ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

‌‘মিয়ানমারে ঈদে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারতাম’

তারেকুর রহমান, ক্যাম্প থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ১২ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১২:৫৬, ১২ এপ্রিল ২০২৪
‌‘মিয়ানমারে ঈদে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারতাম’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশুরা নতুন পোশাকে ঈদ আনন্দে মেতে ছিল

কক্সবাজারের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদুল ফিতর উদযাপন হয়েছে। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর ক্যাম্পের বাসিন্দারা একে অপরের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ঘুরে বেড়ানোসহ নানা আয়োজনে মেতে উঠেছিলেন। বিভিন্ন ক্যাম্পে শিশুদের জন্য নগরদোলা ও বার্মিজ খেলাধুলার আয়োজন ছিল। মনের সঙ্গে মাধুরী মিশিয়ে ঈদ আনন্দে হইহুল্লোড়ে মেতেছিল  তারা। চলেছে পিঠা ও সেমাই উৎসবও।

ক্যাম্পে বয়োজ্যেষ্ঠদের চেয়ে শিশুদের ঈদের আমেজটা ছিল বেশি। তারা একে অপরের সঙ্গে খেলনা বিনিময়, খেলাধুলা আর বিভিন্ন দিকে ছুটাছুটি করে ব্যস্ত সময় পার করছে। বয়োজ্যেষ্ঠরা ফেলে আসা দুঃস্মৃতি আর ভিন দেশে ঈদ করেছেন বেদনা নিয়ে। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তারা একে একে অর্ধডজনের বেশি ঈদ কাটিয়ে ফেলেছেন বাংলাদেশে। প্রতি ঈদের ন্যায় এবারও ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। নিজ দেশে মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসনে আল্লাহর কাছে আকুতি জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকালে কুতুপালং ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ-১৫ ব্লকে নতুন জামা কাপড় পরে ঘুরে বেড়াত দেখা গেছে একাধিক তরুণ-তরুণীকে। তাদের একজন মোহাম্মদ নবী (১৯)। তিনি বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে কয়েকটি ঈদ কাটালাম এখানে। মিয়ানমারে কাটানো ঈদে ছিল ভিন্ন আমেজ। সেখানে অনেকদূরের গ্রামেও স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারতাম। এখানে ক্যাম্পের কাঁটাতারের বাইরে যেতে পারছি না।’

শিশুদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে ছিল নগরদোলার ব্যবস্থা

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২ ইস্ট, এ-৪ ব্লকের আবুল আলম পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিলেন একই ক্যাম্পের এ-১ ব্লকে বোনের বাড়িতে। তিনি বলেন, ভিন দেশে ঈদ উদযাপন করছি ৮ বছর ধরে। নিজের দেশের মতো মনে হয় না। ঈদ এলেই স্মৃতিতে ভাসে ফেলে আসা কষ্টের মুহূর্তগুলো। তারপরও সন্তানদের সামনে ভালো থাকার চেষ্টা করি। তাদের হাসিখুশি রাখি। বোন বার্মিজ ঐতিহ্যবাহী স্যুপ বানিয়ে দাওয়াত দিয়েছে। পরিবার নিয়ে তার বাড়িতে যাচ্ছি।

রোহিঙ্গা ফটোগ্রাফার ইয়াসিন আবদু মোনাব বলেন, ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লকে ছোট-বড় অনেক বাসিন্দার ঈদ উদযাপনের ছবি তুলতে গিয়ে খেয়াল করলাম, বড়দের চেয়ে ছোটদের মধ্যে ঈদের আমেজ বেশি। বড়দের মিয়ানমারের স্মৃতি কাঁদায়। নিজেদের দেশে ঈদ করতে না পারার অনুভূতি জানান তারা।

মোহাম্মদ জামাল বলেন, রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ঈদ উদযাপন করে যে আনন্দ পেত, শরণার্থী শিবিরে একত্রে থেকেও সেই আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। সবাই তাদের মাতৃভূমিকে স্মরণ করেন।

বাবার হাত ধরে স্বজনের বাড়িতে যাচ্ছে এক শিশু

১৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি ব্লকের রোহিঙ্গা নেতা আবু জহুরের স্ত্রী রোকসানা বেগম বলেন, ‘পাঁচ সন্তানের মধ্যে দুই সন্তানের জন্ম বাংলাদেশের ক্যাম্পে। তারা মিয়ানমারের ঈদের আমেজ না জানলেও বড় সন্তানরা স্মৃতিচারণ করে। মন ভালো রাখার জন্য সুন্দর জামা-কাপড় এনে দিয়েছেন ওদের বাবা। বাড়িতে বার্মিজ স্যুপ, সেমাই এবং ঐতিহ্যবাহী গুরাপিঠা (চালের ময়দায় বানানো) ও হরেক রকমের পিঠা বানিয়েছি। মেহমান আসছে, আমরাও অন্যের বাড়িতে যাচ্ছি। সবমিলিয়ে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করছি। 

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় উখিয়া-টোকনাফের ৩২টি ক্যাম্পের বিভিন্ন মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন রোহিঙ্গারা। এরপর কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ও মোচরাসহ বিভিন্ন খোলামেলা জায়গায় রোহিঙ্গারা জামায়েত হয়ে কোলাকুলি ও কুশলবিনিময় করেন। ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তারা।  

খাবারের আয়োজনে ছিল গুরাপিঠা (স্থানীয় ভাষায় পরিচিত)

৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক মো. আমির জাফর বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গারা ঈদের নামাজ শেষে ঈদ উদযাপনে মেতে উঠেছেন। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ যাতে ক্যাম্পের বাইরে না যেতে পারে এবং ক্যাম্পে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়