ঢাকা     শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

বেনাপোল সীমান্তে  বিএসএফ’র গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৯, ২৩ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২২:৩০, ২৩ জানুয়ারি ২০২৪
বেনাপোল সীমান্তে  বিএসএফ’র গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহত

নিহত সিপাহী রইশুদ্দীনের গ্রামের বাড়ি, ইনসেটে রইশুদ্দীন

যশোরের বেনাপোল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র গুলিতে যশোর-৪৯ বিজিবির সিপাহী রইশুদ্দীন নিহত হয়েছেন। গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) ভোরে বেনাপোল সীমান্তের ধান্যখোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

৪৯ যশোর বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জামিল সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ৩৩ মিনিটে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রইশুদ্দীনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। 

বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়– সোমবার ভোররাত আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে বিজিবির টহল দল ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট এলাকায় ভারত থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে একদল গরু চোরাকারবারিদের আসতে দেখে। বিজিবি সদস্যরা চ্যালেঞ্জ করলে তারা দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওই টহল দলের সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চোরাকারবারিদের পেছনে ধাওয়া করেন এবং ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

এতে আরও জানানো হয়— প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, তিনি বিএসএফ’র গুলিতে আহত হয়ে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পরপরই এ বিষয়ে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং জানা যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রইশুদ্দীনের মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসএফকে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানোর পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবে তীব্র প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া, দ্রুততম সময়ে মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সব পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

তবে সীমান্তের স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ধান্যখোলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভোরে চোরাকারবারিরা গরু আনতে ছিল। বিষয়টি টের পেয়ে বিএসএফ চোরকারবারিদের ধাওয়া করে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়ে। এ সময় বিজিবি সদস্য সিপাহী রইশুদ্দীন বিএসএফ সদস্যদের দেখে সামনে এগিয়ে যান। ঘটনার সময় রইশুদ্দীন সাদা পোশাকে ছিলেন। রইশুদ্দীন বিএসএসফ সদস্যদের কাছে নিজেকে বিজিবি সদস্য পরিচয় দেন এবং ঘটনার ব্যাপারে জানতে চান। পরিচয় পাওয়ার পরও বিএসএফ সদস্যরা তাকে গুলি করে আহত করেন। এরপর বিজিবির আহত ওই সদস্যকে ভারত সীমান্তের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।

ভারতের এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দুপুর ২টার দিকে রইশুদ্দীনের মৃত্যু হয় বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

এদিকে স্থানীয়রা জানান, তারা ভোরে অন্তত ৮/৯ রাউন্ড গুলির শব্দ শুনেছেন। বিজিবি ক্যাম্পে পাচার হওয়া দুটি গরুকেও আটক রাখা হয়েছে। সীমান্তে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে স্থানীয়দের দাবি। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল জোলিপাড়া ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন বিজিবির দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিওয়ন কমান্ডার ও যশোর-৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জামিল।

নিহত সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের মনাকষা ইউনিয়নে। তার বাবার নাম কামরুজ্জামান। ২০১৫ সালের জুনে রইশুদ্দীন বিজিবি সিপাহি পদে যোগ দেন। এরপর থেকে বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের অধীনে সীমান্তরক্ষায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। বর্তমানে কর্মরত ছিলেন যশোর-৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপিতে। সোমবার ভোরে বেনাপোল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র গুলি পেটে বিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। পরে তার মরদেহ বিএসএফ সদস্যরা নিয়ে যায়। 

রইশুদ্দীনের ভাই ও বিজিবি সদস্য মাসুম রেজা বাবু বলেন, আমি সোমবার রাতে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ৪৯ ব্যাটালিয়নে অবস্থান করছি। কখন মরদেহ বুঝে পাব, তারও নিশ্চয়তা নেই। শুনেছি বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়েছে। সিদ্ধান্ত কী, সেটিও জানতে পারিনি। 

তিনি বলেন, আমরা পাঁচ ভাই-বোন। এর মধ্যে আমি আর রইশুদ্দীন বিজিবিতে ও বড় ভাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন। রইশুদ্দীনের চার বছরের মেয়ে রাফিয়া ও পাঁচ মাসের ছেলে সন্তান রয়েছে।’

রিটন/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়