ঢাকা     রোববার   ১৬ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ২ ১৪৩১

নির্বাচন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত, সরকারি আইনজীবীকে অপসারণের সিদ্ধান্ত

শরীয়তপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ২২ মে ২০২৪   আপডেট: ২০:৪৬, ২২ মে ২০২৪
নির্বাচন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত, সরকারি আইনজীবীকে অপসারণের সিদ্ধান্ত

শরীয়তপুর জজকোর্টের সরকারি কৌঁসুলি আলমগীর মুন্সি

শরীয়তপুর জজকোর্টের সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলমগীর মুন্সিকে অপসারণের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এ–সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব আতিয়ার রহমান গতকাল মঙ্গলবার (২১ মে) আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠিটি পাঠিয়েছেন।

বুধবার (২২ মে) শরীয়তপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, জিপি আলমগীর মুন্সীকে অপসারণের জন্য নির্বাচন কমিশন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। এর আগে, আলমগীর মুন্সী সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করেছিলেন।

আলমগীর মুন্সির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দে বাদী হয়ে ১৫ মে আলমগীর মুন্সির বিরুদ্ধে সদরের পালং মডেল থানায় মামলা করেন। গত রোববার ১৯ মে ওই মামলায় আলমগীর মুন্সি জামিন পান। এরপর নির্বাচন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নেয়।

পালং মডেল থানা ও নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হয়েছে। সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের একজন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান উজ্জ্বল। কামরুজ্জামানের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শরীয়তপুর জজ আদালতের সরকারি কৌসুলি (জিপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলমগীর মুন্সী।

নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের তালিকা ও ভোটকেন্দ্রের তথ্য সংক্রান্ত গোপনীয় কিছু নথি নিয়ে মঙ্গলবার (১৪ মে) রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দে। তিনি নথিপত্র নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাইফুদ্দিন গিয়াসের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তখন সেই কক্ষে প্রবেশ করেন জিপি আলমগীর মুন্সী। সে সময় নথিগুলো সরিয়ে রাখেন নির্বাচন কর্মকর্তা। এতে ক্ষুব্ধ হন জিপি আলমগীর মুন্সী।

একদিন পরে বুধবার (১৫ মে) বিকেলে নির্বাচন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাওয়ার পথে আলমগীর মুন্সী তার গতিরোধ করে অশ্লীল ভাষায় বকাবকি করেন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুদ্দিন গিয়াস, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাইনউদ্দিন ও এনডিসি হোসেল রানা সেখানে আসেন। বিকাশ চন্দ্র বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন আলমগীর মুন্সী তাকে মারতে আসেন। পরে বুধবার (১৫ মে) দিবাগত রাতে সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দে বাদী হয়ে মামলা করেন। পুলিশ আলমগীর মুন্সিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। গত ১৯ মে তিনি শরীয়তপুরের আদালত থেকে জামিন নেন। 

পুরো ঘটনা শরীয়তপুরে নির্বাচন কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনকে জানায়। এরপর নির্বাচন কমিশন জিপির পদ থেকে আলমগীর মুন্সিকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা জন্য আইনসচিবকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‌‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৩–এর বিধি ৮০ (ক) অনুযায়ী নির্বাচনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হুমকি, ভীতি প্রদর্শন ও বাধা প্রদান শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আলমগীর মুন্সি একজন সরকারি কর্মচারী। আচরণে তার আরও সংযত হওয়া উচিত ছিল। তিনি যে আচরণ করেছেন, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি জিপি পদে থাকার অযোগ্য বলে নির্বাচন কমিশনের মনে হয়েছে।’

জেলা প্রশাসন ও আইনজীবীদের একটি সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আলমগীর মুন্সি আইন মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত জিপি পদে নিয়োগ পান। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ভারপ্রাপ্ত জিপি হন। ২০১১ সালে তাকে জিপি পদে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে আলমগীর মুন্সি বলেন, নির্বাচন কমিশন তাকে জিপির পদ হতে অপসারণের কোনো সিদ্ধান্ত দিয়েছে ন কি না, তা তিনি জানেন না। আর নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার তিনি করেননি। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।

সাইফুল/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ