ঢাকা     শুক্রবার   ১৭ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে অবৈধ ইটভাটা আবার চালু

মাদারীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৫, ২ মে ২০২৪  
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে অবৈধ ইটভাটা আবার চালু

আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কৃষিজমিতে আইন করে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তথাপি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ফাসিয়াতলা বাজার ও পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন মেসার্স অর্ণিমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ব্রিকস ফিল্ড (এমওবি) নামের একটি অবৈধ ইটভাটা আবারও চালু হয়েছে।

এর আগে অনুমোদনহীন এই ইটভাটাটি প্রায় আড়াই বছর বন্ধ ছিল। বর্তমানে ইটভাটাটির পরিবেশের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স কোনো কিছু নেই। এই ইটভাটার চিমনি থেকে বের হওয়া দূষিত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এ ছাড়া এই ধোঁয়ার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এটি স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১ কিলোমিটার, বনাঞ্চল থেকে ২ কিলোমিটার এবং ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক থেকে অন্তত আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।

কিন্তু এ আইন লঙ্ঘন করে কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ফাসিয়াতলা এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান মিলন ‘এমওবি’ নামের এই অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করে আসছে। একই সঙ্গে তিনি আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। হাফিজুর রহমান কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান।

অভিযোগের বিষয়ে হাফিজুর রহমান মিলন বলেন, ‘আমার ইটভাটাটি বৈধ, অনুমোদনও আছে। দু’বছরের বেশি সময় বন্ধ ছিল, এখন নতুন ইট পোড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছি। পরিবেশসহ সব বিভাগে আমার লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। আর সবাই এভাবেই ইটভাটা চালায়। আমার ইটভাটা মানুষের কোন ক্ষতি করছে না।’

দীর্ঘদিন বেআইনিভাবে ইটভাটা চলার কারণে ২০২১ সালে প্রশাসন স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে ওই ইটভাটা বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের মার্চ মাসে আবারও চালু করে অনুমোদনহীন এই ইটভাটা। বর্তমানে কাঠ ও কয়লা মিশ্রিত করে ইট পোড়ানো হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফাসিয়াতলা বাজার ঘেষে একটি ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। ভাটার চারপাশেই ঘরবসতি। ৪০০ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে ফাসিয়াতলা মার্চেন্টস প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয়সহ তিনটি মাদ্রাসা রয়েছে। ইটভাটার ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষণসহ ধুলাবালির মধ্য দিয়ে যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে পথচারীদের। ইটভাটার কারণে বাজারের গ্রামীণ সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ফাসিয়াতলা বাজার কমিটির সভাপতি নজিব খান বলেন, ‘ইটভাটার দূষিত ধোঁয়ায় আমরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছি। অবৈধ এই ভাটাটি বন্ধের জন্য এর আগেও আমরা অনেক প্রতিবাদ করেছি। ডিসি, ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তারপর আড়াই বছরের মতো বন্ধ ছিল। এখন আবার ক্ষমতাবলে ভাটা চালু করেছে। এই ভাটার আশেপাশে তিনটি মাদ্রাসা, দু’টি স্কুল, ঘনবসতি, হাটবাজার রয়েছে। ভাটাটি সবার ক্ষতির কারণ হচ্ছে। আমরা দ্রুত এই ইটভাটাটি বন্ধের দাবি জানাই।’

কালকিনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘আমি জানতাম এমওবি নামের ইটভাটাটি বন্ধ। এটি চালু হয়েছে কবে তা আমার জানা নেই। যদি তিনি অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে ইটভাটা চালু করেন; তাহলে ওই ভাটা বন্ধসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর ফরিদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. সাঈদ আনোয়ার বলেন, ‘বাজার বা লোকালয়ে গড়ে ওঠা কোনো ইটভাটা পরিবেশের ছাড়পত্র পাবে না। যদি কোনো ইটভাটা পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া পরিচালিত হয় তাহলে সেটা অবৈধ ইটভাটা। এসব ইটভাটা বন্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। অচিরেই এমওবি ইটভাটাটি বন্ধে অভিযান চালানো হবে।’

বেলাল/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়