ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শিবালয়ে দুই খানের দ্বন্দ্ব নির্বাচনি উত্তাপ ছড়াচ্ছে

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১৭ মে ২০২৪   আপডেট: ১১:৪০, ১৭ মে ২০২৪
শিবালয়ে দুই খানের দ্বন্দ্ব নির্বাচনি উত্তাপ ছড়াচ্ছে

আবদুর রহিম খান ও রেজাউর রহমান খান

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ভোটাররা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, গুলি, মহাসড়ক অবরোধ, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি এবং মামলা- এসব ঘটনায় ভিন্ন উত্তাপ ছড়াচ্ছে এ উপজেলায়।

এ নির্বাচনে শিবালয় উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহিম খান এবং মোবারক হোসেন (নির্দলীয়/স্বতন্ত্র)।

দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রেজাউর রহমান খান এবং রহিম খানের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যকার এই দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে।

সম্প্রতি এ উপজেলায় কয়েকটি ঘটনা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার শিবালয়, বোয়ালী, টেপড়া, দশচিড়া, মহাদেবপুর এবং আরিচা ঘাটসংলগ্ন নেহালপুর এলাকায় অনেক ভোটারের সঙ্গে কথা বলে তাদের উদ্বেগের কথা জানা গেছে।

দুই প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকরা পরস্পরকে অভিযুক্ত করছেন। তাদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলার আরিচা ঘাটের অদূরে ডাক্তারখানা এলাকায় পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে রেজাউর রহমান খান ও রহিম খানের কর্মীদের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে রেজাউর রহমানের ছেলে ফাঁকা গুলি ছোড়েন বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে রহিমের কর্মী ও সমর্থকেরা ঘটনাস্থলের পাশে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন। পরে স্থানীয় মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন মাহমুদ (জাহিদ) এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান ঘটনাস্থলে যান। পরে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে আড়াই ঘণ্টা পর মহাসড়ক থেকে বিক্ষোভকারীরা চলে যান। এ ঘটনায় দুইপক্ষই থানায় মামলা করেছেন।

এর আগে গত ৭ এপ্রিল রহিমের অনুসারী উপজেলার আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তিন সদস্যকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। রেজাউরের ভাতিজা ইউপি চেয়ারম্যান মোনায়েম মোস্তাকিন (অনিক) ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে এই মারধরের অভিযোগ করা হয়। অবশ্য ইউপি চেয়ারম্যান দাবি করেন, এ হামলার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

গত ২৭ এপ্রিল রাতে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে রহিম খানের বহনকারী গাড়িকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এ ঘটনায় থানায়  রহিম খান অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার বিরিরাস্তি এলাকায় তার গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং জড়িতদের শাস্তির দাবিতে উপজেলার টেপড়া এলাকায় পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

এসব ঘটনায় নির্বাচনী মাঠের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এতে ভোটকেন্দ্রে যেতে ভোটার মধ্যে উৎকণ্ঠার পাশাপাশি একধরণের অনীহা তৈরি হচ্ছে বলে সাধারণ ভোটার ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মনে করছে।

শিবালয় ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে ভোটারদের মধ্যে একধরণের আতঙ্ক কাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের আশ্বাস না দেওয়া হয়, তাহলে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম হতে পারে। 

ভোটার উপস্থিতি নিয়ে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রহিম খান নিজেই সন্দিহান। এ ব্যাপারে তিনি বলেন,  তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়া অন্য কারো কাছে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথা নয়। কিন্তু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ছেলের কাছে কিভাবে থাকে, প্রশাসন তা দেখে না! বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে ভোটার উপস্থিতি কমবে, বাড়বে না।’

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকার বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নয়, ভোটগ্রহণের সাতদিন আগে ও সাতদিন পরে বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করা যাবে না। দুইপক্ষের মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, মামলায় অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রেজাউর রহমান খান বলেন, ‘শান্ত এ উপজেলা তারাই (রহিম খান) অশান্ত করে তুলছেন। আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর, হুমকিধামকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পক্ষে।’

ভোটারদের আশ্বস্ত করে শিবালয় উপজেলা নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল টিম) থাকবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলায় শিবালয়, ঘিওর ও দৌলতপুর-এ তিনটি উপজেলায় আগামী ২১ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। 

/টিপু/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়