার সময়ে তিনিই কেবল শ্রমিকদের পাশে ছিলেন। রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের সেবা করার পর এনামুর রহমান সংসদ সদস্য হলেও পরে আর শ্রমিকদের পাশে ছিলেন না। রানা প্লাজার রানার সঙ্গে মুরাদ জংয়ের সুসম্পর্ক ছিলো। সব মিলিয়ে ৩০-৪০ টি শ্রমিক সংগঠন সাইফুল ইসলামকে সমর্থন দিয়েছে। আর তিনি নির্বাচিতও হয়েছেন।
নির্বাচিত মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সাভারে চাঁদাবাজ, মাদক ও সন্ত্রাসীদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সবার উন্নয়নে কাজ করবো। স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত হলেও আওয়ামী লীগের হয়েই সংসদে যেতে চাই।
তিনি বলেন, যারা নৌকার পক্ষ থেকে ঈগলের পক্ষে গিয়েছে। ঈগলের পক্ষে গিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে, ভোটের পরিবেশ নষ্ট করেছে-সাংগঠনিকভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৬ জন। এরমধ্যে ভোট পড়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৬৫০টি। ভোট বাতিল হয়েছে ৪ হাজার ৯১টি।
সাব্বির/টিপু