ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

তরিক বাহিনীর শীর্ষ ৩ সন্ত্রাসীকে রিমান্ডে নিয়েও অস্ত্র উদ্ধার হয়নি

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৩, ২৩ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৪:১৮, ২৩ মার্চ ২০২৪
তরিক বাহিনীর শীর্ষ ৩ সন্ত্রাসীকে রিমান্ডে নিয়েও অস্ত্র উদ্ধার হয়নি

রাজশাহীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তরিকুল ইসলাম ওরফে তরিক কারাগারে রয়েছেন। তরিক ছাড়াও এ বাহিনীর আরও চারজন এখন কারাগারে। এদের শীর্ষ তিনজনকে রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আবারও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ এখনও তরিকের ব্যবহৃত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি।

সন্ত্রাসী তরিক মহানগর ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে আকরাম হোসেন গুড্ডু নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে গুলি করার মামলায় তরিকসহ তার বাহিনীর ৫ জন এখন কারাগারে। গত বছরের ২৩ নভেম্বর রাতে নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনিরকে লক্ষ্য করে গুলি করেন তরিক। গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুড্ডুর পায়ে লাগে। এ অভিযোগে গুড্ডুর ছোট ভাই আকতারুল ইসলাম তারেক তরিকসহ বাহিনীর ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গুড্ডুকে গুলি করার বিষয়ে মামলা হওয়ার পর তরিক বাহিনীর ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া পরবর্তীতে এজাহারনামীয় আরও ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর তরিকসহ বাকি আসামিরা পলাতক ছিলেন। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন তরিক বাহিনীর প্রধান তরিক, সেকেন্ড ইন কমান্ড সনেট শেখ ও তরিকের ছোট ভাই তহিদুল ইসলাম আদর। উচ্চ আদালতের জামিনের মেয়াদ শেষে সম্প্রতি তারা নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন চান। তবে আদালত তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠান।

পরে গত সপ্তাহে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এই তিন আসামির রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত বুধবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তরিক, সনেট ও আদরকে কারাগার থেকে নিয়ে আসেন তদন্ত কর্মকর্তা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার আবারও তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারাগারে থাকা সনেটের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের ১১টি ও আদরের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা চলমান আছে। বর্তমানে তরিকসহ ৫ জন কারাগারে রয়েছেন। অন্য আসামিরা জামিন পেয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তরিক বাহিনীর শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগারে থাকলেও মামলা চালাতে চান না বাদীপক্ষ। বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা ভয়ভীতি দেখিয়ে ও মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দিয়ে আপোস করে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। মাসখানেক আগে মামলার বাদী গুলিবিদ্ধ হওয়া গুড্ডুর ভাই তারেক আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিতভাবে আদালতকে জানান, তিনি মামলা চালাতে চান না। আপোস করতে চান। তবে আদালত বলেছেন, যেহেতু গুড্ডুকে গুলির ঘটনা ঘটেছিল, তাই সন্ত্রাসীদের কাছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। সেটি এখনও উদ্ধার হয়নি। তাই এই মামলা আপোস করে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘গুড্ডুর ভাইকে মামলার বাদী করানোই ভুল হয়ে গেছে। সন্ত্রাসীদের ভয়ভীতি আর টাকার লোভে শুনছি সে মামলা চালাতে চায় না। মামলা না চালিয়ে আপোস করার কথা সে মাসখানেক আগে আদালতকে জানিয়েছে। তবে আদালত বলেছেন, অবৈধ অস্ত্র সংক্রান্ত মামলা আপোসের সুযোগ নেই।’

বিষয়টি নিয়ে বাদী তারেকের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তার ভাই গুড্ডু বলেন, ‘মামলা চলছে। কিন্তু মীমাংসা করে নিতে হচ্ছে। উপায় নাই। আমরা আপোসের কথা কোর্টকে বলেছিলাম। কিন্তু কোর্ট কোর্টের কাজ করছে।’ কেন আপোস করতে চান এমন প্রশ্নে গুড্ডু বলেন, ‘সব কথা তো বলা যায় না। মানুষও ম্যালা কথা বুলছে। কিন্তু পরিস্থিতি আমরাই বুঝছি।’

মামলাটি তদন্ত করছেন নগরীর বোসপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘মামলা মামলার গতিতে চলছে। বাদীপক্ষ আপোস করতে চান কি না তা আমি জানি না। আমি আসামিদের একদিনের রিমান্ডে এনেছিলাম। জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে অস্ত্রটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। চেষ্টা চলছে।’

সন্ত্রাসী তরিকের বাড়ি নগরীর বোয়ালিয়া থানার বালিয়াপুকুর এলাকায়। একসময় ছাত্রদল কর্মী ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ছাত্রলীগে ভিড়ে যান। ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্সবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে তরিক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে আলোচনায় আসেন। পরে ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি পিস্তল, ৬টি গুলি, দুটি ম্যাগজিনসহ তিনি গ্রেপ্তার হন। মুক্তি পেয়ে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আবদুল ওয়াহেদ খান টিটোর অনুসারী হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন। টিটোর সুপারিশে মহানগর ছাত্রলীগের পদও পান। এরপর প্রায়ই সামাজিক মাধ্যমে তরিক বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রের মহড়ার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেন। একের পর এক অঘটনও ঘটান। অবশেষে মহানগর ছাত্রলীগের পদ থেকে তরিককে বহিষ্কার করা হয়।

কেয়া/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়