ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

ঈদ এলেও তাদের স্বপ্ন বাড়ি যায় না

মো. সাহাব উদ্দিন. ফেনী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ১১ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১০:০৬, ১১ এপ্রিল ২০২৪
ঈদ এলেও তাদের স্বপ্ন বাড়ি যায় না

ব্যস্ত সড়কের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে ঈদের পুরোটা সময় দায়িত্ব পালন করে চলেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা

ঈদ এলেই সব কর্মব্যস্ততা ছেড়ে শেকড়ের পানে ছুটে যাওয়া বাঙালির অন্যতম ঐতিহ্য। প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে কতশত স্বপ্ন নিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি যান মানুষ। পরিবার-পরিজন নিয়ে মাতেন আনন্দ উল্লাসে। সবাই যখন বাড়ি ফেরেন তখনও কিছু মানুষ থেকে যান পূর্বের স্থানে বাড়তি দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে। সবাই যখন নিজ নিজ বাড়িতে উল্লাসে মাতোয়ারা, তখন সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত সময় পার করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। ঈদ এলেও তাদের স্বপ্ন বাড়ি যায় না। দায়িত্ব পালনেই তারা খুঁজে পান ঈদের আনন্দ। 

ঈদে মানুষ যখন বাড়ির পথে ফেরায় ব্যস্ত তখন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল নাজির হোসেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানজট নিরসনের কাজ করছেন। রাতে ফেনীর ব্যস্ততম সড়ক ট্রাংক রোডে খেজুর চত্বরে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন,  ‘ট্রাফিক পুলিশে কাজ করি। আমরা যদি ছুটি কাটায় মানুষজন ঈদ আনন্দ করবেন কী করে? গত ২৫ বছরে ২/৩ বারও পরিবারের সাথে ঈদ কাটাতে পারিনি। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও এখন মানিয়ে নিয়েছি। ৩ মেয়ে ও  স্ত্রী থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাড়া বাসায়। এবার ঈদে ছুটি না মেলায় সন্তানদের ঈদ কেনাকাটা তাদের মাকে করতে হয়েছে।’  

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে কথা হয় সার্জেন্ট আবদুল জলিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লাস্ট ৫ বছরে একবারও বাড়িতে ঈদ করতে পারিনি। ঈদের দিন সবাই যখন পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত থাকেন তখনও আমাদের রাস্তায় থাকতে হয়। দায়িত্ব আর জনগণের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতে ঈদ আনন্দের কথা ভেবে কষ্টকে তখন ভুলে যাই।’ 

এটিআই আবদুল গাফফার বলেন, ‘সবাই ঈদে ছুটি চায়। অনেকে পান, আবার অনেকে পান না। আমি গত রোজার ঈদেও ডিউটি করেছি। কোরবানির ঈদেও ডিউটি করেছি। একের পরে এক ডিউটি থাকার কারণে এবারও ঈদে ছুটি পাইনি।’

জাহাঙ্গীর নামে অপর এক কনস্টেবল বলেন, ‘এবারও পুলিশ লাইনে ঈদ করবো। গত দুই বছর এমনই হচ্ছে। ঈদে সবার আনন্দ থাকলেও, আমাদের কোনো আনন্দ নেই। মনে হয় ঈদের দিন আর অন্যদিন একই। সারাদিন অলস সময় কাটাতে হয়।’

মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত ছিলেন এটিআই শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন সহকর্মীরা সবাই মিলে একসঙ্গে নামাজ পড়ি। একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে যে যার গন্তব্যে চলে যান। আবারও প্রতিদিনের মতো দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কেউ কেউ পরিবারের সঙ্গে ফোনে শুভেচ্ছা আদান-প্রদান করেন। মূলত এটাই আমাদের ঈদ আনন্দ।’ 

ছুটির প্রসঙ্গে ফেনী শহর ট্রাফিক পুলিশ ইনচার্জ আনোয়ারুল আজিম মজুমদার বলেন, সবাই তো আর ছুটি পাবে না। নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তায় কাউকে না কাউকো ত্যাগ স্বীকার করতেই হয়। পুলিশে চাকরি নেওয়ার সময়ই আমাদের বলা হয়েছে, আমাদের চাকরি জীবনে ছুটি বলতে কোনো শব্দ নেই। রাষ্ট্র ও জনগণের প্রয়োজনে যে কোনো মুহূর্তে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হয়। মানুষ যেন নির্বিঘ্নে ঈদ করে নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরে যেতে পারেন আমরা সে দায়িত্বটুকু পালন করছি। আর এতেই আমাদের আনন্দ। 

তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে। ট্রাফিক পুলিশে ৩০ বছর পার করে দিছি। চাকরির সূত্রে এখন ফেনীতে আছি। পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে কার না মন  চায়। কিন্তু, আমাদের কাঁধে যে দায়িত্ব রয়েছে, সেটি পালন না করার তো কোনো উপায় নেই। ফেনী শহর ট্রাফিক বিভাগে ৬১ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে এবার ঈদে ছুটি পেয়েছেন ১৪ জন। বাকিরা সবাই ঈদের ডিউটি করছেন। 

আনোয়ারুল আজিম বলেন, ঈদের দিন পুলিশ সুপার মহোদয় আমাদের সঙ্গে নামাজ পড়েন। এদিন সেমাই-পায়েস রান্না হয়। একসঙ্গে সেমাই খাওয়া, একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানানো এইতো আমাদের ঈদ। দুপুরে সহকর্মীদের জন্য উন্নত মানের খাবার ব্যবস্থা করা হয়। 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়